মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নির্বিচারে বালু উত্তোলনের অভিযোগে সাংবাদিক সম্মেলন করেছে এলাকাবাসী। শ্রীমঙ্গল উপজেলার লামুয়া মৌজার সুমাইছড়া পাহাড়ি ছড়ার ৫ থেকে ৭টি পয়েন্ট থেকে বালু উত্তোলন করায় বসতবাড়ি ও বিস্তৃর্ণ ফসলি জমি ক্ষতির মুখে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার (২২ জুন) শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করে বলা হয়, পরিবেশ আইন তোয়াক্কা না করে নির্বিচারে মূল্যবান ও উত্তোলন নিষিদ্ধ এই খনিজ সম্পদ উত্তোলনে দেশের আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি এলাকার পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে ও জীববৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
এলাকাবাসীর পক্ষে ফরমান মিয়া (৭২) সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলেন, কালাপুর এলাকার প্রভাবশালী হিসেবে চিহ্নিত আবরু মিয়া দীর্ঘদিন যাবত সিলিকা বালু উত্তোলন করে আসছেন। স্থানীয় ইজারাদার লামুয়া এলাকায় একটি বালুমহাল ইজারা বন্দোবস্ত নিয়ে তিনি নির্ধারিত মহাল ছাড়াও এই ছড়ার বিস্তৃর্ণ ৫ থেকে ৭টি পয়েন্ট থেকে দিনে রাতে মূল্যবান সিলিকা বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছেন। বালু উত্তোলনের স্থানগুলোর মধ্যে সরকারি ব্রিজ, কবরস্থান, শ্মশানঘাট, বসতবাড়ি ও ফসলি জমি রয়েছে। এ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ ও চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
তিনি বলেন, স্থানীয় মেম্বার চেয়ারম্যানকে মৌখিকভাবে ও জেলাপ্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। প্রশাসনের এই নীরবতার সুযোগে আবরু মিয়া কোনো কিছুর পরোয়া না করে পাহাড়ি এই ছড়ার বিস্তৃর্ণ এলাকাজুড়ে সিলিকা বালু উত্তোলন অব্যাহত রাখে। এ পরিস্থিতিতে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে আমি ফরমান মিয়া বাদী হয়ে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করি।
এতে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক, শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ ৮ জনকে বিবাদী করা হয়। রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের যৌথ ব্রেঞ্চ গত ৪ জুন এক আদেশে বালু উত্তোলনের ওপর ৬০ দিনের স্থিতাবস্থা বজায় রেখে জবাব দাখিলের জন্য মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। হাইকোর্টের রায় প্রকাশের পরও আবরু মিয়া ও তার লোকজন উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছেন।
ফরমান মিয়া আরও বলেন, এলাকায় বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও উচ্চ আদালতে রিটসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করায় অবৈধ বালু উত্তোলনকারী আবরু মিয়া ও তার লোকজন বিভিন্ন সময় আমাকে ও আমার লোকজনদের বিরুদ্ধে শ্রীমঙ্গল থানায় মিথ্যা চাঁদাবজির অভিযোগ দায়ের করে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সন্দ্বীপ তালুকদার বলেন, ইতিপূর্বে এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। শিগগিরই সার্ভেয়ার পাঠিয়ে ইজারাদারের বালু উত্তোলনের স্থান চিহ্নিত করে দেওয়া হবে।
মৌলভীবাজার জেলাপ্রশাসক ড. ঊর্মি বিনতে সালাম সাংবাদিকদের জানান, এ সংক্রান্ত কাগজপত্র হাতে পেলে তা দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২৫২২ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০২৩
বিবিবি/এমজেএফ