ঢাকা, শুক্রবার, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

চোখে পানি থাকলেও মুখে তাদের হাসি! 

উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৯ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০২৩
চোখে পানি থাকলেও মুখে তাদের হাসি! 

পাথরঘাটা (বরগুনা): সাপিয়া বেগম, বয়স ষাটের গণ্ডিতে পড়েছে অনেক আগেই। স্বামী মারা গেছে ১৮ বছর আগে।

তিন ছেলে ও দুই মেয়ে তার। দুই মেয়ে স্বামীর সংসার নিয়েই থাকেন। তিন ছেলে দিনমজুরের কাজ করে কোনো রকম দিন কাটছে।

দিনমজুর স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকেই ছেলেদের সংসারেই থাকেন সাপিয়া বেগম। বেশিরভাগ সময় মেজ ছেলের সঙ্গে থাকেন তিনি। কিন্তু ছেলেদের টানাপোড়েনের সংসারে তিনবেলা খাবার জোগানোই দায়, সেখানে গরুর মাংস তো দূরের কথা। বছরে একবারও জুটে না কপালে। মাংস খাওয়া সাপিয়াদের এক ধরনের স্বপ্ন; লোক লজ্জার কারণে কারও কাছে হাতও পাততে পারেন না। প্রতিবেশীরা যদি দেয় তা দিয়েই স্বপ্নের মাংস বাস্তবে খেতে পারেন তারা।  

তাই কোরবানির মাংস দুস্থদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে -এমন খবর পেয়ে মুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে চলে আসেন সাপিয়া। চোখ যেন পানিতে টলটল করে। শুধু সাপিয়াই নয় আয়শা বেগম, মমতাজ বেগম, পারুল বেগমসহ একাধিক নারীর চোখে পানি আর কষ্টের ছাপ। তাদের মধ্যে অধিকাংশই বিধবা বা স্বামী পরিত্যক্তা। সবার চোখে পানি টলটল করলেও মাংস হাতে পেয়ে মুখে হাসি ফুটেছে। তাদের চোখে পানি থাকলেও মুখে হাসি।  

কোরবানি এলেই এক টুকরো মাংসের জন্য বিত্তশালীদের দুয়ারে দুয়ারে দাঁড়িয়ে থাকে অনেক দরিদ্র মানুষ। কিন্তু আজ ব্যতিক্রম; স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দরিদ্রদের দুয়ারে গিয়ে তাদের হাতে মাংস পৌঁছে দেওয়ায় তারা অনেক খুশি। প্রতি বছরের মতো এবছরও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন ‘সাদাকাহ’ ও গবেষণা ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধকে জানি’র সমন্বয়ে বরগুনার পাথরঘাটায় এমন ব্যতিক্রম আয়োজন করে। আর আয়োজনের মাধ্যমে শতাধিক পরিবারের মধ্যে কোরবানির মাংস দেওয়া হয়েছে।  

সাপিয়া বেগম, মমতাজ বেগম ও পারুল বেগম বলেন, আমরা এই মাংস পেয়ে খুব খুশি। এক বেলা মাইয়া-পোলা নিয়া তৃপ্তি সহকারে খাইতে পারমু। যারা আমাগো এই মাংস দেছে (দিয়েছে), তাদের জন্য দোয়া করি।

বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম বলেন, আমরা আসলেই এই ব্যতিক্রম আয়োজন দেখে মুগ্ধ হয়েছি। সেই প্রবাসে থেকে তাদের কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে বাংলাদেশের মাটিতে দুস্থদের মাঝে সহায়তা দিয়ে আসছে, এটি আসলেই ভালো উদ্যোগ। আমরা চাই এ আয়োজন অব্যাহত থাকুক।

পাথরঘাটা পৌর কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম কাকন বলেন, আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি, এ কারণে যে -এমন আয়োজন আমার ওয়ার্ডে। এ ওয়ার্ডের দুস্থদের মাঝে মাংস বিতরণ করা হয়েছে। যে পরিমাণ মাংস দেওয়া হয়েছে তা পরিবারের সদস্যরা তৃপ্তি সহকারে খেতে পারবে।  

সাদাকাহ'র প্রধান নির্বাহী মাওলানা শহিদুল্লাহ বলেন, সাদাকাহ ইউএসএ মূলত স্বেচ্ছাসেবী একটি সংগঠন। সবার সহযোগিতাকে তৃনমূলের অসহায় মানুষের কাছে পৌছে দিতে কাজ করি আমরা। প্রতি বছরের মতো এবারও দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলার ১৬টি স্থানে দরিদ্র হতদরিদ্রদের মধ্যে কোরবানির মাংস বিতরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে কর্মসূচিটি সম্পন্ন হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৮ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০২৩
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।