সিলেট: সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) ২০০১ সালের ৩১ জুলাই প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৩ সালে হয় প্রথম নির্বাচন।
শিক্ষার দিক থেকে অর্থনীতিতে অনার্স-মাস্টার্স ডিগ্রিধারী কয়েক লোদী। তার ওয়ার্ডকে আধুনিক একটি ওয়ার্ড হিসেবে গড়ে তুলেছেন। সিলেট নগরের মধ্যে একটি মডেল ওয়ার্ড হিসেবে গড়ে তোলায় বিত্তশালীদের বসবাসের পছন্দের তালিকায় তার ওয়ার্ড। ফলে অভিজাত শ্রেণির মানুষের বসবাস সেখানে। এ কারণে পেছনে তাকাতে হয়নি তাকে। প্রতিবার নির্বাচনে নির্ভার ছিলেন কয়েস লোদী। কোনো কৈফিয়ত ছাড়াই নাগরিকরা বারবারই ওই ওয়ার্ডে তাকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
সেই কয়েস লোদী এবার নির্বাচন করছেন না দলীয় চাপে। তার দল বিএনপির সিদ্ধান্ত মেনে নিতে গিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবার প্রার্থী না হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ৪ নং ওয়ার্ডের চার বারের ‘অপরাজিত’ কাউন্সিলর রেজাউল হাসান লোদী (কয়েস লোদী)।
বৃহস্পতিবার (১৮ মে) বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে এমন ঘোষণা দেন সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক এই সাংগঠনিক সম্পাদক। সংবাদ সম্মেলনে দলীয় নেতাকর্মীসহ সকলকে এই নির্বাচন বর্জনেরও আহ্বান জানান তিনি।
নগরের লামাবাজার একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে কয়েস লোদী বলেন, দলের সিদ্ধান্ত মেনে এই সরকার ও সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের অধীনে তিনি কোন নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না। তার কাছে দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
কয়েস লোদী বলেন, সিলেট সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠার পর ২০০৩ সালের প্রথম নির্বাচন থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত তিনি নগর ভবনে ৪ নং ওয়ার্ডের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে আসছেন।
দীর্ঘ ২০ বছরে ওয়ার্ডবাসী টানা চারবার তাকে বিপুল ভোটে কাউন্সিলর নির্বাচিত করেছেন। সিসিকের প্রথম নির্বাচনে অল্প বয়সে মানুষ তার প্রতি যে আস্থা আর বিশ্বাস রেখেছিলেন, তা আজ পর্যন্ত অব্যাহত রেখেছেন।
তিনি বলেন, ৪ নং ওয়ার্ডবাসী আমাকে যে ভালোবাসা ও সম্মান দিয়েছেন, এই ঋণ আমি কোনোদিনই শোধ করতে পারব না। যতদিন বেঁচে থাকব, তা আমার জন্য বাকি জীবনের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
কয়েস লোদী বলেন, দেশে আজ গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, বাক স্বাধীনতা ও সুশাসন বলতে কিছু নেই। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ আজ দিশেহারা, সাধারণ মানুষ অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়া এখনো মুক্ত নন। তিনি বিদেশে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা নিতে পারছেন না। তার নেতা তারেক রহমান সরকারের ষড়যন্ত্রের শিকার, তিনি দেশে ফিরতে পারছেন না। মানুষ নিজের ইচ্ছে মতো ভোট দিতে পারছে না, নির্বাচনে লেভেল প্লেইং ফিল্ড নেই এবং নির্বাচন কমিশনও সরকারের আজ্ঞাবহ।
এসব অভিযোগ তুলে নিজেকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখছেন জানিয়ে তিনি বলেন, সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিনে সিলেট সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাশেম, মহানগর বিএনপির সাবেক প্রচার সম্পাদক শামীম মজুমদার এমনকি সিসিকের ৪নং ওয়ার্ডের পানি শাখার কর্মচারী সাইফুর রহমান ইমনসহ নগরের প্রায় ৪২টি ওয়ার্ডের বহুসংখ্যক নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ ও তাদের আজ্ঞাবহ এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনোভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
বিএনপির এই নেতার অভিযোগ, চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অসংখ্য নেতাকর্মীদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এমন অবস্থায় নির্বাচনে অংশ নেওয়া মানে দলের শহীদ হওয়া নেতাকর্মীদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা। দল ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে এমনকি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পরিবার ও বিএনপির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা। সর্বোপরি দেশের মুক্তিকামী কোটি কোটি জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা।
তাই এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশক্রমে আমি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী আসন্ন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণা দিলাম। বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক এ সরকার ও সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের অধীনে আমি কোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব না।
কয়েস লোদী বলেন, দীর্ঘ প্রায় ৩৫ বছর থেকে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছি। বিএনপির সঙ্গে আমার সম্পর্ক মা ও সন্তানের মতো। যেহেতু বিএনপির কর্মী, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শ বুকে লালন করি, সেহেতু আমার ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়ার চেয়ে দল ও দেশ আমার কাছে বড়। আমার কাছে দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
এ সময় তিনি দলের সব নেতাকর্মীসহ সিলেটবাসীর কাছে প্রহসনের নির্বাচন বর্জন করার আহ্বান জানান তিনি। সর্বোপরি এদেশের মানুষকে চরম নির্যাতনের মধ্যে রেখে দেশে কোনো নির্বাচন হতে পারে না বলেও মন্তব্য করেন কয়েস লোদী।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০২৩
এনইউ/জেএইচ