ঢাকা: এবারে ঈদ উদযাপন নির্বিঘ্ন করতে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা হাতে নেওয়া হয়েছে। ঈদে জঙ্গি হামলার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই, তবে অতীত ইতিহাসের বিষয়টি মাথায় রেখে পুলিশের সব ইউনিট তৎপর রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
বুধবার (২৮ জুন) সকালে জাতীয় ঈদগাহ মাঠের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা জানান।
ডিএমপি কমিশনার বলে, ঈদে জঙ্গি হামলার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। তবে আমরা অতীতের ইতিহাস ভুলে যাইনি। সবকিছু মাথায় রেখে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা তৎপর রয়েছি। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশের সব ইউনিট প্রস্তুত থাকবে।
তিনি বলেন, ঢাকায় বিভিন্ন জায়গায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে, বৃহত্তম জামাত অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় ঈদগাহ মাঠ। এখানে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিসহ ৩০-৩৫ হাজার লোক নামাজ পড়বেন। ডিএমপি প্রত্যেকটা ঈদের জামাতে নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকে। বিভিন্ন ইউনিটের পোশাকধারী সদস্যের পাশাপাশি সাদা পোশাকে সদস্যরা মোতায়েন থাকবে। কমিউনিটি পুলিশ ও বিট পুলিশিংও স্থানীয়ভাবে নিরাপত্তার বিষয়ে তৎপর থাকবে। এছাড়া, অন্য কোনো হুমকি থাকলে সিটিটিসি প্রস্তুত থাকবে।
জাতীয় ঈদগাহে ডিএমপির পক্ষ থেকে তিন স্তরের নিরাপত্তা থাকবে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ডগ স্কোয়াডেরর মাধ্যমে সুইপিং করা হয়েছে। র্যাবও ফোর্স নিয়োগ করবে। সবার সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে।
যারা ঈদগাগে আসবেন, আপনারা শুধু জায়নামাজ আর ছাতা নিয়ে আসতে পারেন। অন্যকোন লাগেজ বা ব্যাগ না নিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করছি। চেকপোস্টে তল্লাশি শেষে ঈদগাহে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে। গাড়ি কোথায় থামবে, সে বিষয়েও নির্দেশনা রয়েছে। গাড়ি থেকে নেমে অনেক দূর হেঁটে আসতে হবে, তাই বৃষ্টির দিনে সবার সঙ্গে ছাতা থাকা বাঞ্ছনীয়। প্রাকৃতিক বড় দুর্যোগ না হলে মুসল্লিরা নির্বিঘ্নে জাতীয় ঈদগাহে নামাজ আদায় করতে পারবেন।
তিনি বলেন, ঈদ জামাতে কোনো মহলের অন্য কোন পরিকল্পনা আছে কিনা সেটি জানতে ডিবি ও সিটিটিসির সাইবার ইউনিট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মনিটরিং করছে। কোনো তথ্য পেলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া, ঢাকার প্রত্যেকটা ঈদজামাতে থানা-পুলিশ নিরাত্তায় নিয়োজিত থাকবে।
ফাঁকা ঢাকার নিরাপত্তা প্রসঙ্গে ডিএমপি কমিশনার বলেন, গত ঈদে যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, যারা বাসা খালি রেখে চলে গেছেন সেখানেও বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। এবারও আশা করছি সে অবস্থা বজায় থাকবে। ঢাকায় কয়েক স্তরের নিরাপত্তা থাকবে। স্থানীয় সিকিউরিটি গার্ডের সঙ্গে যোগাগাযোগ থাকবে। কোনো তথ্য আমাদের জানালে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ অ্যাটেন্ড করবে। তারপরেও যারা গ্রামে যাচ্ছেন মূল্যবান সম্পত্তি খালি বাসায় না রেখে ঘনিষ্টদের বাসায় অথবা ব্যাংকে রেখে যান। যদিও পুলিশি ব্যবস্থা থাকবে তাও ফাঁকা বাসায় মূল্যবান সামগ্রী থাকলে ঝুঁকি থেকে যায়।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা গত ১ মাস ধরে বিশেষ অভিযান চালিয়েছি। ৬ শতাধিক পেশাদার অপরাধী যেমন মলমপার্টি, চোর, ডাকাত, ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ঈদের আগে যেহেতু তাদের জামিনের সম্ভাবনা নেই। তাই এতগুলো অপরাধী জেলে থাকলে পুলিশ কর্তৃক নজরদারি সহজ হবে।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, নগরীর ২ কোটি লোককে ৮ হাজার পুলিশ সার্বক্ষণিক পাহারা দিচ্ছে। তাই তাৎক্ষণিকভাবে চেকপোস্ট বা টহল টিম আপনাদের চোখে নাও পড়তে পারে। তবে আমরা আমরা মনিটরিং করি, আমাদের টিম এক রাস্তায় কিছুক্ষণ ডিউটি করে আরেক এলাকায় চলে যায়। এটা আমাদের টেকনিক একই এলাকায় বেশিক্ষণ চেক না করা। তারপরেও আপনাদের সাজেশন নিয়ে আমাদের টহল টিমকে আরও ভাইভ্রেন্ট করার উদ্যোগ নেব।
তিনি বলেন, ৩২ হাজার পুলিশ সদস্যের মধ্যে ৩-৪ হাজারকে হয়তো ছুটি দেব। বাকিরা ঢাকায় দায়িত্ব পালন করবেন, তাদের ঈদ নেই। তারা নাগরিকদের সেবায় ঢাকায় দায়িত্ব পালন করবেন। আশা করি নিরাপদে ঈদ উদযাপিত হবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, কসাইয়ের ছদ্মবেশে রেকি করে অপরাধের বিষয়ে কারো কাছে তথ্য থাকলে পুলিশকে জানাবেন। কারো গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হলে পুলিশকে জানিয়ে দিন। যে কোন তথ্য পেলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারব।
বাংলদেশ সময়: ১১১১ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০২৩
পিএম/এমজেএফ