ঢাকা: আগামী সেপ্টেম্বরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের (আরএনপিপি) জন্য জ্বালানি (ইউরেনিয়াম) রাশিয়া থেকে বাংলাদেশে আনা শুরু হবে। এ জ্বালানি সরবরাহের প্রথম কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকতা শুরু করার প্রস্তুতি চলছে।
রূপপুর প্রকল্পের এই জ্বালানি রাশিয়াতে উৎপাদন করা হচ্ছে। গত মে মাসে জ্বালানি উৎপাদন কাজ দেখতে আরএনপিপির প্রকল্প পরিচালকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল রাশিয়া ঘুরে আসে। ওই সময় বলা হয় ইউরেনিয়াম আসবে অক্টোবরে।
তবে উৎপাদন কাজ এগিয়ে যাওয়ায় সেপ্টেম্বরের শেষে দিকেই এই জ্বালানি আসার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তবে কোনো কারণে সেপ্টেম্বরে সম্ভব না হলে, অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহেই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি দেশে এসে পৌঁছাবে বলে নিশ্চিত করেন সংশ্লিষ্টরা।
শনিবার (২৪ জুন) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানও সেপ্টেম্বরে ইউরেনিয়াম আসার কথা জানিয়েছেন। এ বিষয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক ও পরমাণু বিজ্ঞানী ড. শৌকত আকবর বাংলানিউজকে বলেন, সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে ইউরেনিয়াম আসার সম্ভাবনা রয়েছে। সেটা না হলে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে আসবে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি করপোরেশনের (রোসাটম) সূত্রগুলো থেকে জানা যায়, নির্ধারিত সময়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শেষ করার লক্ষ্য নিয়েই কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। সেপ্টেম্বরে এই প্রকল্পের পারমাণবিক জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত ইউরেনিয়ামের প্রথম ব্যাচটি আনার প্রস্তুতি চলছে। বিমানযোগে রাশিয়া থেকে দেশে আনার পর এই জ্বালানি প্রথম প্রকল্পে সরবরাহ করা হবে আনুষ্ঠানিকতার মধ্যদিয়েই।
জ্বালানি কমিশনিংয়ের এ কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় ডিভিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এতে অংশ নিতে পারেন বলেও শনিবার (২৪ জুন) বিসিএসআইআর-এর অনুষ্ঠানে জানান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান।
এছাড়া ওই অনুষ্ঠানে রোসাটম ও আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারাও উপস্থিত থাকবেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর বাংলানিউজকে বলেন, রাশিয়া থেকে জ্বালানি ইউরেনিয়াম আসার পর বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ইউরেনিয়ামের মালিক হবে। এটা একটা বিরাট মাইলস্টোন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ আইএইএ-এর গাইডলাইন অনুযায়ী ইউরেনিয়াম রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা করতে পারবে। এর কমিশনিং কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
এদিকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি সরবরাহ করবে রাশিয়ার একটি রাষ্ট্রায়াত্ত প্রতিষ্ঠান টিভিইএল। কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন ও টিভিইএল-এর মধ্যে এ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের লাইফ টাইম জ্বালানি সরবরাহ করবে। রূপপুর প্রকল্পের জন্য এই বিশেষায়িত জ্বালানি ইউরেনিয়াম রড রাশিয়াতে উৎপাদন করা হবে। এর পর তা বাংলাদেশে আনা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, এই পারমাণবিক জ্বালানি রাশিয়া থেকে দেশে আনা এবং প্রকল্পে নেওয়ার সময় কঠোর নিরাপত্তার বিষয় রয়েছে। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানির নিরাপত্তা বিষয়ে আইএইএ-এর বিস্তারিত গাইডলাইন রয়েছে। সেটা অনুসরণ করে জ্বালানি বিমান বন্দরে এসে পৌঁছানোর পর সেখান থেকে কঠোর নিরাপত্তায় পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুর প্রকল্পে নেওয়া হবে।
এই নিরাপত্তার দায়িত্বের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সেনাবাহিনী, পুলিশসহ বিভিন্ন বিভাগের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যরা থাকবেন। তাদের প্রশিক্ষণের বিষয়ও রয়েছে। সে সব বিষয়েও প্রস্তুতি চলছে।
রাশিয়ার প্রযুক্তি ও সার্বিক সহযোগিতায় দেশটির রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি করপোরেশন রোসাটম রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাস্তবায়ন করছে। প্রায় এক লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের অধিকাংশ টাকাই ঋণ সহায়তা হিসেবে দিচ্ছে রাশিয়া।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার ঋণের কিস্তি পরিশোধের মাধ্যম হিসেবে মুদ্রা সংক্রান্ত জটিলতা, সঞ্চালন লাইন নির্মাণে প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে যত দ্রুত সম্ভব এই প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ করে উৎপাদনে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
দুই ইউনিট বিশিষ্ট রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে প্রথম ইউনিট এবং দ্বিতীয় ইউনিট ২০২৫ সালে উৎপাদনে যাওয়ার কথা রয়েছে। সে অনুযায়ী, প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে বলেই জানান সংশ্লিষ্টরা।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্বোধন বিষয়ে জানতে চাইলে ড. শৌকত আকবর জানান, আগামী বছর সুবিধাজনক সময়ে প্রথম ইউনিটের উদ্বোধন করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৪ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০২৩
এসকে/এনএস