ঢাকা: নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের ইস্টাব্লিশমেন্ট অব গ্লোবাল মেরিটাইম ডিস্ট্রেস অ্যান্ড সেফটি সিস্টেম অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটেডে মেরিটাইম নেভিগেশন সিস্টেম (ইজিআইএমএনএস) প্রকল্পের কাজে প্রকল্প পরিচালকের (পিডি) বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ তদন্তের জন্য নৌ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমোডোর মো. নিজামুল হক উচ্চপর্যায়ের একটি অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিটি গঠন করেছেন।
অধিদপ্তরের পরিচালক ও সরকারের উপসচিব বদরুল হাসান লিটনকে আহ্বায়ক করে গত ১০ এপ্রিল গঠিত কমিটির সদস্যসচিব করা হয়েছে স্পেশাল অফিসার (মেরিন সেফটি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. খায়রুল আলম সুমনকে। চার সদস্যের কমিটির অপর দুজন হলেন- নৌ অধিদপ্তরের সহকারী কেমিস্ট ফাওজিয়া রহমান ও সহকারী পরিচালক মো. মামুনুর রশিদ। কমিটিকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে, মহাপরিচালকের অফিস আদেশ পাওয়ার পরপরই নিরীক্ষা কমিটি কাজ শুরু করেছে। তবে শুরুতেই প্রকল্প পরিচালক ও অধিদপ্তরের নটিক্যাল সার্ভেয়ার আবু সাঈদ মো. দেলোয়ার রহমানের বিরুদ্ধে নিরীক্ষা কমিটিকে অসহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে। গত ১৯ এপ্রিল পিডিকে লেখা নিরীক্ষা কমিটির আহ্বায়কের চিঠিতে জানা যায়, তদন্তের স্বার্থে গত ১৭ এপ্রিল বেলা ১১টার মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেয়ে অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু কমিটিকে কোনো নথি ও তথ্যাদি দেননি তিনি। এরপর কমিটির আহ্বায়ক বদরুল হাসান লিটন ২৫ এপ্রিল বেলা ১১টার মধ্যে সকল অর্থবছরের (২০১৪-২০১৩ সাল) বাজেট বরাদ্দ, খরচ সংক্রান্ত তথ্যের বিবরণী, স্টক রেজিস্ট্রার, বিল-ভাউচার ও টেন্ডার কার্যক্রমের তথ্যাদি ই-নথিতে পাঠানোর অনুরোধ করা হয়। কিন্তু পিডি আবু সাঈদ মো. দেলোয়ার রহমান এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নিরীক্ষা কমিটির আহ্বানে সাড়া দেননি বলে কমিটির এক সদস্য নিশ্চিত করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিরীক্ষা কমিটির ওই সদস্য বলেন, প্রকল্পের কার্যক্রম নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ ওঠায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিটি গঠন করেছেন। কিন্তু পিডিসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা নিরীক্ষা কমিটিকে সহযোগিতা করছেন না। তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেয়ে একাধিকবার চিঠি দেxয়া হলেও এতে সাড়া দেননি পিডি। তিনি (পিডি) বলেছেন, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পের কাগজপত্র ইতোমধ্যে সেখানে পাঠানো হয়েছে। তাই অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিটির কাছে কোনো কাগজপত্র দিতে রাজি নন পিডি আবু সাঈদ মো. দেলোয়ার রহমান।
প্রসঙ্গত, প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রিতা ও কাজে নানা অনিয়ম নিয়ে নৌ মন্ত্রণালয়ে একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। প্রকল্প পরিচালক ও কোরিয়ান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি এসব অভিযোগের সঙ্গে অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নামও এসেছে। উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে নৌ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সঞ্জয় কুমার বণিকের নেতৃত্বে ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে মন্ত্রণালয়।
নৌ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অভ্যন্তরীণ ও উপকূলীয় নৌ চলাচল নিরাপদ করতে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ সরকার ও দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের যৌথ অর্থায়নে ৩৭০ কোটি ৮৯ লাখ টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এটির বাস্তবায়নকাল ছিল ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর। প্রকল্পের আওতায় বাগেরহাটের দুবলার চর, ভোলার ধলার চর, নোয়াখালীর নিঝুম দ্বীপ ও পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় একটি করে লাইটহাউজ ও রেডিও স্টেশন নির্মাণ এবং কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন ও কুতুবদিয়ায় তিনটি পুরানা লাইটহাউজ ও রেডিও স্টেশন আধুনিকায়নের কথা।
কিন্তু তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পটি ৯ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি। তিন দফায় এর সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। বরাদ্দের পরিমাণ ৩৭০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা থেকে বেড়ে ৭৭৯ কোটি ৪৯ লাখ টাকা করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে পিডি বদল হয়েছে তিনবার। প্রথম পিডি ছিলেন অধিদপ্তরের ইঞ্জিনিয়ার অ্যান্ড শিপ সার্ভেয়ার এস এম নাজমুল হক। তিনি দুদকের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে সাময়িক বরখাস্ত হলে অধিদপ্তরের চিফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেন জসিম উদ্দীন সরকারকে পিডি নিয়োগ করে নৌ মন্ত্রণালয়। জসিম উদ্দীন দেড় বছর আগে চাকরি থেকে অবসরে গেলে পিডির দায়িত্ব পান আবু সাঈদ মো. দেলোয়ার রহমান।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৬ ঘণ্টা, মে ২, ২০২৩
টিএ/এমজে