ঢাকা, রবিবার, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ মে ২০২৪, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বেড়িবাঁধ নেই, ঝড় জলোচ্ছ্বাস হলেই ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা মেঘনা উপকূলে

মো. নিজাম উদ্দিন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৩ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০২৩
বেড়িবাঁধ নেই, ঝড় জলোচ্ছ্বাস হলেই ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা মেঘনা উপকূলে

লক্ষ্মীপুর: দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোখাসহ যেকোনো ধরনের ছোট-বড় ঘূর্ণিঝড় কিংবা জলোচ্ছ্বাস হলেই বড় রকমের ক্ষতির আশঙ্কায় থাকে লক্ষ্মীপুরের মেঘনার উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা।  

জেলার সদর উপজেলার চররমনী মোহনের দক্ষিণাংশ, কমলনগর উপজেলার চরমার্টিন, চর লরেন্স, সাহেবের হাট, চর কালকিনি, চর ফলকন, পাটওয়ারীহাট, রামগতির চর বাদামের পশ্চিমাঞ্চল, আলেকজান্ডার, বড়খেরী, চর রমিজ, চরগাজী ও চর আবদুল্লাহ ইউনিয়ন মেঘনা নদীর খুবই তীরবর্তী এলাকা।

এসব এলাকায় নদীর তীররক্ষা বাঁধ না থাকায় প্রতিনিয়ত জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকিতে থাকে।  

যদিও জেলার কমলনগর ও রামগতি উপজেলা রক্ষাকারী বাঁধ নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। ঝড় জলোচ্ছ্বাস হলে নির্মাণাধীন সেই বাঁধও ঝুঁকিতে পড়বে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের।  

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, মেঘনা নদীর পূর্বপাড়ের জেলা লক্ষ্মীপুরের ৩৩ কিলোমিটার এলাকায় নদী তীর রক্ষায় ৩ হাজার ৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্পের অধীন চলতি অর্থ বছরে প্রায় দুইশ কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে। ২০২২ সাল থেকে শুরু হওয়া বাঁধ নির্মাণের প্রাথমিক কাজ হিসেবে প্রকল্পের আওতায় কিছু এলাকায় জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ শুরু করা হয়।  

প্রকল্পের কিছু অংশের কাজের মেয়াদ চলতি বছরের জুন মাসে শেষ করার কথা রয়েছে। তবে বাকি কাজ আগামী তিন বছরে শেষ হতে পারে ধারণা করা হচ্ছে।  

কমলনগরের মাতব্বরহাট এলাকার বাসিন্দা মো. কবির হোসেন জানান, ঝড়ের কারণে অতিমাত্রায় জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাস হলে জিও ব্যাগ স্থানচ্যুত হয়ে নদীতে তলিয়ে যেতে পারে। এতে ঠিকাদাররা সে কাজ আর দ্বিতীয়বার করবে না।  

পাটওয়ারীরহাট এলাকার বাসিন্দা রাকিব হোসেন লোটাস জানান, আসন্ন ঘূর্ণিঝড় মোখাসহ এ প্রকল্প চলাকালীন যেকোনো ছোট-বড় ঘূর্ণিঝড়ে বাঁধের জিও ব্যাগ নষ্ট হলে বা অন্য কোনো ক্ষতি হলে এলাকার জন্য বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। কারণ এরকম কোনো ক্ষতি হলে ঠিকাদার কিংবা কর্তৃপক্ষ কেউই এর দায় নেবে না।  

নদীভাঙা মানুষের অধিকার নিয়ে কাজ করা স্থানীয় সামাজিক সংগঠন কমলনগর-রামগতি বাঁচাও মঞ্চের আহ্বায়ক এবং সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী আবদুস সাত্তার পলোয়ান বলেন, কিছু অসৎ ঠিকাদার সব সময় দুর্নীতির ফাঁক-ফোকর খোঁজে। আসন্ন যেকোনো ঘূর্ণিঝড় কিংবা অমাবস্যা ও পূর্ণিমার জোয়ারের কারণে বাঁধের জিও ব্যাগের সামান্য ক্ষতি হলে ঠিকাদারগণ বড় অজুহাত দেখিয়ে দুর্নীতির সুযোগ পেয়ে যাবে। তারা হয়তো কাজ না করেও সেখানে কাজ হয়েছে বলে দেখিয়ে দেবে।  

তিনি বলেন, শুরু থেকেই আমরা আশঙ্কা প্রকাশ করে প্রতিবাদ করে আসছি যে এত বড় একটি প্রকল্প চলছে কোনো রকম তদারকি ছাড়াই। জিও ব্যাগের যে কাজগুলো হচ্ছে, তা দায়সারা ভাবে করা হচ্ছে। জিও ব্যাগ রক্ষায় এখনো বড় প্রতিরক্ষা তৈরি করা হয়নি। ফলে যেকোনো ধরনের ঝড়, জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাসকে পূঁজি করে এ অঞ্চলের মানুষের বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।  

স্থানীয় লোকজন জানায়, দীর্ঘ তিন যুগের বেশি সময় ধরে নদীতে তীব্র ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এতে প্রায় ৩শ বর্গকিলোমিটার এলাকা মেঘনায় বিলীন হয়ে যায়। নদী ভাঙন থেকে রক্ষার জন্য ২০২১ সালের ১ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির-একনেক সভায় ৩ হাজার ৮৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প পাস হয়।  

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ জানান, বাঁধ নির্মাণের জন্য টেন্ডার হওয়া ৯৯টি লটের মধ্যে ৪৩ লটে প্রায় ১৪ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ১৩ কিলোমিটার এলাকায় জিও ব্যাগের ড্যাম্পিং শুরু হয়েছে। কিন্তু একটি পয়েন্টেও ড্যাম্পিং শেষ হয়নি। এর মধ্যে মাত্র ৪ কিলোমিটার এলাকায় ৫০-৮০ ভাগ ড্যাম্পিং কাজ শেষ হয়েছে। যা ৩৩ কিলোমিটার পুরো প্রকল্পের ১০-১৫ ভাগ। ৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে এ পর্যন্ত প্রায় ২শ-আড়াইশ কোটি টাকার কাজের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিল মাসের পর থেকে ৪৩ লটের মধ্যে মাত্র ৮টি লটে (প্রতি লটে ৩৩০ মিটার) কাজ চলছে।  

তিনি জানান, ড্যাম্পিং করা জিও ব্যাগ নদী ভাঙন ঠেকাতে পারলেও বাঁধের কাজ শেষ না হলে ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে তা লড়াই করতে পারবে না। সেক্ষেত্রে ঝড় বা ভারী জলোচ্ছ্বাস ও পূর্ণিমার জোয়ারের পানি বাড়লে ঝড়ে লক্ষ্মীপুর জেলায় বড় ক্ষতি হতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১০২৮ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।