ঢাকা: সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসের সেফহোমে আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশি গৃহকর্মীদের যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের অভিযোগে বরখাস্ত হলেন উপসচিব মো. মেহেদী হাসান।
এর আগে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা করে রাখা হয়েছিল।
সৌদি আরবে গৃহকর্মী হিসেবে গিয়ে নির্যাতনের শিকার নারীদের বাংলাদেশ দূতাবাসের সেফহোমে রাখা হয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, উপসচিব মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে গৃহকর্মীদের ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে ২০২০ সালে। তিনি তখন রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সেলর। অভিযোগের ভিত্তিতে ওই বছরই দূতাবাস একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার (০৬ জুলাই) মেহেদী হাসানকে বরখাস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবা উদ্দিন চৌধুরী স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বর্তমানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সৌদি আরবের রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে দূতাবাসের সেফহোমে আশ্রিত কতিপয় গৃহকর্মীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট দূতাবাস কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণিত হয়। এরপর তাকে দূতাবাস থেকে প্রত্যাহার করা হয়। ২০২১ সালের ২৪ জানুয়ারি তাকে অবমুক্ত করা হয়। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২০২১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৩(খ) অনুযায়ী অসদাচরণের অভিযোগে দায়ের করা বিভাগীয় মামলায় ওই বছরের ১০ মার্চ অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণী জারির মাধ্যমে তাকে কারণ দর্শানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
অভিযুক্ত কর্মকর্তা ২০২১ সালের ৮ এপ্রিল লিখিতভাবে কারণ দর্শানোর জবাব দাখিল করে ব্যক্তিগত শুনানির প্রার্থনা করলে ১৫ জুন তার শুনানির দিন ধার্য করা হয়। ব্যক্তিগত শুনানিতে তার দাখিলকৃত জবাব ও প্রদত্ত বক্তব্য সন্তোষজনক বিবেচিত না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহ তদন্ত করার জন্য ২০ জুন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়।
তদন্তে মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে দূতাবাসের সেফহোমে আশ্রিত কতিপয় গৃহকর্মীকে অপ্রয়োজনীয় একান্ত সাক্ষাৎকারের নামে অশ্লীল প্রশ্ন ও আচরণসহ বিভিন্নভাবে হেনস্তা করা এবং যৌন নির্যাতন (ধর্ষণ) করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তদন্তকারী কর্মকর্তা ২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, তদন্ত প্রতিবেদন ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পর্যালোচনা করে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা অনুযায়ী মেহেদীকে গুরুদণ্ড দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়ে তাকে দ্বিতীয়বার কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। ওই নোটিশে কেন তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত বা অন্য কোনো গুরুদণ্ড দেওয়া হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়। দ্বিতীয় কারণ দর্শানোর জবাবে মেহেদী তার বিরুদ্ধে আনা এবং তদন্তে প্রমাণিত অভিযোগের বিপরীতে কোনো সন্তোষজনক বক্তব্য দিতে সক্ষম হননি।
ফলে মেহেদীর দাখিলকৃত জবাব ও তদন্ত প্রতিবেদনসহ সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্তের গুরুদণ্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের পরামর্শ চাওয়া হলে কমিশন সহমত পোষণ করে। পরে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিয়ে মেহেদী হাসানকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।
বরখাস্ত হওয়া উপসচিব মেহেদী হাসানের কোনো বক্তব্য বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানতে পারেনি।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৭ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০২৩
এমআইএইচ/এসএএইচ