ঢাকা: সামর্থ্য না থাকায় এবার পবিত্র ঈদুল আজহায় গরু বা ছাগল কিছুই কোরবানি দিতে পারেননি কারওয়ান বাজারের মাছের আড়তের কর্মচারী মো. ফরিদ। যেতে পারেননি গ্রামের বাড়িতেও।
ফরিদের বাড়ি শরীয়তপুরে। সেখানে বাবা, মা, ভাই, বোন রয়েছেন। ঢাকায় থাকেন মগবাজারে। এবার বড় ভাইয়ের অসুস্থতার জন্য বাড়িতে পশু কোরবানি দেওয়া হয়নি। এ জন্য বাড়িতেও যাননি।
ফরিদ বাংলানিউজকে বলেন, সামর্থ্য না থাকায় এবার বাড়িতে কোরবানি দেওয়া হয়নি, যাওয়াও হয়নি। কিন্তু ঈদের দিন কোরবানির মাংস না খেলে কি হয়? তাই কারওয়ান বাজারে এসেছি। এখানে প্রতি বছর কম দামে কোরবানির মাংস পাওয়া যায়। এ মাংস যেমন তাজা তেমনি স্বাদও ভালো। ৬৫০ টাকা করে এক কেজি গরুর মাংস কিনেছি। এখন বাসায় নিয়ে রান্না করে স্ত্রীসহ খাবো।
প্রতি বছর পবিত্র ঈদুল আজহার দিন রাজধানীর কারওয়ান বাজারে কোরবানির তোলা মাংসের হাট বসে। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) বিকেলে কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, আম্বর শাহ (রাহ.) শাহী জামে মসজিদের সামনের রাস্তায় কোরবানির তোলা মাংস বিক্রি করছেন অন্তত ১৫-২০ ছিন্নমূল মানুষ। তাদের পাশাপাশি ২০-২৫ জন কসাইও বিভিন্ন জায়গায় পশু কোরবানির পর পাওয়া মাংস বিক্রি করছেন। এসব মাংস ২০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মূলত, কোরবানির ঈদের দিন সকাল থেকে ছিন্নমূল ও ভিক্ষুকরা বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে ঘুরে ঘুরে কোরবানির মাংস সংগ্রহ করেন। কসাইরা বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে পশু কোরবানির পর গরুর মাথা, লেজ, পায়ের খুড়, ভুড়ি, জিহ্বাসহ বিভিন্ন উচ্ছিষ্ট অংশ নিয়ে আসেন। এগুলোকে তারা ছেডি বলেন। তারপর এসব মাংস ও ছেডির কিছু অংশ নিজেদের জন্য বাকিগুলো বিক্রি করে দেন।
কারওয়ান বাজার ছাড়াও মালিবাগ রেলগেইট ও মহাখালী রেলগেইটে এসব তোলা মাংসের হাট বসে প্রতি কোরবানির ঈদে। সমাজের গরিব, দুঃখী ও নিম্নবিত্ত যারা কোরবানি দিতে পারেন না তারাই ঈদের দিন এসব জায়গা থেকেই মাংস কিনে খান।
মো. জাহাঙ্গীর নামের কারওয়ান বাজারের এক স্থানীয় বলেন, প্রতি বছর এভাবে কোরবানির তোলা মাংস বিক্রি হয়। যারা কোরবানি দিতে পারেন না, তারা এখন থেকে মাংস কিনে নিয়ে যান। প্রতি বছর ২০-২৫ জন কসাই এখানে তাদের মাংস বিক্রি করেন। এছাড়া ২০-৪০ জন ছিন্নমূল বিভিন্ন সময় এসে মাংস বিক্রি করে যান। দুপুরের পর থেকে এসব মাংস বিক্রি শুরু হয়, চলে রাত পর্যন্ত।
জোলেখা বেগম নামে এক ছিন্নমূল বলেন, গতকাল রাতে কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকায় এসেছি। সকাল থেকে বিভিন্ন বাসা বাড়িতে ঘুরে ঘুরে কোরবানির মাংস সংগ্রহ করেছি। এখন নিজেদের জন্য কিছু মাংস রেখে বাকিগুলো বিক্রি করতে এখানে এসেছি। আগামী দুই-তিন দিন এভাবে মাংস সংগ্রহ করে আবার বাড়ি চলে যাবো।
জোলেখা বেগমের ব্যাগে চার কেজির মতো মাংস দেখা যায়। তিনি এ মাংস ঠেকা ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করতে চান। কিন্তু ক্রেতারা কেউ ৬০০ টাকা কেজি বা কেউ ঠেকা ২৫০০ টাকা বলছেন।
হোসেন রনি নামে এক কসাই বলেন, সকাল এক বাড়িতে তিনটি বড় আকারের গরু কাটাকাটির কাজ করেছি। সেখান থেকে প্রায় ২০ কেজির মতো ছেডি নিয়ে এসেছি। এখন কাটাকাটি করছি। কিছু নিজেদের জন্য রেখে বাকিগুলো ৪০০ টাকা দরে বিক্রি করে দিবো। অনেকে কোরবানি দিতে পারে না। তারা এখান থেকে অন্তত কোরবানি মাংস নিতে পারবে।
মো. ফারুক নামের আরেক ক্রেতা বলেন, আমাদের কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য নেই। আবার মানুষের বাড়িতে গিয়ে মাংসও আমরা চাইতে পারি না। তাই এখান থেকে মাংস কিনে নিচ্ছি। যাতে অন্তত কোরবানি মাংস খেতে পারি।
আরও পড়ুন: বিক্রি হচ্ছে কোরবানির মাংস
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৩ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০২৩
এসসি/জেএইচ