জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকা): পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ সহজ হওয়ায় স্বাভাবিক সময়ে নৌযাত্রীতে ভাটা পড়লেও, ঈদ সামনে রেখে প্রাণ ফিরেছে সদরঘাট এলাকায়। দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের নৌ পথে বাড়ি পৌঁছে দিতে বাড়ানো হয়েছে দৈনিক চলাচলকারী লঞ্চের সংখ্যাও।
রোববার (২৫ জুন) সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, যাত্রীবোঝাই করে দক্ষিণাঞ্চলের লঞ্চগুলো পন্টুন ছেড়ে যাচ্ছে। গুলিস্তান-সদরঘাট রাস্তায় যানজট কারণে ভোগান্তি থাকলেও টার্মিনালে আগের মতো ভিড় না থাকায় অনেকটা স্বস্তি নিয়েই বাড়ি ফিরছেন যাত্রীরা।
বিআইডব্লিওটিএ সূত্রে জানা যায়, শনিবার (২৪ জুন) ঢাকা নদী বন্দর থেকে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে মোট ৭১টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। আগের দিন (শুক্রবার) এই সংখ্যা ছিল ৬৫টি। যাত্রীর চাপ বাড়ায় ঢাকা-বরিশাল, ঢাকা-পটুয়াখালীসহ কয়েকটি রুটে বাড়ানো হয়েছে লঞ্চের সংখ্যাও। রোববারও ৭০-৭৫টা লঞ্চ ঘাট ছাড়তে পারে।
লঞ্চ সংশ্লিষ্টরা জানান, ঈদ ঘনিয়ে আসায় সদরঘাটে যাত্রীর চাপ বেড়েছে। গত শুক্রবারের (২৩ জুন) তুলনায় শনিবার যাত্রীর চাপ আরও বেড়েছে। সেজন্য কয়েকটি রুটে লঞ্চের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। সোমবারের (২৬ জুন) দিকে গার্মেন্টস ছুটি হলে যাত্রীর চাপ আরও বাড়বে। যাত্রী টানতে ভাড়াও কম নেওয়া হচ্ছে। ফলে অগ্রিম টিকিট বিক্রি প্রায় শেষের দিকে। কিছু কিছু রুটের লঞ্চে ২৯ জুন পর্যন্ত কেবিনের টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।
ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচলকারী এমভি প্রিন্স আওলাদের সুপারভাইজার হৃদয় বলেন, প্রতিদিনই যাত্রীর চাপ বাড়ছে। অগ্রিম বুকিংও হয়েছে ২৮ তারিখ পর্যন্ত। ২৬-২৭ আমাদের কোনো কেবিন ফাঁকা নেই।
ঢাকা-ভাণ্ডারিয়া রুটে চলাচলকারী এমভি ফারহানের স্টাফ সুমন শেখ বলেন, যাত্রীর চাপ বেড়েছে আগের চেয়ে। গতকালও লঞ্চ ভরে গেছে, যা অবস্থা আজও লঞ্চ ভরে যাবে।
বরিশালগামী যাত্রী সোহাগ বলেন, ‘আমি মোহাম্মদপুর থেকে এসেছি। বাসা থেকে সকাল ১০ টায় রওনা করে গুলিস্তানে পৌঁছেছি ১১টা ১৫ মিনিটে। আর গুলিস্তান থেকে সদরঘাট এটুকু পথ আসতে ১ ঘণ্টারও বেশি লেগেছে। তবে আগেই ফোন করে টিকিট বুকিং দিয়ে রেখেছিলাম। বিকাশে টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি। তাই কেবিন পাওয়া নিয়ে ভোগান্তি হয়নি। ঘাটেও আগের মতো সেই ভিড় নেই, ফিরতে অনেকটা স্বস্তি বোধ করছি।
সদরঘাট নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শফিকুর রহমান খান বলেন, এবারের ঈদযাত্রায় যাত্রীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা (নিরাপত্তা বাহিনী) সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছি। পুলিশ, নৌ পুলিশের পাশাপাশি লঞ্চ টার্মিনাল এলাকায় র্যাবের একটি টিম আলাদাভাবে কাজ কছে। আনসার সদস্যরাও কাজ করছে। যাত্রীরা যাতে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারেন সেজন্য আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছি।
লঞ্চ মালিক সমিতির মহাসচিব শহিদুল হক ভূঁইয়া বলেন, যাত্রীর সংখ্যা আগের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। সেজন্য কয়েকটি রুটে লঞ্চের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। আমরা সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়েও কম নিচ্ছি। আমরা সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি, যাতে ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন হয়, চাহিদামতো লঞ্চের সংখ্যাও বাড়ানো হবে।
সার্বিক বিষয়ে সদরঘাটে বিআইডব্লিওটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা দপ্তরের যুগ্ম পরিচালক কবির হোসেন বলেন, আগের তুলনায় যাত্রীর চাপ বাড়ছে। যাত্রীর চাপ বাড়লে লঞ্চ প্রস্তুত আছে। মালিক সমিতির সঙ্গে কথা বলে আমরা স্পেশাল লঞ্চ দিয়ে দেব। শনিবার ঢাকা নদী বন্দর থেকে মোট ৭১টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। আজ থেকে লঞ্চ সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে, সেক্ষেত্রে ৭০-৭৫ টা যেতে পারে। সোমবার থেকে গার্মেন্টস-ফ্যাক্টরি ছুটি শুরু হলে যাত্রীর চাপ আরও বাড়বে, আমরা তারও প্রস্তুতি রেখেছি। আমাদের মনিটরিং টিম কাজ করছে, যাতে কোনো লঞ্চ অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে না ছাড়ে।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৮ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০২৩
এমএমজেড