ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মোখার সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি-ঝুঁকি নিয়ে যা বললেন ঢাবির দুই বিশেষজ্ঞ

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৮ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০২৩
মোখার সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি-ঝুঁকি নিয়ে যা বললেন ঢাবির দুই বিশেষজ্ঞ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা আতঙ্কে দিন কাটছে উপকূলবাসীর। সাম্প্রতিক সময়ে এত শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার অঞ্চলে আঘাত হানেনি।

জনসাধারণকে নিরাপদ রাখতে আবহাওয়া দপ্তর থেকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।  

রোববার (১৪মে) বিকাল নাগাদ এটি বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করার কথা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোখার সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি ও সমুদ্রে কি ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে তা নিয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই বিশেষজ্ঞ।

আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সস অনুষদের ডিন ও ডিজিস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান ড. জিল্লুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, গত ১০-১৫ বছর ধরে যে ঘূর্ণিঝড় হচ্ছিল সেগুলোর বেশিরভাগই ছিল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল কেন্দ্রিক। স্বাভাবিকভাবেই এখানে অনেক সাইক্লোন শেল্টার গড়ে উঠেছে। মানুষও অনেক সচেতন হয়েছে। যার কারণে হতাহতের সংখ্যা কমায় বাংলাদেশ দুর্যোগ মোকাবিলায় রোল মডেলে পরিণত হয়েছে।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার অঞ্চলের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিন্তু দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে এত ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড় হয়নি। হলেও তীব্র ঘূর্ণিঝড় হয়নি। যার কারণে এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে সচেতনতা কম। আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে অনাগ্রহী। তারা মনে করে তাদের বাড়িঘর ক্ষতি হবে না। কোনো না কোনোভাবে টিকে থাকবে। বাস্তবতা হল আবহাওয়ার পূর্বাভাসগুলো আগের চেয়ে অনেক বেশি সঠিক হচ্ছে। উপকূলীয় এলাকায় অধিকাংশ বাড়ি ঘর ঝুঁপড়ি টাইপের। ২১০ কি.মি বেগে বাতাসে এসব উড়ে যাবে। শক্ত ভবন না হলে কোনটাই টিকবে না। স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে সবাইকে সচেতন করতে হবে একইসঙ্গে আশ্রয়েকেন্দ্রে নিয়ে আসতে হবে।

 
বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড়ি অঞ্চলের ঝুঁকি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব এলাকায় মাটি নরম শিলা দিয়ে গঠিত। বেলে পাথরে পানি ঢুকে। পানির প্রেসারে স্থায়িত কমে আসে। প্রচুর বৃষ্টিপাত হলে ভূমিধস হয়। তাই মোখার প্রভাবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারে পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে। যারা নিচু এলাকায় বসবাস করে তাদের বাড়িঘর জ্বলোচ্ছাসের কারণে তলিয়ে যেতে পারে। স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানি বাড়ার কারণে ক্ষয়ক্ষতি বাড়বে। সেন্টমার্টিন দ্বীপেও যারা আছেন তারা যেন দুইতলা সমান উঁচু বাড়িতে অবস্থান করে।

রোহিঙ্গাদের নিয়ে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পও প্রচুর ঝুঁকি রয়েছে। এখানে যেমন ঘনবসতি আবার এই পাহাড় পুরোটা বেলে পাথর দ্বারা গঠিত। এখানে নিরাপদ আশ্রয় তৈরি করা না গেলে ঝুঁকি বাড়বে। ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে সরিয়ে কোথায় নেওয়া হবে সেটাও বড় প্রশ্ন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. কেএম আজম চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, মে মাসটা গরমের মাস। ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় বেশি এসময়। অধিক তাপমাত্রার কারণে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে সাইক্লোনটা তীব্র হয়। মোখা প্রথমদিকে বাংলাদেশের দিকে কেন্দ্র ছিল আস্তে আস্তে মিয়ানমারের দিকে টার্ন করে। একারণে আমাদের ক্ষতির আশঙ্কা একটু কম।

সেন্টমার্টিনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি বলেন, নিকট অতীত সময়ে এ ধরনের ঘূর্ণিঝড়ের মুখোমুখি হয়নি সেন্টমার্টিন। কোনো না কোনোভাবে বেঁচে গিয়েছে। এটা দ্বীপ হওয়ায় পানি যখন সমুদ্র থেকে সমতলের দিকে আসবে তখন এখানে পানি আটকে থাকার সম্ভাবনা কম। যখন পানি সমুদ্র থেকে ভূমির দিকে যাবে তখন সেন্টমার্টিনে পানি কম থাকবে। সরকার ইতোমধ্যে অনেক জনগণকে সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। যারা সেখানে আটকা পড়েছেন তাদের দুইতলা সমান উঁচু বাড়িতে আশ্রয় নিতে হবে। তবে ঘূর্ণিঝড়টা যেভাবে দিক পরির্বতন করছে সেক্ষেত্রে আমরা কিছুটা রক্ষা পেতে পারি।

ঘূর্ণিঝড়ে সমুদ্রের ইকোসিস্টেমে পরিবর্তন হয় উল্লেখ করে ঢাবির এ সমুদ্রবিজ্ঞানী বলেন, জনসাধারণের জন্য ক্ষতিকর হলেও ঘূর্ণিঝড়ের কারছে সমুদ্রের অনেক ইকো সিস্টেমের পরিবর্তন হয়। সেখানে প্রাণীরা খুশি হয়। সমুদ্রের নিচের স্তরে থাকা অনেক খাদ্য পানির উপরিভাগে ওঠে আসে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০২৩
এসকেবি/এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।