ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ভাত চুরির অভিযোগে যুবককে মারধর: ভিডিও ভাইরাল

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৭ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২৩
ভাত চুরির অভিযোগে যুবককে মারধর: ভিডিও ভাইরাল

বগুড়া: বগুড়া সদর উপজেলায় রান্না ঘরের জানালা দিয়ে ভাত চুরি করার অপরাধে সাব্বির হোসেন নামে মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবককে হাত-পা বেঁধে মারধর করেছে স্থানীয়রা। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা ভাইরাল হয়।

 

মঙ্গলবার (২৩ মে) জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরাফত ইসলাম জানান, এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে সোমবার (২২ মে) রাত ১১টার দিকে উপজেলার নিশিন্দারা ইউনিয়নের লাইলীপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

মারধরের শিকার সাব্বির হোসেন বগুড়া সদর উপজেলার বারোপুর লাইলীপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন ও নেশাগ্রস্ত হওয়ায় পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন।

সাব্বিরকে মারধরের ভিডিওতে দেখা যায়, মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবককে প্রথমে টেনে হিঁচড়ে মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়। তারপর লাঠি ও কাঠের বাটাম দিয়ে শুরু করে বেদম মারধর। কেউ একজন সাব্বিরের হাত ধরে আছেন এবং আরেকজন তাকে পেটাচ্ছেন। মানুষের জটলার ভেতর থেকে একেকবার একেকজন এসে মারধর করছেন তাকে। কেউ পেটাচ্ছেন লাঠি দিয়ে, কেউ আবার কিল-চড়-লাথি।

তিন মিনিটের ভাইরাল হওয়া এই ভিডিওতে দেখা গেছে, লাঠি ও কাঠের বাটাম দিয়ে বেদম মারধর করছে বারপুর লাইলীপাড়া গ্রামের কিছু ব্যক্তি। মারধরের একপর্যায়ে আহত যুবকের হাত দড়ি দিয়ে পিছমোড়া করে বাধা হয়, আর পা দুটি বেঁধে রাখা হয় পাশের গাছের সঙ্গে। মানসিক ভারসাম্যহীন যুবকটি বারবার তাদের কাছে হাতজোড় করে মাফ চাইলেও থামে না মারধর।  

যুবকটি একসময় পানি পান করতে চাইলে তাকে পানি না দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। এ সময় ওই যুবক তাদের পা ধরে মাফ চাওয়ার চেষ্টা করলে পুনরায় বেধড়ক মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে পাগলপ্রায় যুবকটি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। কিন্তু তাকে রক্ষা করতে কাউকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি। তখনো উপস্থিত অনেকের কণ্ঠে অশ্লীল ভাষায় যুবককে গালিগালাজ করতে শোনা যায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার রাতে একটি বাড়ির দোতলার রান্না ঘরের জানালা দিয়ে ভাত চুরির চেষ্টা করছিলেন সাব্বির। এ সময় বাড়ির লোকজন দেখতে পেয়ে চিৎকার করলে তিনি পালানোর চেষ্টা করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই স্থানীয় লোকেরা তাড়া করে ধরে ফেলেন তাকে। পরে হাত-পা বেঁধে প্রায় ঘণ্টাখানেক নির্যাতনের পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ওই বাড়ির গৃহকর্ত্রী নাজনীন আকতার বলেন, এর আগেও আমার রান্নাঘর থেকে ভাত ও তরকারি চুরি হয়েছে। কিন্তু কে চুরি করছে তা জানতে পারিনি। সোমবার রাতে চুরির সময় দেখে ফেলায় চিৎকার করি। এসময় স্থানীয়রা তাকে ধরে ফেলেন। পরে কয়েকজন যুবক তাকে মারধর করেছে বলে জেনেছি।

মারধরের শিকার সাব্বির বলেন, অন্য কিছু চুরি নয় ক্ষুধার জ্বালায় ভাত চুরি করতে গিয়েছিলাম। আমার বাসায় আমাকে কেউ খাবার দেয় না। আমি কোনো বিচার চাই না। যেহেতু দোষ করছি তাই বিচার চেয়ে কি করবো। ওরা যা বিচার করার করেছে।

সাব্বিরের নানি বলেন, সাব্বির মানসিক ভারসাম্যহীন। নেশাও করে। মাঝে মাঝে ভাত খেতে বাড়িতে আসে। যদি থাকে তাহলে দেই। কিন্তু সামান্য ভাত চুরি করার জন্য যদি তাকে মারধর করে তাহলে তার বিচার চাই।

জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরাফত ইসলাম জানান, ঘটনা যা-ই ঘটে থাকুক এভাবে একজনকে মারধরের অধিকার কারো নেই। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৫ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।