নাটোর: নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) গাড়িচালক মো. রুবেলকে মারতে দেশীয় অস্ত্র হাতে প্রকাশ্যে উপজেলা কার্যালয়ে ঢুকে পড়ে স্থানীয় যুবলীগ কর্মী মো. আহসান হাবিবসহ দুই সন্ত্রাসী।
তাদের তাড়া খেয়ে আত্মরক্ষায় গাড়িচালক রুবেল অফিসের দোতলায় উঠলে সন্ত্রাসীরা সিঁড়ি বেয়ে সেখানেই উঠে যায়।
মঙ্গলবার (০৪ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের ভেতরে এ ঘটনা ঘটে।
আহসান হাবিব উপজেলার পূর্ব মাধনগর গ্রামের আব্দুল হামিদের ছেলে এবং উপজেলা যুবলীগের উপ-কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বলে জানা গেছে। অপরজন হলেন একই এলাকার আজাদের ছেলে আলাল হোসেন।
ইউএনওর গাড়িচালক রুবেল সদর উপজেলার উলুপুর ফুলবাগান এলাকার মৃত আবুল বাশারের ছেলে।
নলডাঙ্গা ইউএনওর সরকারি গাড়িচালক মো. রুবেল বাংলানিউজকে জানান, তার বড় ভাই খোকন রেন্ট-এ কারের ব্যবসা করেন। নলডাঙ্গার স্থানীয় যুবলীগ কর্মী আহসান হাবিব ঈদের আগে তার ভাইয়ের প্রাইভেটকারটি ভাড়া নিয়ে ৫দিন রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাঘুরি করেন। কিন্তু ভাড়া না দিয়ে ঘোরাতে থাকেন আহসান হাবিব। এ নিয়ে আজ সকালে তার ভাইয়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা কাটাকাটি হয় হাবিবের।
এসময় ভাড়া পরিশোধের কথা বললে আহসান হাবিব ছোট ভাই রুবেলকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। বিষয়টি তাৎক্ষণিক তার বড় ভাই খোকন তাকে জানান। এ অবস্থায় আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইউএনও অফিসের গেটের সামনে এসে রুবেলকে তার মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে হাবিব। এতে রাজি না হলে জোড় করে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে ইউএনও অফিসের সামনে নিয়ে যায়। এসময় ধারালো অস্ত্র বের করে তাকে মারতে গেলে আত্মরক্ষা করতে দৌড়ে ইউএনও অফিসে ঢুকে পড়েন তিনি।
এসময় দেশীয় অস্ত্র হাতে তারাও মারার জন্য পিছু নেয় এবং দোতলা পর্যন্ত উঠে আসে। কিন্তু লোকজনের উপস্থিতি দেখে তারা চলে যায়। পরে বিষয়টি রুবেল ইউএনও এবং পুলিশকে জানান। তিনি বলেন, ঘটনাস্থল যেহেতু উপজেলা কমপ্লেক্সেও ভেতরে, তাই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।
নলডাঙ্গা ইউএনও রোজিনা আক্তার বাংলানিউজকে জানান, প্রাথমিকভাবে জেনেছেন তার গাড়িচালক রুবেলের ভাইয়ের সঙ্গে আহসান হাবিবের বিরোধ রয়েছে। প্রাইভেটকারের ভাড়া নিয়ে মূলত তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব। ভাইয়ের ওপর প্রতিশোধ নিতে তারা রুবেলের ওপর হামলার চেষ্টা করে। বিষয়টি জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়েছে এবং আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
নলডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) মো. আকবর হোসেন বাংলানিউজকে জানান, ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ভাবে সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়। এ ব্যাপারে রুবেল বাদী হয়ে দুইজনকে আসামি করে মামলা করেছেন। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযানে নেমেছে।
নলডাঙ্গা উপজেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন নকুল বাংলানিউজকে জানান, উপজেলা যুবলীগের কমিটিতে আহসান হাবিবের কোনো পদ-পদবি ও সদস্য পদও নেই। তবে কমিটি গঠনের সময় তাদের মতামতের বাহিরে একটি উপ কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটিতে তাকে সাংগঠনিক পদ দেওয়া হয়েছিল বলে শুনেছেন। কিন্তু ওই কমিটির কোনো অনুমোদন ছিল না।
এ ব্যাপারে জানতে যুবলীগ নেতা আহসান হাবিবের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে সরকারি কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী (নাম প্রকাশ না করার শর্তে) বাংলানিউজকে বলেন, স্বয়ং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়িচালককে উপজেলা কার্যালয়ে ঢুকে মারার চেষ্টা, এটা একটা নিরাপত্তার ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত। কেননা এ ঘটনায় অপরাধীরা পার পেয়ে গেলে ভবিষ্যতে আরও অনেকের জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
বাংলাদেশ সময়: ০১৫০ ঘণ্টা, জুলাই ০৫, ২০২৩
আরএ