পাবনা: ব্যবসার লাভের টাকায় সমাজসেবার ঘটনা বিরল, তাও একজন নারী হয়ে। বিরল এ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন পাবনা বেড়া উপজেলার আমিনপুর থানাধীন ঢালারচরের শ্যামপুর টাটি পাড়ার মাহমুদা সবুজ নামে এক নারী উদ্যোক্তা।
গৃহিণী থেকে সমাজকর্মী একই সঙ্গে সফল নারী উদ্যোক্তা পাবনার বেড়া উপজেলার আমিনপুর এলাকার মাহমুদা সবুজ। ২০১২ সালে নিজ বাড়িতেই ১০টা দেশি জাতের গরু দিয়ে খামারের যাত্রা শুরু করেন। শুরুর প্রথমে গরু ক্রয় ও ঘর তৈরিতে ব্যয় হয় ৯ লাখ টাকা। এরপরে তাকে আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি। ছোট গরু খামারে এনে লালন পালন করে কোরবানির ঈদের জন্য প্রস্তুত করেছেন তিনি। শুরুর প্রথম বছরেই খরচ বাদে তার লাভ হয়েছিলো প্রায় ৩ লাখ টাকা। স্থানীয় বিভিন্ন গ্রামগঞ্জের হাট থেকে ভালো জাতের দেশি ছোট গরু সংগ্রহ করেন তিনি। তবে এ খামারের কোনো পশুকে দেওয়া হয় না বাজারে বিক্রিত কোনো ফিড। নিজের জমিতে উৎপাদিত কাঁচা ঘাস, ধানের খড়, ভুট্টা ও ধানের গুঁড়া গরুর মূল খাদ্য।
খামার করার আগে কোনো এক বছরে হাট থেকে কেনা কোরবানির পশুর মাংস ভালো হয়নি। তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন নিজেই গরুর খামার দেবেন। তবে সেটি দুগ্ধ পশুর খামার নয় দেশি ষাঁড় গরুর খামার। নিজে কোরবানি দেবেন আর বাণিজ্যিকভাবে সাধারণ ক্রেতাদের কাছে ভালো পশু বিক্রি করবেন। তবে তার এ খামারের পশু বিক্রির লভ্যাংশের অর্থ তার পারিবারিক কাজে ব্যয় না করে সামাজিক উন্নয়নের কাজে ব্যয় করে থাকেন। খান এগ্রো নামে এ গরুর খামারে এবারের আসন্ন কোরবানি ঈদকে কেন্দ্র প্রায় অর্ধশত পশু প্রস্তুত করা হয়েছে।
মাহমুদা সবুজের গরুর খামার নিয়ে স্থানীয়রা বলেন, বর্তমান সময়ে গরু লালন পালন করা খুবই কষ্টের। আমাদের চর অঞ্চলের প্রতিটি বাড়িতেই গরু রয়েছে, তবে খামার রয়েছে খবুই কম। আর আমাদের এ অঞ্চলে একজন নারী উদ্যোক্তা গরুর খামার করেছেন মাহমুদা সবুজ আপা। তিনি শুধু সফল খামারি নয় একজন সমাজকর্মীও বটে। অসহায় দরিদ্র মানুষের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে থাকেন তিনি। তার এ গরুর খামার দেখে এখন এলাকাতে অনেকেই গরুর খামার করার জন্য উৎসাহিত হচ্ছেন।
খামার নিয়ে নারী উদ্যোক্তা মাহমুদা সবুজ বলেন, বেশ কয়েক বছর আগে কোরবানির ঈদে নিজেদের জন্য একটি পশু কিনেছিলাম। সেই পশু কোরবানি করার পরে তার মাংস খুবই বাজে হয়েছিল। মনটা খুব খারাপ হয় তখন। সে বছরই মনে মনে ঠিক করি আমি গ্রামের বাড়িতে একটি ষাঁড় গরুর খামার করব। ২০১২ সালে স্বল্প কিছু অর্থদিয়ে যাত্রা শুরু করি। এখন বেশ বড় হয়েছে আমার খামার। এ বছর ৬৫টি গরু খামারে রয়েছে। এর বেশিরভাগই এরই মধ্যে বিক্রির পথে। কোনো প্রকার হাইব্রিড বা ভেজাল খাদ্য আমার খামারের গরুকে খাওয়ানো হয় না। এলাকার সব গরিব মানুষের মাঝে আমি কোরবানির রান্না করা মাংস বিতরণ করে থাকি। খামার থেকে প্রতিবছর পশু বিক্রির লভ্যাংশের অর্থ সমাজসেবায় ব্যয় করি। যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন আমার খামার থাকবে আর খামার থেকে অর্জিত অর্থ সামাজিক কাজে ব্যয় হবে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আল-মামুন হোসেন বলেন, পাবনা জেলাতে প্রায় চব্বিশ হাজার গরুর খামারি রয়েছে। এর মধ্যে পুরষের সংখ্যা বেশি তবে নারীদের উদ্যোগে বেশ কিছু খামার গড়ে উঠেছে। পাবনা জেলার আমিনপুর থানার ঢালারচর অঞ্চলের মাহমুদা সবুজ তাদের মধ্যে অন্যতম। বেশিরভাগ খামারিরা দুগ্ধ গরুর সঙ্গে ষাঁড় গরু লালন পালন করে থাকেন। তবে মাহমুদা সবুজ ব্যতিক্রমী, তার খামারে শুধুই দেশি ষাঁড় গরু রয়েছে। বর্তমান সরকার ও সরকার প্রধান সব কিছুতেই পুরুষের পাশাপাশি নারীদের উন্নয়নের জন্য কাজ করছেন। আমরা জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সব সময় খামারিদের পাশে আছি। এ জেলার পশু, দুধ ও দুগ্ধ জাতীয় সামগ্রী সারাদেশে সরবরাহ হয়ে থাকে। আর কোরবানির পশু স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সারাদেশে সরবরাহ হয়। যেকোনো প্রয়োজনে খামারিদের স্বার্থ রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।
এ বছর জেলাতে প্রায় সাড়ে ছয়লাখ কোরবানির পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে গরু রয়েছে প্রায় দুইলাখ, ছাগল চারলাখ, মহিষ ১০ হাজার ও ভেড়া ৫০ হাজার। এবার জেলাতে কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে প্রায় তিনলাখ। বাকি প্রায় সাড়ে তিনলাখ পশু সারাদেশে সরবরাহ হবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২৩
জেএইচ