মাদারীপুর: প্রায় এক বছর আগে নির্মাণ কাজ শেষ হলেও বিদ্যুত সংযোগসহ নানা জটিলতায় এখনও চালু হয়নি ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মাদারীপুর বাস টার্মিনাল।
এদিকে টার্মিনাল চালু না হওয়ায় মহাসড়কের দুই পাশে দাঁড় করিয়ে রাখতে হচ্ছে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার বাসগুলো।
দেখা গেছে, শেখ হাসিনা মহাসড়কের পাশেই মাদারীপুর শহরের অদূরে বিশালাকৃতির আধুনিক একটি বাস টার্মিনাল। অবকাঠামোগত নির্মাণ কাজ শেষ হলেও টার্মিনালের ভেতরে কোনো যানবাহন নেই। টার্মিনালের সামনে মহাসড়কের দুপাশে দূরপাল্লার বাসগুলো দাঁড় করিয়ে রাখা। যাত্রী তোলা হচ্ছে সেখান থেকেই। অস্থায়ী কাউন্টারগুলো টার্মিনালের সামনে চেয়ার টেবিল বসিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। টার্মিনালের প্রবেশ পথ তালাবন্ধ। এ কারণে রোদ বৃষ্টির মধ্যে যাত্রীদের খোলা আকাশের নিচে নয়তো মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে বাসে উঠার অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।
মাদারীপুর সড়ক পরিবহন বাস মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার কামরুল হাসান বলেন, টার্মিনাল চালু না হওয়ায় আমরা দুর্ভোগে আছি। বর্ষাকালে বাসগুলো রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখা যায় না। দুর্ঘটনার ভয়াবহ ঝুঁকি থাকে। তা ছাড়া টার্মিনাল চালু না থাকায় যাত্রীরাও চরম দুর্ভোগ রয়েছেন।
যাত্রীরা জানান, টার্মিনাল চালু না থাকায় কোথাও বসা যায় না। বাসে উঠার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। বৃষ্টি এলে বিপাকে পড়তে হয়। দ্রুত টার্মিনাল চালুর দাবি জানাই।
মাদারীপুর পৌরসভা কার্যালয়ের সূত্র জানায়, পৌর এলাকার গৈদি মৌজার পাকদী এলাকায় ৪ একর ৩৭ শতাংশ জমি ২ কোটি ৪৮ লাখ টাকায় অধিগ্রহণ করে পৌর কর্তৃপক্ষ। বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহযোগিতায় ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে তিনতলা আধুনিক বাস টার্মিনালের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কাজটি ফরিদপুরের আলাউদ্দিন ট্রেডিং কোং লিমিডেট নামে একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়। প্রথম পর্যায় এই বাস টার্মিনাল নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৩ কোটি ২২ লাখ টাকা। পরে নকশায় কিছুটা পরিবর্তন করা হলে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২৪ কোটি ৮৪ লাখ ৩০ হাজার ১৭৭ টাকায়। নির্মাণ কাজ ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নানা অযুহাতে তিন দফায় তিন বছর কাজের মেয়াদকাল বৃদ্ধি করে। সবশেষ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি গত বছরের ৩০ এপ্রিল মেয়াদের মধ্যে আধুনিক এই বাস টার্মিনালটি নির্মাণ কাজ শেষ করে।
আলাউদ্দিন ট্রেডিং কোং লিমিডেট প্রধান প্রকৌশলী মো. ফজলুর হক বলেন, বাস টার্মিনালের নির্মাণ কাজ সবকিছুই শেষ। বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় ইলেকট্রিসিটির কিছু কাজ এখনো বাকি আছে। তাই মৌখিকভাবে আমরা পৌর কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করে দিয়েছি। তবে বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে পৌরসভার কিছু বকেয়া বিল নিয়ে ঝামেলা চলছে। এ কারণে বিদ্যুত সংযোগ দিচ্ছে না।
মাদারীপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ আবুল কালাম বলেন, আমাদের আধুনিক বাস টার্মিনালটি প্রস্তুত। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগ বিদ্যুৎ সংযোগ দিচ্ছে না। এ কারণে আমরা উদ্বোধনের করতে পারছি না। কী কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ দিচ্ছে না এটা নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে আমাদের মেয়র মহোদয়ের সঙ্গে একাধিক মিটিং করেছেন। তবে আমরা আশাবাদি, খুব শিগগিরি এই টার্মিনালের কার্যক্রম চালু হবে।
জানা গেছে, ২০১৩ সালে মাদারীপুর পৌরসভার অধীনে থাকা ২১টি মিটারে ৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া দাবি করে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটিড। ভূতুরে বিদ্যুৎ বিল উল্লেখ করে মাদারীপুর পৌরসভার মেয়র খালিদ হোসেন ওই বছরই জুলাই মাসে আদালতে একটি মামলা করেন। এই মামলাটি আদালতে এখনো চলমান। বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে মাদারীপুর পৌরসভার এই জটিলতা সমাধান না হওয়ায় বিদ্যুৎ বিভাগ মাদারীপুর বাস টার্মিনালে সংযোগ দিচ্ছে না বলে জানা গেছে।
মাদারীপুর পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার আবু আহমদ ফিরোজ ইলিয়াস বলেন, আমাদের ২১টি মিটারের বিল বকেয়া ছিল। ইতোমধ্যে একটি বিল যাচাই-বাছাই করে পরিশোধ করা হয়েছে। বাকি বিলগুলো যাচাই বাছাই করে পরিশোধ করা হবে। তা ছাড়া মামলা তো চলছেই। আর আধুনিক বাস টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পরেই আমরা বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু তারা সংযোগ দেয়নি। বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে আমাদের মতবিরোধ ছিল। তবে সেটা সমাধান হয়ে গেছে। আশা করছি, তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে সংযোগ দিবেন।
ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটিড মাদারীপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান বলেন, মাদারীপুর পৌরসভা থেকে বাস টার্মিনালে বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে পূর্ণাঙ্গ আবেদন করেন নাই। তারা পূর্ণাঙ্গ আবেদন করলে আমরা বিধি মোতাবেক সংযোগ দিয়ে দিবো। আমাদের দিক থেকে কোনো জটিলতা নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৩ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২৩
এসএম