ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ঠিক সময়ে ছাড়ছে বাস, শেষ দিনে নেই ভোগান্তি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৮ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০২৩
ঠিক সময়ে ছাড়ছে বাস, শেষ দিনে নেই ভোগান্তি

ঢাকা: আর মাত্র একদিন পরই উদযাপিত হতে যাচ্ছে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে শেষ দিনে বৃষ্টি উপেক্ষা করে বাড়ি ফিরছে মানুষ।

নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যের উদ্দেশে বাস ছেড়ে যাওয়ায় হচ্ছে না কোনো ভোগান্তি।

বুধবার (২৮ জুন) সকালে রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির পথ ধরতে সকাল থেকেই বৃষ্টি উপেক্ষা করে শত শত মানুষ বাস কাউন্টারগুলোতে উপস্থিত হচ্ছেন। বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটতে দেখা যায় তাদের। তবে শিডিউল বিপর্যয় না থাকায় নির্দিষ্ট সময়ে টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যাচ্ছে প্রায় প্রতিটি বাস। নেওয়া হচ্ছে না বাড়তি ভাড়াও। ফলে তেমন কোনো ভোগান্তি ছাড়াই বাড়ি ফিরতে পারছেন সাধারণ মানুষ।

এদিকে সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি ও ভারী বৃষ্টির কারণে মহাখালী বাস টার্মিনালে যাত্রীর সংখ্যা তুলনামূলক কম দেখা যায়। তবে রাজধানী ইতোমধ্যে ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় এবং বৃষ্টির কারণে টার্মিনালে পৌঁছাতে যানজটে পড়তে হয়নি যাত্রীদের। মঙ্গলবার (২৭ জুন) মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় যানজট থাকলেও আজ সকাল থেকে সেটি নেই। ফলে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই টার্মিনালে পৌঁছাচ্ছে বেশিরভাগ বাস। ছেড়ে যেতেও হচ্ছে না দেরি।

মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে মূলত দেশের মধ্যাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের বাস ছেড়ে যায়। এখান থেকে টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, নওগাঁ, জয়পুরহাট, রংপুর, নীলফামারী, গাইবান্ধা, রাজশাহী, নাটোর, পাবনা, কুষ্টিয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়ায় যাত্রীরা যাতায়াত করেন।

পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে গত ১৭ জুন অনলাইনে চাঁপাইনবাবগঞ্জের একতা পরিবহনের টিকিট কাটেন নির্বাচন কমিশনের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর আক্তারুজ্জামান। তার যাত্রার সময় ছিল বুধবার বেলা ১১টায়। বৃষ্টি থাকায় সকাল ৮টায় স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে রাজধানীর কেরানিগঞ্জের বাসা থেকে সিএনজিতে রওনা দিয়েছেন তিনি। রাস্তা ফাঁকা থাকায় সকাল ৯টার মধ্যেই পৌঁছে গেছেন মহাখালী বাস টার্মিনালে।

সকাল ১০টায় আক্তারুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, বৃষ্টির কারণে রাস্তায় যানজট হতে পারে ভেবে সময় নিয়ে বাসা থেকে বের হয়েছি। কিন্তু রাস্তা ফাঁকা থাকায় অনেক আগেই কাউন্টারে এসে পৌঁছেছি। বৃষ্টির মধ্যে ছোট বাচ্চাকে নিয়ে সামান্য একটু ভোগান্তি হলেও ঈদযাত্রার কাছে এটি কিছুই না। সকাল থেকে এদের সবগুলো গাড়িই নির্দিষ্ট সময়ে ছেড়ে গেছে। আশা করি আমাদেরটাও দেরি করবে না।

একতা পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার টিটু বলেন, গতকাল টাঙ্গাইল, যমুনা সেতু এসব জায়গায় যানজট ছিল। ফলে গতকাল মারাত্মক শিডিউল বিপর্যয় হয়েছে। তবে রাতের মধ্যেই আজকের বাসগুলো টার্মিনালে এসে পৌঁছেছে। যার কারণে সকাল থেকে কোনো বাস ছাড়তে দেরি হচ্ছে না।

ময়মনসিংহ যাওয়ার উদ্দেশে কলাবাগান থেকে বোন ও ভাগনেদের নিয়ে টার্মিনালে এসেছেন একটি এনজিওর প্রজেক্ট ম্যানেজার শাখাওয়াত হোসেন। এনা পরিবহনের টিকিট কেটেছেন তিনি। শাখাওয়াত বাংলানিউজকে বলেন, এ পরিবহনের অগ্রিম কোনো টিকিট নেই। তাৎক্ষণিক কাউন্টার থেকে টিকিট কাটা হয়। সিট ফিলাপ হলে বাস কাউন্টার ছেড়ে যায়। আমাদের বাস ৩৬ নম্বর।

তিনি বলেন, সকাল থেকে বৃষ্টি হলেও রাস্তায় যানজট না থাকায় কোনো ভোগান্তি হয়নি। বাসও কিছুক্ষণ পর পর ছেড়ে যাচ্ছে। তবে কাউন্টারে যাত্রীদের বসার জন্য ভালো সুযোগ-সুবিধা নেই। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতারও অভাব রয়েছে।

এনা পরিবহনের সহকারী ম্যানেজার এস এম খালেদ বলেন, আমাদের এখান থেকে শুধু ময়মনসিংহের বাস ছেড়ে যায়। কোনো অগ্রিম টিকিট নেই। তাৎক্ষণিক টিকিট কেটে যাত্রীরা যাচ্ছেন। প্রতি ১০ মিনিট পর পর বাস টার্মিনাল ছেড়ে যাচ্ছে। কোনো দেরি হচ্ছে না। আমাদের পর্যাপ্ত বাস আছে। তবে গতকাল যানজটের কারণে যাত্রীদের সেবা দেওয়া কিছুটা ব্যাহত হয়েছে, যা আজ নেই।

এ পরিবহনের চালক ফারুক বলেন, গতকাল গাজীপুর, সাভার ও ভালুকায় বেশ যানজট ছিল। যার কারণে গন্তব্যে পৌঁছাতে ও ঢাকায় ফিরতে নির্দিষ্ট সময়ের থেকে বেশি সময় লেগেছে। আজ সকাল থেকে যানজট না থাকলেও দুপুরে যানজট হতে পারে। এছাড়া বৃষ্টির কারণে ধীরে ধীরে যেতে হবে। এতে গন্তব্যে পৌঁছাতে একটু বেশি সময় লাগবে।

পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে মৌলভীবাজার যাচ্ছেন গার্মেন্টসকর্মী কবির হোসেন। তিনি বলেন, আগে টিকিট কাটিনি, তাই ভোর ৬টায় কাউন্টারে এসেছি। দুপুর পৌনে ১টার টিকিট পেয়েছি। সকাল থেকে কোনো বাস দেরি করে ছাড়েনি। তাই দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হলেও নির্দিষ্ট সময়ে রওনা দিতে পারবো বলে আশা করছি।

শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার মিজান বলেন, গতকাল ব্যাপক শিডিউল বিপর্যয় ছিল। তবে রাতের মধ্যে গাড়ি ঢাকায় ঢুকতে পারায় সকাল থেকে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। নির্দিষ্ট সময়ে আমাদের বাস ছেড়ে যাচ্ছে।

মহাখালী বাস টার্মিনাল সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সহ-সভাপতি মো. শাখাওয়াত আলী বাবুল বলেন, মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে ময়মনসিংহ ও উত্তরবঙ্গের যাত্রী বেশি যায়। গতকাল কিছু যাত্রী গেছে। আজ কিছু যাত্রী যাচ্ছে। পর্যাপ্ত গাড়ি আছে। তাই শিডিউল বিপর্যয়সহ কোনো ধরসের সমস্যা হচ্ছে না।

এ টার্মিনাল থেকে কোনো বাসে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, বাড়তি ভাড়ার বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি মেনে চলছি। এখন পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া নেওয়ার কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। আমাদের পাশাপাশি বিআরটিএ’র একটি টিমও সার্বিক বিষয়ে মনিটরিং করছে। কোনো পরিবহনের বিরুদ্ধে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ পেলে সেটি আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব।

যানজটের কারণে গতকাল কিছুটা শিডিউল বিপর্যয় থাকলেও আজ নেই বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, কোরবানির ঈদের সময় গরুবাহী ট্রাক চলাচল করে। মহাসড়কের পাশে পশুর হাট বসে। রাস্তায় যাত্রীবাহী বাসও তুলনামূলক বেশি থাকে। এছাড়া গতকাল গার্মেন্টস ছুটি হওয়ায় কিছুটা শিডিউল বিপর্যয় ছিল। রাত ১২টার বাস ২টায়ও ছেড়ে গেছে। তবে আজ এ সমস্যা নেই। নির্দিষ্ট সময়ে বাস টার্মিনাল ছেড়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৭ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০২৩
এসসি/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।