ঢাকা: শুধু সংসদীয় দলগুলো নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনে রাজি থাকার কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার (১৫ মে) বিকেলে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী তার সাম্প্রতিক জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান তিনি।
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা এইটুকু উদারতা দেখাতে পারি, পার্লামেন্টে সংসদ সদস্য যারা আছেন, তাদের মধ্যে কেউ যদি ইচ্ছা প্রকাশ করে যে, নির্বাচনকালীন সময়ে তারা সরকারে আসতে চায়, আমরা নিতে রাজি আছি—এই উদারতা আমাদের আছে। ’
বিগত সময়ে সংসদ সদস্যদের নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন এবং বিএনপিকে নির্বাচনকালীন সরকারে আসার আমন্ত্রণ জানানোর কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এর আগেও আমরা নিয়েছি। এমনকি ২০১৪ সালে খালেদা জিয়াকেও আমি আহ্বান করেছি, তারা তো আসেনি। আর এখন তো তারা নাইও পার্লামেন্টে। কাজেই ওটা নিয়ে চিন্তারও কিছু নাই। ’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমরা ওয়েস্ট মিনিস্টার টাইপ অব ডেমোক্রেসি ফলো করি। ব্রিটেনে কীভাবে নির্বাচন হয়, তারা কীভাবে করে আমরা সেভাবেই করবো। ’
আগামী নির্বাচনে জনগণ ভোট দিয়ে সরকারে থাকবেন, না দিলে থাকবেন না জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণের জন্য কাজ করছি, জনগণ যদি ভোট দেয় আছি, না দিলে নাই। ’
জ্বালাও-পোড়াও করলে বিএনপি-জামায়াতকে ছাড়বো না
বিএনপি-জামায়াতকে হুঁশিয়ার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি বলেছি যে, আন্দোলন করুক, কোনো আপত্তি নাই। কিন্তু জ্বালাও-পোড়াও যদি কিছু করতে যায়, কোনো মানুষকে যদি আবার ওরকম পোড়ায়, তাকে ছাড়বো না। মানুষের ক্ষতি আর করতে দেবো না। ’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘তারা মাইক লাগিয়ে আন্দোলন করেই যাচ্ছে। সরকার হটাবে! আমরা তো কাউকে কিছু বলছি না। আমরা যখন অপজিশনে ছিলাম আমাদের কি কেউ নামতে দিয়েছে? গ্রেনেড হামলা করে হত্যা করার চেষ্টা করেছে। আমাদের ২১ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। ’
বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পোড়া মানুষগুলোর চেহারা, তাদের কষ্ট দেখলে আপনাদের কষ্ট হয় দেখতে। একেকটা পরিবার কী অবস্থায় আছে আপনারা খবর রাখেন। নিজের সন্তানকে কোলে নিতে পারে না, নিজের চেহারা দেখতে পারে না, কোথাও যেতে পারে না। কী বীভৎস অবস্থা সৃষ্টি করেছে এই বিএনপি-জামায়াত। ’
তিনি বলেন, ‘আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছে। নির্বাচন ঠেকাতে ৫০০ স্কুল পুড়িয়ে দিয়েছে। সাড়ে ৩ হাজার লোক আগুণে পোড়া। ৩ হাজার ৮০০ গাড়ি পুড়িয়েছে। ২৭টি রেল পুড়িয়েছে। ৯টা লঞ্চ পুড়িয়েছে। ৭০টি সরকারি অফিস পুড়িয়েছে। ’
বাজেট নিয়ে ‘কোন অনাথ কী বললো’ গুরুত্বপূর্ণ নয়
‘দেশের বাজেট এখন অনাথ, আইএমএফ তার পালক পিতা’ সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের এমন মন্তব্য নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ধরনের বক্তব্যকে গুরুত্বহীন জানিয়ে বলেন, ‘কোন অনাথ এসে কী অনাথের কথা বলছে, সেটার দায়িত্ব তো আমরা নেবো না। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই করোনার সময়, তার ওপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, স্যাংশনের মধ্যে বাজেট যে করতে পারছি, এর জন্য একটু ধন্যবাদ জানায়েন। ’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘কোন অনাথ এসে কী অনাথের কথা বলছে, সেটার দায়িত্ব তো আমরা নেবো না। আর আইএমএফ লোনটা তাদেরই দেয় যাদের লোন পরিশোধ করার সক্ষমতা থাকে। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি এত অনাথ হয়নি। আর কেউ অনাথ হয়ে গেলে তো আইএমএফ লোন দেয় না। দেবার সামর্থ্য আছে বলেই আমারা নিয়েছি। এটা হলো বাস্তব কথা। এই কথাটা মাথায় রাখতে হবে। ’
তিনি বলেন, ‘তারা (আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক) তো আমাদের অর্থনীতি, আমাদের উন্নতির যথেষ্ট প্রশংসা করেছে। আমরা পারতপক্ষে কারো কাছে হাত পেতে চলতে চাই না। যত পারি নিজের পায়ে দাঁড়াতে (চাই)। ’
আসন্ন বাজেটের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গতকাল (রোববার গণভবনে) সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বসে সব কিছু আমরা ঠিক ঠাক করে দিয়েছি। ’
কিছু লোক কান থাকতে বধির
সরকারের উন্নয়ন দেখতে না পাওয়াদের চোখ থাকতে অন্ধ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দেশে কিছু লোক আছে দেশের কাজ যত ভালোই হোক, কোন কিছুর ভালো তারা দেখতে পায় না। এরা হচ্ছে চোখ থাকতে অন্ধ, কান থাকতে বধির। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এরা (ভালো কাজ) প্রশ্নবিদ্ধ করতে যত পারে অপপ্রচার তারা চালিয়ে যাচ্ছে। হয় তাদের জ্ঞানের অভাব, আর নয় তাদের দুরভিসন্ধি। অথবা প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে করে। ’
গঠনমূলক সমালোচনাকে স্বাগত জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা থাকবেই, রাজনীতি যখন করি, রাজনীতিতে সমালোচনা, বিরোধিতা থাকবেই। এটা তো স্বাভাবিক। আমাদের কাজ আমরা করে যাচ্ছি। সেভাবে কাজ করে উন্নয়ন করছি বলেই তো আজ বাংলাদেশকে এ পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে এসেছি। ’
বিগত সময়ে দেশ কতটা এগিয়েছে সে বিষয়ে টানা তিনবারের সরকারপ্রধান বলেন, ‘২০০৮ এর নির্বাচনে জয়ী হয়ে ২০০৯ এর নির্বাচনে সরকার গঠন করলাম। ওই ২০০৮-এর বাংলাদেশ কী ছিল, আজকে ২০২৩-এ বাংলাদেশ কোথায় এসছে, এই হিসাবটা করলেই তো বাংলাদেশ কতটা এগিয়েছে, তা মানুষ জানতে পারবে। ’
দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারের সফলতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অতি দরিদ্রের হার ছিল ২৫ ভাগের ওপরে, সেটা আমরা ৫ দশমিক ৬ ভাগে নামাতে পেরেছি। তার মানে কি আমাদের দেশে অতি দরিদ্র বলে তেমন কিছু নেই। তাদেরও আমরা ব্যবস্থা করে দেবো। ’
আরও পড়ুন:
বেসরকারি খাতের বেতন সরকারের বিষয় নয়: প্রধানমন্ত্রী
রিজার্ভ নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা নেই: প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩২ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০২৩/আপডেট: ২১১৫ ঘণ্টা
এসকে/এমইউএম/এমজেএফ