ঢাকা, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

গুপ্তধনের লোভ দেখিয়ে ব্যবসায়ীর ১৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নিলেন ‘জিনের বাদশাহ’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৫৭ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০২৩
গুপ্তধনের লোভ দেখিয়ে ব্যবসায়ীর ১৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নিলেন ‘জিনের বাদশাহ’ গ্রেপ্তার ‘জিনের বাদশাহ’ উজ্জ্বল মিয়া

ঢাকা: ‘জিনের বাদশাহ’র লোভে পড়ে ১৩ লাখ ২০ হাজার টাকা খুইয়েছেন কিশোরগঞ্জের পাটধা গাবতলী এলাকার মো. ইয়াছিন (২৬) নামের এক ব্যবসায়ী।  

প্রতারণার শিকার হয়েছেন বোঝার পর গত ৮ জুন রাজধানীর রমনা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী ইয়াছিন।

সেই মামলার সূত্র ধরে সেই কথিত জিনের বাদশাহকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।  

প্রতারক ‘জিনের বাদশাহ’ নাম মো. উজ্জ্বল মিয়া (৩২)। গাইবান্ধার ফরিদগঞ্জ থানার কমল নারায়ণপুর গ্রামের মো. রাজা মিয়ার ছেলে তিনি।  

পুলিশ জানিয়েছে, নিজেকে জিনের বাদশা পরিচয় দিয়ে সব সমস্যা সমাধানের কথা বলে সহজ সরল মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন উজ্জ্বল মিয়া। ব্যবসায়ী ইয়াছিন তার সর্বশেষ শিকার।

মামলার বিবরণী সূত্রে জানা যায়, গাড়ির গ্যারেজের ব্যবসা করেন কিশোরগঞ্জের ইয়াসিন। গত ৪ এপ্রিল ব্যবসায়িক কাজে ঢাকায় আসেন। ওঠেন রাজধানীর মগবাজারের সুইট স্লিপ আবাসিক হোটেলে।

পরদিন (৫ এপ্রিল) রাত ১২টার দিকে অপরিচিত একটি নম্বর থেকে তার মোবাইল নম্বরে একটি কল আসে। রিসিভ করেন ইয়াছিন। অপর পাশ থেকে একটি কণ্ঠ বলে- ‘আমি জিনের বাদশাহ। তুমি সাত হাঁড়ি সম্পদ পাবে, এর মধ্যে তিন হাঁড়ি কাঁচা পয়সা, চার হাঁড়ি স্বর্ণমুদ্রা। এর জন্য এই গোপন সংবাদের কথা কাউকে বলা যাবে না। এই গুপ্তধন পেতে হলে পাঁচটি শর্ত মানতে হবে। ’

লোভে পড়ে ইয়াছিন সব শর্তে রাজি হয়ে যান। পর দিন ৬ এপ্রিল একই নম্বর থেকে কল আসে। প্রথম শর্ত অনুযায়ী মাজারে সাতটি জায়নামাজের জন্য ৪৭ হাজার টাকা বিকাশ করে পাঠান ইয়াছিন। এরপর ইফতারের কথা বলে ১ লাখ ৬৫ হাজার, স্বর্ণের পুতুলের কথা বলে টাঙ্গাইল এলেঙ্গা ব্রিজের নিচে ৫ লাখ টাকা রেখে আসতে বলা হয়, ইয়াছিন তাই করেন। এরপর স্বর্ণের তিনটি হাঁড়ি ভেঙে গেছে বলে সাপকে দুধ খাওয়ানোর জন্য ১ লাখ ৫৩ হাজার টাকা দিতে বলা হয়, হাঁড়ির ভেতর স্বর্ণ জমাট বেঁধে গেছে বলে তিন ভরি স্বর্ণের দাম ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা এবং আরও প্রলোভন দেখিয়ে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা নেয় ওই জিনের বাদশাহ। সর্বশেষ শর্ত অনুযায়ী জিনের বাদশাহকে আরও ১ লাখ টাকা দেন ইয়াছিন।

ভুক্তভোগী ইয়াছিন যখন বুঝতে পারেন, আসলে তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন, ততক্ষণে জিনের বাদশাহ তার কাছ থেকে মোট ১৩ লাখ ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এর পর থেকে জিনের বাদশাহ যোগাযোগ করা বন্ধ করেন দেন।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মো. ইয়াছিন বাংলানিউজকে বলেন, এই প্রতারক মধ্যরাতে নিজেকে আল্লাহ’র অলী ও জিনের বাদশাহ দাবি করে ফোনে এমনভাবে কথা বলতেন, তখন সবই বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছিল। পরে জানতে পেরেছি, আমার মোবাইলে ফোন এলে প্রথমে আমার স্ত্রী ফোন ধরেছিল। তার কাছ থেকে কৌশলে আমার সমস্যা ও দুর্বলতার কথা জেনে নেয় ওই প্রতারক।  

আমার সন্তান না হওয়ার বিষয়টিও স্ত্রী ওই প্রতারককে বলেছিল জানান ইয়াছিন।

তিনি বলেন, আমি গাড়ির গ্যারেজের ব্যবসা করি। এই ব্যবসার ৫ লাভ টাকা এবং আরও আট লাখ টাকা ধার করে দফায় দফায় মোট ১৩ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়েছি। এরপর বুঝতে পেরেছি আমি প্রতারণার শিকার হয়েছি।

এই ঘটনায় মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ তদন্ত শুরু করে। মোবাইল ফোন নম্বরের সূত্র ধরে গত ৯ জুন গাইবান্ধা থেকে অভিযুক্ত মো. উজ্জ্বল মিয়া (৩২) কে গ্রেপ্তার করে তারা।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানায়, গ্রেপ্তার প্রতারক উজ্জ্বল মিয়া টার্গেট ব্যক্তিদের মধ্যরাতে ফোন করেন। ফোন রিসিভ করলেই শোনান গায়েবি আওয়াজ এবং কুরআনের বিভিন্ন আয়াত। কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রতারক উজ্জ্বল বলতে থাকেন, ওই ব্যক্তির জীবনের বিভিন্ন সমস্যার কথা। এরপর নিজেকে জিনের বাদশা ও আল্লাহর অলি পরিচয় দিয়ে সব সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। এর জন্য কিছু শর্ত দেন প্রতারক উজ্জ্বল। শর্তগুলোর মধ্যে যেমন- পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া, মিথ্যা কথা না বলা, কুরআন তিলাওয়াত করা, গুপ্তধনের কথা গোপন রাখা ও গুপ্তধন পাওয়ার পর কিছু অংশ দান করা।

শর্তগুলো মানলেই সমস্যা সমাধান হবে এবং মিলবে অনেক গুপ্তধন। লোভে পড়ে অনেকেই জিনের বাদশা পরিচয় দানকারী এই প্রতারক উজ্জ্বলকে লাখ লাখ টাকা পাঠায়। এক পর্যায়ে ভুক্তভোগী ব্যক্তি নিঃস্ব হয়ে যায় কিন্তু মিলে না কিছুই।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা আরও জানায়, উজ্জ্বল মিয়ার বড় ভাই রুবেল তিন বছর ধরে জিনের বাদশাহ পরিচয়ে প্রতারণা করে আসছিলো। মলত উজ্জ্বল তার বড় ভাই রুবেলের কাছেই এই প্রতারণার কৌশলগুলো রপ্ত করেছেন। গত দেড় বছর ধরে জিনের বাদশাহ সেজে প্রতারণা করে আসছিলেন উজ্জ্বল।

এবিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) বিভাগের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. সাইফুর রহমান আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, গ্রেপ্তার উজ্জ্বল দেড় বছর ধরে এমন প্রতারণা করে আসছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। তিনি তার ভাই রুবেলের কাছ থেকে এই প্রতারণা শিখেছে বলেও জানায়।

গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার উজ্জ্বলের কাছ থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি আরও কতজনের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।  

বাংলাদেশ সময়: ২৩৫৫ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০২৩
এসজেএ/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।