ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকার ৩৪ ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩০৬ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০২৩
সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকার ৩৪ ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন

ঢাকা:  দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৩৪ ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন। অর্থবছর শেষে ১১ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ৩৪টি ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

এসব ক্রয় প্রস্তাবে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে সাত হাজার ৫৬৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।

বৃহস্পতিবার (২২ জুন) ভার্চ্যুয়ালি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ প্রস্তাবগুলো অনুমোদন দেওয়া হয়।  

বৈঠক শেষে অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব মাহমুদুল হোসাইন।  

তিনি বলেন, আজ অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ১৪তম এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ২২তম সভা হয়েছে। অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য চারটি এবং ক্রয় কমিটির অনুমোদনের জন্য (টেবিলে ৪টি উপস্থাপনসহ) ৩৫টি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছে। ক্রয়ের প্রস্তাবগুলোর মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের নয়টি, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের নয়টি, কৃষি মন্ত্রণালয়ের চারটি, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দুটি, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের দুটি, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দুটি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দুটি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের একটি, সেতু বিভাগের একটি এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একটি প্রস্তাব ছিল। ক্রয় কমিটির অনুমোদিত ৩৫টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ সাত হাজার ৭৭৩ কোটি ৬৭ লাখ ৪৮ হাজার ৮৬৫ টাকা। মোট অর্থায়নের মধ্যে জিওবি থেকে ব্যয় হবে চার হাজার ৪২৭ কোটি ২১ লাখ ৭৭ হাজার ৫৬৫ টাকা এবং দেশীয় ব্যাংক ও বৈদেশিক অর্থায়ন তিন হাজার ৩৪৬ কোটি ৪৫ লাখ ৭১ হাজার ১৮০ টাকা।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব বলেন, বৈঠকে স্থানীয় সরকার বিভাগের টেবিলে চারটিসহ মোট নয়টি ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে মোট খরচ হবে ৩২৭ কোটি তিন লাখ তিন হাজার ৩১৯ টাকা। বৈঠকে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের নয়টি ক্রয় প্রস্তাবে মোট ব্যয়ের পরিমাণ দুই হাজার ৯১৯ কোটি ৫৮ লাখ ৬৮ হাজার ৬০৩ টাকা। এর মধ্যে ছয়টি প্রকল্পে অতিরিক্ত কাজ হওয়ার ফলে ভেরিয়েশন বাবদ ব্যয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এক হাজার ৭৭৬ কোটি ৪২ লাখ ৮৫ হাজার ১৪৪ টাকা।  

তিনি বলেন, বৈঠকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের চারটি প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বিএডিসির সেচ সংক্রান্ত একটি পাইলট রিসার্চ প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে পৃথক তিনটি চুক্তির আওতায় বিভিন্ন দেশ থেকে ৫৫ হাজার মেট্রিক টন টিএসপি সার ও ৪০ হাজার মেট্রিক টন ডিএপি সার আমদানি প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ চারটি প্রস্তাবে মোট ব্যয় হবে ৪৬২ কোটি ৩২ লাখ ৮ হাজার ১২৫ টাকা।  

বৈঠকে কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স। এতে ব্যয় হবে ৮৮১ কোটি ২৪ লাখ ৪৬ হাজার ৮৫৭ টাকা।   

পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ (৩য় সংশোধিত) প্রকল্পের মূল সেতু নির্মাণ কাজের ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চায়না রেলওয়ে মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে ১২ হাজার ১৩৩ কোটি ৩৯ লাখ ৩০ হাজার ৬৮২ টাকায় ক্রয়ের চুক্তি হয়। চুক্তি অনুসারে কাজ চলমান অবস্থায় নকশা/ডিজাইন পরিবর্তন হওয়ায় কিছু আইটেম হ্রাস/বৃদ্ধিজনিত কারণে ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত এক হাজার ১১৭ কোটি ৯৭ লাখ ৯০ হাজার ৫৮০ টাকা ব্যয় বাড়ানোর ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।

বৈঠকে অনুমোদিত অন্যান্য প্রস্তাবগুলো হলো: ৪র্থ এইচপিএনএসপিভুক্ত ফিল্ড সার্ভিসেসে ডেলিভারি অপারেশন প্ল্যানের আওতায় তিন কোটি ৯০ লাখ সাইকেল ওরাল পিল (খাবার বড়ি) (৩য় প্রজন্ম) ক্রয়ের জন্য অভ্যন্তরীণ উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে পাঁচটি লটে তিনটি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নিয়ে ওরাল পিলগুলো সরবরাহ করবে। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে—(১) রেনেটা লিমিটেড, (২) টেকনো ড্রাগস লিমিটেড এবং (৩) পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। এতে ব্যয় হবে ১৯৫ কোটি টাকা।

২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক স্তরের (১ম, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির) ২০টি প্যাকেজে ৯৮টি লটের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। টিইসি কর্তৃক ৯৮টি লটের বিপরীতে সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা ২২টি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান পাঁচ কোটি ৬৫ লাখ ৪ হাজার ৫২৬টি বই মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহ করবে। এতে ব্যয় হবে ২০২ কোটি ১৪ লাখ ৪২ হাজার ৯৭০ টাকা। প্রতিটি পাঠ্যপুস্তকের দাম পড়বে ৩৫ দশমিক ৭৭ টাকা।

স্থানীয়ভাবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ৫০ লাখ লিটার রাইস ব্র্যান তেল কেনার একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। অংশ নিয়ে মজুমদার ব্র্যান অয়েল মিলস লিমিটেড, যশোর এবং মজুমদার প্রোডাক্টস লিমিটেড, ঢাকা ২ লিটারের পেট বোতলে ২৫ লাখ লিটার করে মোট ৫০ লাখ লিটার তেল সরবরাহ করবে। প্রতি লিটার রাইস ব্র্যান তেলের মূল্য ১৬০ টাকা হিসেবে মোট ব্যয় হবে ৮০ কোটি টাকা।  

টিসিবির প্রায় এক কোটি উপকারভোগী কার্ডধারীকে স্মার্ট সেবা দেওয়ার জন্য আইটি প্রতিষ্ঠান নিয়োগের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলেশন কোম্পানির কাছ থেকে এই সেবা নেওয়া হবে। এতে খরচ হবে ১৭ কোটি ৫০ লাখ ১২ হাজার ৩৩০ টাকা। প্রতিটি স্মার্ট কার্ডের দাম পড়বে ১৭ দশমিক ৫১ টাকা।

সভায় পানিসম্পদ বিভাগের ‘কোস্টাল এমব্যাংকমেন্ট ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট, ফেজ-১’ এর আওতায় নিয়োজিত পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ভেরিয়েশন পৃথক দুটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পের সময় ১৮ মাস বাড়ানো হলে অতিরিক্ত সময়ের জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের একটি প্রতিষ্ঠানকে অতিরিক্ত ১৯ কোটি ৮০ লাখ ৪৯ হাজার ৮৪৮ টাকা এবং অন্য প্রতিষ্ঠানকে চার কোটি ৪৯ লাখ ৪৪ হাজার ৫৭৪ টাকা বাড়ানো প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।

সভায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বাড়ানো (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) আইন-২০২১’- এর আওতায় স্পট মার্কেট থেকে (২০২৩ সালের ১৩তম) এলএনজি আমদানির প্রত্যাশাগত অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। পেট্রোবাংলা কর্তৃক এক কার্গো এলএনজি সরবরাহের জন্য ২১টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দরপ্রস্তাব আহ্বান করা হলে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স গানভোর সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেড এই এলএনজি সরবরাহ করবে। প্রতি এমএমবিটিইউ ১২.৯৮ মার্কিন ডলার হিসেবে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানিতে ব্যয় হবে ৫৫৭ কোটি ৭২ লাখ ৪৮ হাজার ৪৭৬ টাকা। এছাড়াও একই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রতি এমএমবিটিইউ ১৩.৮৫ মার্কিন ডলার হিসেবে আরও ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি সংগ্রহ করা হবে। এতে ব্যয় হবে ৫৯৫ কোটি ১০ লাখ ৭০ হাজার ২১৬ টাকা।

সচিব জানান, খুলনা থেকে মোংলা পোর্ট পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ (২য় সংশোধিত) প্রকল্পের প্যাকেজ নং ডবিব্লউডি-১ এর ক্রয় কাজের ২য় ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ৩১ কোটি ৫৫ লাখ ৮২ হাজার ৬৪৫ টাকা ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।  

তিনি বলেন, ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে ৩য় ও ৪র্থ ডুয়েলগেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন প্রকল্পের ডব্লিউডি-২ প্যাকেজের নির্মাণকাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে মেসার্স কেইসি ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড ভারত। এতে ব্যয় হবে ৩৪৯ কোটি ৫৩ লাখ ৮৬ হাজার ৫৯২ টাকা।  

এর আগে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় তিনটি প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ২৩০৬ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০২৩
জিসিজি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।