ঢাকা, শুক্রবার, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

তিন যুগ পর রাস্তা নির্মাণ, ২ গ্রামের ৫০০ পরিবারের দুর্ভোগ লাঘব

জাহিদুল ইসলাম মেহেদী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৫ ঘণ্টা, জুন ১, ২০২৩
তিন যুগ পর রাস্তা নির্মাণ, ২ গ্রামের ৫০০ পরিবারের দুর্ভোগ লাঘব

বরগুনা: বরগুনার আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নে অতি দরিদ্রদের ৪০ দিনের কর্মসূচি কর্মসংস্থান (ইজিপিপি) প্রকল্পের সুফল পেতে শুরু করেছে স্থানীয় প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষ।  

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের তত্ত্বাবধানে ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের ওই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় (পিআইও)।

ওই প্রকল্পের আওতায় একটি রাস্তা তিন যুগ পরে পুনঃ নির্মাণ করায় দুই গ্রামের ৫০০ পরিবারের দুর্ভোগ লাঘব হয়েছে।  

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ের সূত্রমতে ও সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গুলিশাখালী ইউনিয়নের মোশারেফ মিয়ার বাড়ি থেকে জালাল পাহলানের বাড়ি হয়ে রবি জালোর বাড়ি পর্যন্ত মাটির রাস্তা নির্মাণে ৫০ জন শ্রমিক এবং হরিদ্রাবাড়িয়া গ্রামের গনি হাওলাদারের বাড়ি থেকে খালেক হাওলাদারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মাটি দ্বারা পুনঃ নির্মাণ প্রকল্পে ৮৯ জন শ্রমিক কাজ করেছেন। ওই দুটি প্রকল্পে মোট ১৩৯ জন শ্রমিক দৈনিক ৪০০ টাকা হারে মজুরিতে কাজ করেছেন। এছাড়া প্রত্যেক দলের নেতাকে আরও ৫০ টাকা অতিরিক্ত পরিশোধ করা হয়েছে।  

ওই ইউনিয়নের হরিদ্রাবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা শ্রমিক জামাল রাঢ়ী বলেন, আমরা দৈনিক ৮৯ জন শ্রমিক প্রতিদিন ৪০০ টাকা মজুরিতে কাজ করেছি ও আমাদের মোবাইল ফোনের সিমে জমা হওয়া টাকা উত্তোলন করেছি।

অপর শ্রমিক মো. আব্বাস মিয়া বলেন, বিগত ৩৬ বছরেও এখানে কোনো রাস্তা ছিল না। চলতি বছর চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় রাস্তা পেয়েছি। এখন আমাদের ছেলে-মেয়েরা ভোগান্তি ছাড়া নতুন রাস্তা দিয়ে বিদ্যালয়ে আসতে ও যেতে পারবে।

১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শ্রমিক মো. আব্দুল মান্নান বলেন, আমরা আসলেই ভাগ্যবান। একটা ভালো রাস্তাও পেয়েছি ও পাশাপাশি আমাদের এলাকার ৫০ জন শ্রমিকের ৪০ দিনের কাজের ব্যবস্থাও হয়েছে। মজুরির টাকা পেতেও সহজ হয়েছে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দৈনিক ৪০০ করে উত্তোলন করেছি।

অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. মোসলেম উদ্দিন জানান, মাটির রাস্তার প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ায় গ্রামীণ মানুষের অনেক উপকার হবে। এখন চিকিৎসাসেবা, বাজার করা, পণ্য বিক্রিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সব কাজই সহজতর হবে।

সাবেক প্রধান শিক্ষক গাজী আব্দুর রহমান বলেন, তিন যুগ পরে হরিদ্রাবাড়িয়া গ্রামের গনি হাওলাদারের বাড়ি থেকে খালেক হাওলাদারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তাটা পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে। এর আগে আমরা ঝোপ-ঝাড়ের মধ্যে দিয়ে খালের পাড় ধরে যাতায়াত করতাম। রাস্তাটি সংস্কার হওয়ায় শিক্ষার্থী, বৃদ্ধা ও সমাজের শ্রমজীবী মানুষের চলার পথ সহজতর হয়েছে। দুই গ্রাম (হরিদ্রাবাড়িয়া ও কলাগাছিয়া) গ্রামে বসবাসরত ৫০০ পরিবারের দীর্ঘদিনের একটা সমস্যার সমাধান হয়েছে।

ওই রাস্তা নির্মাণ প্রকল্প সভাপতি ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. মাসুদ বলেন, আমি নির্বাচিত একজন ইউপি সদস্য এবং প্রকল্প সভাপতি। দীর্ঘদিনের ভোগান্তির পর ওই মাটির রাস্তাটি অধিক গুরুত্ব দিয়ে পুনঃনির্মাণ করেছি। অতিদরিদ্র মানুষের মাধ্যমে কাজটি করাতে পেরে সত্যিকার অর্থে আমার ভালো লাগছে।

গুলিশাখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এইচএম মনিরুল ইসলাম মনি বলেন, নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেবে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পগুলো সঠিক এবং নীতিমালা অনুযায়ী করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। তিন যুগ পরে ওই রাস্তাটি পুনঃনির্মাণ করে দুই গ্রাম হরিদ্রাবাড়িয়া ও কলাগাছিয়া গ্রামের ৫০০ পরিবারের দীর্ঘদিনের একটা সমস্যার সমাধান করতে পেরেছি, এতেই আমি খুশি।  

আমতলী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জামাল হোসাইন বলেন, গুলিশাখালী ইউনিয়নে অতিদরিদ্রদের ৪০ দিনের কর্মসূচি কর্মসংস্থান (ইজিপিপি) প্রকল্পের কাজগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়নের জন্য নিয়মিত তদারকি করা হয়েছে। তিন যুগ পরে হরিদ্রাবাড়িয়া গ্রামের গনি হাওলাদারের বাড়ি থেকে খালেক হাওলাদারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তাটা পুনঃনির্মাণ করায় ওই দুই গ্রামে বসবাসরত মানুষের যেমন দীর্ঘদিনের সমস্যা দূর হয়েছে তেমনি রাস্তাটির কাজ শেষ করতে পেরে আমাদেরও ভালো লাগছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৪ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০২৩

আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।