ঢাকা, রবিবার, ১ পৌষ ১৪৩১, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

স্বামীর দেওয়া আগুনে বার্ন ইউনিটে হ্যাপির মৃত্যু, কারাগারে স্বামী

উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৮ ঘণ্টা, মে ১২, ২০২৩
স্বামীর দেওয়া আগুনে বার্ন ইউনিটে হ্যাপির মৃত্যু, কারাগারে স্বামী ছবি সংগৃহীত

পাবনা (ঈশ্বরদী): জেলার ঈশ্বরদী উপজেলায় স্বামীর দেওয়া আগুনে দগ্ধ হওয়া স্ত্রী মোছা. নিলুফা ইয়াসমিন হ্যাপি (২৫) মৃত্যুবরণ করেছেন। এ ঘটনায় স্বামী রনি সরদারকে (৩২) আটক করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে ঈশ্বরদী থানা পুলিশ।

 

শুক্রবার (১২ মে) সকালে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।  

ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অরবিন্দ সরকার জানান, হ্যাপির ভাই ফরহাদুল আকন্দ মোবাইলফোনে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

জানা যায়, হ্যাপি নেত্রকোনার উলুকান্দার মো. আব্দুল লতিফ আকন্দের মেয়ে। আর স্বামী রনি সরদার (৩২) ঈশ্বরদী উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের আওতাপাড়া এলাকার রমজান সরদারের ছেলে।  

ওসি অরবিন্দ সরকার বাংলানিউজকে জানান, গত সোমবার (৮ মে) গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে হত্যার চেষ্টা দাবি করে হ্যাপির ভাই ফরহাদুল আকন্দ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় রনি ও তার বন্ধু পলাশকে আসামি করা হয়। এ ঘটনায় রনিকে আটক করে পাবনা জেলা হাজতে পাঠানো হয়েছে।  

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, প্রায় তিন বছর আগে ফেসবুকে রনির সঙ্গে নেত্রকোনার উলুকান্দার আব্দুল লতিফ আকন্দের মেয়ে কলেজ শিক্ষার্থী হ্যাপির পরিচয় হয়। সেই পরিচয় থেকে প্রেম ও বিয়ে হয়। কিন্তু ঘরে স্ত্রী সন্তান থাকায় রনি সুকৌশলে দ্বিতীয় স্ত্রী হ্যাপিকে নিজ বাড়িতে না তুলে উপজেলার পাকশী ইউনিয়নের রূপপুরে বাসা ভাড়া করে রাখেন। সেখান থেকেই হ্যাপি মাঝেমধ্যে তার বাবার বাড়ি নেত্রকোনায় যাতায়াত করতেন। কিন্তু হ্যাপি ভাড়া বাসায় না থেকে রনির বাবার বাড়িতে থাকার কথা বললে রনি প্রায়ই হ্যাপিকে গালাগালিসহ মারপিট করতেন। এতে হ্যাপির কাছে কিছুটা সন্দেহ হয়।

আরও জানা যায়, ঘটনার দিন দুপুর আনুমানিক ১টার দিকে হ্যাপি গোপনে রনির বাড়ির খোঁজে সাহাপুরের আওতাপাড়ায় আসে। এরপর তিনি মোবাইল ফোনে রনির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। নিজের গোপন তথ্য হ্যাপি জেনে যাওয়ার ভয়ে তাকে আওতাপাড়া গরুর হাট সংলগ্ন রানার চায়ের দোকানে বসতে বলেন। পরে রনি তার বন্ধু পলাশকে নিয়ে হ্যাপির কাছে ওই চায়ের দোকানে আসেন। রনিকে না জানিয়ে আওতাপাড়ায় বাড়ির খোঁজে আসাকে কেন্দ্র করে হ্যাপিকে গালাগালি করতে থাকেন তিনি। এক পর্যায়ে দুইজনের মধ্যে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। তখন রনি ক্ষিপ্ত হয়ে তার বন্ধু পলাশকে দিয়ে পাশের দোকান থেকে পেট্রোল এনে হ্যাপির গায়ে ঢেলে দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। হ্যাপির চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে গায়ে পানি ঢেলে হ্যাপিকে প্রথমে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু তার শরীরের প্রায় ৩২ শতাংশ আগুনে ঝলসে যাওয়ায় তাকে গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার (১২ মে) সকালে হ্যাপি মৃত্যুবরণ করেন।  

ওসি আরও জানান, দগ্ধ গৃহবধূ হ্যাপির মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

ওসি অরবিন্দ আরও জানান, ঘটনা ও সংশ্লিষ্ট তথ্য বিবেচনা করে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আমলে নিয়ে মামলাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে।  

বাংলাদেশ সময়: ২০২৫ ঘণ্টা, মে ১২, ২০২৩
এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।