ঢাকা, সোমবার, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ মে ২০২৪, ০৪ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

প্রতিটি মা একেকজন রত্নগর্ভা: সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫২ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০২৩
প্রতিটি মা একেকজন রত্নগর্ভা: সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। পুরোনো ছবি

ঢাকা: প্রতিটি মা একেকজন রত্নগর্ভা বলে মন্তব্য করেছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।  

সোমবার (১৫ মে) বিকেলে রাজধানীর উত্তরা-১ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত উত্তরা লেডিস ক্লাবে আয়োজিত ‘সন্তানের সাফল্যে মায়ের অবদান শীর্ষক আলোচনা সভা ও মা রত্নগর্ভা সম্মাননা স্মারক প্রদান’ অনুষ্ঠানে একথা বলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী।

 

তিনি বলেন, যে পরিবারের সন্তানরা ভালো পড়াশোনা করেছে, ভালো চাকরি করছে, আমরা তাদের সম্মাননা দিচ্ছি। কিন্তু সেই পিছিয়ে পড়া পরিবারের মাকে আমরা কোনো সম্মাননা দিচ্ছি না, কেন? আমি চাইবো আগামী বছর অন্ততপক্ষে সমাজের দুজন পিছিয়ে পড়া মাকে আপনারা সম্মাননা দিন। আমাদের এই জায়গাটিতে পরিবর্তন আসা প্রয়োজন।  

কে এম খালিদ বলেন, যাদের রত্নগর্ভা পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে তারা সবাই সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তানের মা। তাদের পরিবার উচ্চমর্যাদা সম্পন্ন অথবা সেই পরিবারের সন্তান যাদের সম্মান সম্পদের কোনো অভাব নেই। যে পরিবারের সন্তানরা ভালো পড়াশোনা করেছে, ভালো চাকরি করেছে। আমরা শুধু তাদেরই সম্মাননা দিচ্ছি।  

কিস্তু সমাজের এখনও অনেক পিছিয়ে পড়া মায়েরা আছেন, যারা কষ্টে, অনাহারে ক্ষুধার কষ্টে দিন-যাপন করছেন। যে পরিবারে বাবা তার স্ত্রী ও সন্তানদের ফেলে চলে গেছেন। কিন্তু মা তার সন্তানদের আকড়ে ধরে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।  

তিনি বলেন, অনেক অভাব অনটনে থেকেও যে মায়ের সন্তানেরা রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া লাখ টাকাও প্রকৃত মালিকের কাছে ফিরিয়ে দিচ্ছে। অভাব অনটনসহ শত কষ্টের মধ্যেও মায়ের প্রতি যে সন্তানদের অফুরন্ত ভালোবাসা, শ্রদ্ধা সম্মান রয়েছে। আমরা কি সেই মায়েদের সম্মাননা দিতে পারি না? যদি সেই মায়েদের সম্মাননা দেওয়া যেত তবে আরও বেশি ভালো লাগতো। আমি এই জায়গাটিতে একটু পরিবর্তন চাই৷ 

তিনি বলেন, আমি এমন অনেক অসচ্ছল পরিবারকে দেখেছি। তাদের সন্তানরা তাদের মায়ের জন্য অনেক কিছু করে। অর্থ সম্পদের অভাব থাকতে পারে কিন্তু তাদের মধ্যে মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ভালবাসার কোনো কমতি নেই। আবার আমি দেখেছি, অনেক স্বচ্ছল পরিবারের সন্তানরা তার মাকে বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে রাখছে। সচ্ছলতা আছে, বাড়িতে পর্যাপ্ত জায়গা আছে, তবুও বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রাখছেন।  

মা এই শব্দটিতে পৃথিবীর বহু দেশে ম ধ্বনিটি সংযুক্ত রয়েছে। ইতালি, চায়না, থাইল্যান্ড, যেখানে যাবেন সেখানেই মাকে ম ধ্বনিতে উচ্চারণ রয়েছে। আর আমাদের তো মা ধ্বনি আছেই- বললেন প্রতিমন্ত্রী।  

তিনি বলেন, প্রতিটি মা একেকজন রত্নগর্ভা। সন্তান জন্ম দিচ্ছেন তিনিও রত্নগর্ভা। কাজেই আমি সব মাকে শ্রদ্ধা জানাই। আজকের এই দিনটি মা দিবস। কিন্তু একদিন নয়, প্রতিদিনই আমাদের জন্য মা দিবস। মায়ের জন্য সব সময় যারা দোয়া করেন তারাই শ্রেষ্ঠ সন্তান। আজ এখানে অনেক শ্রেষ্ঠ সন্তানের মা এসেছেন।  

প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি দোয়া করব, আজ যে মায়েরা এখানে এসেছেন, তাদের সন্তানেরা যেন তাদের সন্তানের মাথায় সবসময় ছায়া হয়ে থাকতে পারেন। আমাদের সন্তানরা যাতে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে পারে।

মঞ্চে বক্তব্য দেওয়ার সময় প্রতিমন্ত্রী ভারাক্রান্ত হয়ে বললেন, পৃথিবীর সব জায়গায়, সব চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়ার সামর্থ্য আমাদের ছিল। কিন্তু আমার মা সেই সুযোগটি আমাদের কাউকে দেয়নি। মাত্র ১০ মিনিট। সর্বশেষ আমাকে মা বলল, ‘বাবু, আমার বুকে ব্যথা করছে’। এটাই ছিল মায়ের শেষ কথা, আর কিছুই বলেননি। আটআনা পয়সার ওষুধে তাকে খাওয়াতে পারিনি। সেই সুযোগটি আমার মা তার সন্তানদের দেননি।

সারাটা দিন মায়ের গায়ের সঙ্গে লেগে থাকতাম। অনেকেই বলে বাবা-মা আমার সঙ্গে থাকেন। কিন্তু আমি বলি, বাবা মায়ের সঙ্গে আমি থেকেছি। আমি বাবা-মায়ের কাছে ছিলাম। কিন্তু যাওয়ার সময় মা কিছু বলে গেল না৷ একটু সময় দিলো না। তার শুধু পাশে আমি ছিলাম। আমার কোলে মাথা ছিল। আমার মা চলে গেল। আমি নিজেই বুঝতে পারলাম না যে মা চলে গেছে। এমনিতেই চলে গেল।  

তিনি বলেন, এখানে যে মায়েরা এসেছেন, তাদের জন্য গভীর শ্রদ্ধা। আগামীতে যারা মা হবেন, সন্তান জন্ম দেবেন তাদের জন্য শ্রদ্ধা। দুনিয়ার সব মায়ের প্রতি রইল আমার গভীর শ্রদ্ধা।  

তবে আমি মায়েদের কাছে এতটুকু চাইবো যে, জাতির পিতা, জাতির পতাকা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে কোন সমালোচনা নয়। বাকি সব বিষয় নিয়ে সমালোচনা করেন কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু এ বিষয়গুলো নিয়ে কোনো সমালোচনা আমরা সইতে রাজি নই- যোগ করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী।  

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, সন্তানের প্রথম শিক্ষক হচ্ছে তার মা। মায়ের কাছে থেকেই সন্তান ৭০ ভাগ শিক্ষা নেয়, শেখে। আর প্রতিটি সন্তানই মায়ের কাছে এক একটি রত্ন। সঠিক শিক্ষার মাধ্যমে যদি সন্তানকে শিক্ষিত করা যায়, তাবে সব সন্তানই হবে রত্ন আর প্রতিটি মা হবেন রত্নাগর্ভা।  

বক্তারা আরও বলেন, প্রতিটি সন্তানের সাফল্যের পেছনে মায়ের অবদান অনেক বেশি। একজন মা পারেন তার সন্তানকে সঠিক ভাবে গড়ে তুলতে।  

উত্তরা লেডিস ক্লাবের সভাপতি ইসমে আরা হানিফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে এসময় উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা ১৮ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ হাবিব হাসান, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ-এর উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী, উত্তরা লেডিস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ডা. রাজিয়া খানম, ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর তাসলিমা বেগম, গ্লোবিজ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ওবায়দুর রহমান, ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) প্রকৌশলী মো. এনামুল হক প্রমুখ।  

বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০২৩
এসজেএ/এসএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।