ঢাকা: নতুন আইনে ব্যাংকের পরিচালক পদে ৯ বছর থেকে বাড়িয়ে ১২ বছর করার প্রস্তাবের তীব্র সমালোচনা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্যরা।
বুধবার (২১ জুন) ব্যাংক-কোম্পানি (সংশোধন) বিল, ২০২৩ এর ওপর আনা সংশোধনী প্রস্তাবে তারা এই সমালোচনা করেন।
জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, অর্থমন্ত্রী সংশোধনী এনেছেন ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি। ইচ্ছাকৃত ছাড়া ব্যবসায় মার খেয়ে ঋণখেলাপি হওযার সংখ্যা কম। আমাদের দেশের সিস্টেমটাই এই রকম যে ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে ফেরত না দিলে কিছু হয় না। সাউথ বাংলা ব্যাংকের চেয়ারম্যান এক হাজার কোটি টাকা পাচার করে চলে গেলো আমেরিকা। কিভাবে নিয়ে গেলো। এখানে কারণটা একটাই, ব্যাংকের যারা পরিচালক বেশিরভাগ ব্যাকের পরিচালক তাদের আত্মীয় স্বজন, বেনামীতে যে সমস্ত ব্যবসা ওই সব ব্যবসায় লোন করে। এই ‘ই্চ্ছাকৃত’ কিভাবে ঋণখেলাপী ডিফাইন করবে আমি জানি না। কিন্তু এই ঋণখেলাপি তো বেশিরভাগ ইচ্ছাকৃত ছাড়া কেউ না। সত্যিকারের যারা ব্যবসা করে তারা ঋণখেলাপি কম হয়।
তিনি বলেন, এক পরিবারে পরিচালক চার জন ছিলো একজন কমানো হয়েছে, চার জনের জায়গায় একজন কমানো এটা তেমন কিছু সুবিধা হবে না। আবার যদি পরিচালকের মেয়াদ তিন বছর বাড়ান তার চেয়ে অর্থমন্ত্রী আপনি এটা আনলিমিটেড করে দেন। তিন জন, চার জন, পাঁচ জন যা হোক তারা যত দিন তারা বেঁচে থাকবেন ততদিন তারা ব্যাংকের পরিচালক, মালিক থাকবেন। এদেরকে এতো সুযোগ সুবিধা দেওয়ার কারণটা কী?
চুন্নু বলেন, আমরা মাঝে মাঝে দেখি কয়েকজন ব্যাংকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে কম্বল দেন, পত্রিকার প্রথম পাতায় ছবি আসে। প্রধানমন্ত্রীকে বিক্রি করে, দেখা যায় এ রকম স্বেত, শুভ্র দাড়িওয়ালা মানুষ আরও কি কি মানুষ প্রধানমন্ত্রীসহ বিশাল একটা... মানে বিজ্ঞপ্তির মত এটা কী করে হয়। আমি তো আগেই বলেছিলাম, প্রয়োজনে আমরা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে এক হাজার কোটি টাকা দেবো।
কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, আাইন করে লাভ কি,আইন যদি প্রয়োগ না হয়। আর্থিক খাতে যদি সুশাসন ফিরিয়ে আনা না যায় শুধু আইন করে তো লাভ নাই। আইন করলাম কিন্তু যা ইচ্ছা তাই করলাম। সব আইন তো এক দফা করছেন মালিকদের জন্য। প্রাইভেট ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের খবরদারি করে। কে ব্যাংকের গভর্নর হবে, কে ডেপুটি গভর্নর হবে, কে কোথায় বসবে সমস্ত তাদের কথায় হয়। এই ব্যাংকারদের কাছে সরকার জিম্মি হয়ে পড়েছে। এখান থেকে আমরা মুক্তি চাই, কারণ এই হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ খেলাপি, এদের এতো সুবিধা কেন দেবেন। তিন লক্ষ কোটি টাকার বেশি ঋণ খেলাপি আছে এখন বাংলাদেশের সমন্ত ব্যাংকের। যদি আইনের আওতায় আনতে না পারেন, কারো যদি সাজা না হয় তাহলে তো দেশ চলবে না। এতো ভালো ভালো আইন করছেন আইনের প্রয়োগ নাই। প্রধানমন্ত্রী একা যদি সব দিকে দেখেন। তাহলে মন্ত্রী পরিষদ বাদ দিয়ে দেন, উনি একা সব দেখুক। আপনারা করছেটা কি, এতোগুলো টাকা নিয়ে যায় বালাদেশ ব্যাংক অডিট করে না কেন। একদিনে তো টাকা নেয় না, বছরের পর বছর সরিয়ে নিয়েছে তখন আপনার অডিটে ধরা পড়ে না কেন। কারো বিরুদ্ধে কোনো অ্যাকশন নিলেন না। পিকে হালদার যাওয়ার পর বলে ধরতে পারি নাই, আবার আমজাদ যাওয়ার পর বলে এয়ারপোট দিয়ে পলিয়ে গেছে।
পীর ফজলুর রহমান বলেন, গত ১৬ বছরে ১১ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। শুধু ২০১৫ সালে পাচার হয়েছে এক লাখ কোটি টাকার বেশি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্ট থেকে এই তথ্য এসেছে। এই অর্থ পাচার বন্ধ করা যাচ্ছে না, এটা বন্ধ করতে না পারলে আইন করে লাভ নেই।
এর পর বিলের সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে মুজিবুল হক চুন্নু পরিচালকদের মেয়াদ বাড়ানো প্রসঙ্গে বলেন, সরকারি দলের একজন সদস্য এই সংশোধনী এনেছেন, এটি মন্ত্রী গ্রহণ করবেন জানি। যেখানে ব্যাংক লুটপাট হচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংক বসে বসে দেখছে আর অর্থমন্ত্রীর চোখে পড়ে না। শত শত কোটি টাকা নিয়ে চলে যাচ্ছে আপনারা দেখছেন না। লোনের একটা প্রক্রিয়া আছে। এই সমস্ত পরিচালকে ১২ বছর রাখা জন্য ব্যবন্থা আমরা প্রতিবাদ জানাই।
কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, আইন আনা হচ্ছে ব্যাংক মালিকদের সুবিধা দেওয়ার জন। অর্থাৎ ব্যাংক মালিক হবেন, ব্যাংকের তারা পরিচালক হবেন, তারা এখান থেকে ঋণ নিয়ে যাবেন এবং তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না কখনও। পরিচালকদের ৯ থেকে বাড়িয়ে ১২ বছর থাকার ব্যবস্থা করেছেন, এদেরকে আজীবন থাকার ব্যবস্থা করে দেন। এই প্রস্তাব করলাম, আপনারা খেয়ে যান যত দিন পারেন আমরা দেখে যাই।
বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০২৩
এসকে