ঢাকা: তামাক নিয়ন্ত্রণে কোম্পানি মনিটরিং এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোলের (এফসিটিসি) আর্টিক্যাল ৫.৩ বাস্তবায়ন জরুরি। বিশ্বখ্যাত ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল (বিএমজে) গ্রুপের টোব্যাকো কন্ট্রোল জার্নালে এ সংক্রান্ত একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণায় তামাকজাত পণ্যের মোড়কের উপরিভাগের ৫০ শতাংশ জায়গা জুড়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা মুদ্রণ সংক্রান্ত ২০১৩ সালের সংশোধিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে।
গবেষকদলের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাজ্যের বাথ ইউনিভার্সিটির টোব্যাকো কন্ট্রোল রিসার্চ গ্রুপের পরিচালক অধ্যাপক অ্যানা বি. গিলমোর এবং রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট ড. ব্রিটা কে. ম্যাথুস, প্রজ্ঞা’র (প্রগতির জন্য জ্ঞান) নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের, হেড অব প্রোগ্রামস মো. হাসান শাহরিয়ার, হেড অব অ্যাডভোকেসি মো. শাহেদুল আলম এবং মিডিয়া ম্যানেজার অব টোব্যাকো কন্ট্রোল প্রোগ্রাম মো. মেহেদি হাসান।
গবেষণাপত্রের ফলাফল অনুযায়ী, সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা মুদ্রণ বিষয়ে তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য ছিল এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া যথাসম্ভব প্রলম্বিত করা এবং মোড়কের উপরিভাগের বদলে নিচের ৫০ শতাংশ জায়গায় মুদ্রণের মাধ্যমে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার কার্যকারিতা দুর্বল করে দেওয়া।
এই হস্তক্ষেপের ক্ষেত্রে তামাক কোম্পানির পক্ষে সবচেয়ে সক্রিয় ভূমিকায় দেখা গেছে সিগারেট উৎপাদকদের জোট বাংলাদেশ সিগারেট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনকে (বিসিএমএ)। তামাক কোম্পানিগুলোর মধ্যে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ (বিএটিবি) সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে সবচেয়ে জোরালো ভূমিকা পালন করে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগের সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় রাজস্ব বিভাগের মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে সমর্থ হয় কোম্পানিটি।
৩০ অক্টোবর ২০১৩ সালে প্রকাশিত খসড়া বিধিমালায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা বাস্তবায়নের জন্য তামাক কোম্পানিগুলোকে ছয় মাস সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হলেও নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে তা প্রায় দুইবছর পিছিয়ে দিতে সক্ষম হয় কোম্পানিগুলো। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ তামাকজাত পণ্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা মুদ্রণ শুরু হয়, তবে কোম্পানির হস্তক্ষেপে তা মোড়কের উপরিভাগের বদলে নিচের ৫০ শতাংশে মুদ্রিত হয়।
গবেষণাপত্রে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক কোম্পানির কার্যক্রম নিয়মিতভাবে মনিটরিংয়ের পাশাপাশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এফসিটিসি আর্টিক্যাল ৫.৩ সংক্রান্ত গাইডলাইন বাস্তবায়নকে সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়।
উল্লেখ্য, এই গবেষণাপত্রটি এমন সময়ে প্রকাশিত হলো, যখন বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী প্রক্রিয়া চলমান। খসড়া সংশোধনীতে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে তামাকজাত পণ্যের মোড়কে ৯০ শতাংশ জায়গা জুড়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কতাবার্তা মুদ্রণের প্রস্তাব করা হয়েছে। সংশোধনী প্রক্রিয়া নস্যাৎ করতে তামাক কোম্পানিগুলো ইতোমধ্যে নানাভাবে হস্তক্ষেপ শুরু করেছে।
গবেষকদলের অন্যতম সদস্য ও প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের এই গবেষণার ফলাফলের আলোকে সরকারের প্রতি তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশে প্রথমবার সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কতাবার্তা প্রচলনে ২০১৩ সালে আইন সংশোধনীর ক্ষেত্রে যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল, সরকারকে তা বিবেচনায় রাখতে হবে। চলমান সংশোধনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে তামাক কোম্পানিগুলো প্রায় একই ধরনের হস্তক্ষেপ অব্যাহত রাখবে। তামাক কোম্পানির কূটকৌশলে বিভ্রান্ত না হয়ে নীতিনির্ধারকদেরকে জনস্বাস্থ্য বিষয়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০২৩
আরকেআর/এসআইএ