ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ঢামেকে একদিনে ৩৯ ডেঙ্গু রোগী, শয্যা দিতে টাকা দাবি

আবাদুজ্জামান শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৪ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০২৩
ঢামেকে একদিনে ৩৯ ডেঙ্গু রোগী, শয্যা দিতে টাকা দাবি ঢামেকের ছবি। তুলেছেন আবাদুজ্জামান শিমুল

ঢাকা: দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি অস্বাভাবিক। ঢাকা মেডিকেলে কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে বেড়ে এ রোগজনিত রোগীর সংখ্যা।

কর্তৃপক্ষ বলছে, একদিনেই ৩৯ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। রোগীদের অভিযোগ, শয্যা পেতে তাদের স্বজনদের কাছে অর্থ দাবি করা হচ্ছে। চাহিদা মতো টাকা না দিয়ে শয্যা থেকে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসা সেবা নিয়ে সন্তুষ্টি থাকলেও অন্যান্য লোকজনের কার্যক্রমে নাখোশ তারা।

রোববার (৯ জুলাই) বিকেলে ঢামেকের নতুন ভবনে গিয়ে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ও তাদের অভিযোগ জানা যায়। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে এখন পর্যন্ত ২২১ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে হাসপাতালে। তাদের ভর্তি রাখা হয়েছে ভবনের ছয় থেকে ৮ তলা পর্যন্ত সাধারণ মেডিসিন রোগীদের সঙ্গে।

সরজমিনে দেখা গেছে, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সাধারণ রোগীদের পাশাপাশি ডেঙ্গু রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বিছানার পাশাপাশি তাদের রাখা হয়েছে ফ্লোরে-লিফটের আশপাশে।

নতুন ভবনের ৬০১ নম্বর ওয়ার্ডের লিফটের পাশেই মশারি টাঙিয়ে চিকিৎসা নিতে দেখা যায় মাগুরা সদর উপজেলার কৃষক সাখাওয়াত হোসেনকে (২৪)। সঙ্গে আছেন তার মা সালেহা বেগম। তার সঙ্গে কথা হলে জানা যায়, ছেলেকে নিয়ে গত ৫ জুলাই আসেন ঢামেকে। সেদিনই ভর্তি করা হয় সাখাওয়াতকে। ছেলের চিকিৎসার জন্য এখন পর্যন্ত ‘নির্দেশক্রমে’ ২০ হাজার টাকার ওষুধ বাহিরে থেকে কিনে আনা হয়েছে। হাসপাতাল থেকে রোগীর জন্য স্যালাইন ও কিছু ওষুধ দেওয়া হয়েছে।



সাখাওয়াতের সঙ্গে কথা হলে তিনি অভিযোগ করেন, প্রথমে ৬০১ ওয়ার্ডের ভেতরে একটি রুমের (২০ এর ক নম্বর) বিছানায় তিনি দুদিন ছিলেন। পরে হাসপাতালের পরিচয়দানকারী কিছু লোক তার কাছে ৫০০ টাকা দাবি করে। দিতে না পারায় তাকে বিছানা থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকে তিনি লিফটের পাশে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তিনি বলেন, অন্য এক রোগী ১ হাজার টাকা দেওয়ায় আমাকে শয্যা থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এমন আরও অনেক ডেঙ্গু রোগী ভুক্তভোগীর শিকার হয়েছে। ‘কোনো এক ভয়ে’ তারা নিজের নাম প্রকাশ করতে চাননি। তবে জানিয়েছেন, হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্সরা রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকলেও অন্যান্য স্টাফদের কখনোই পাওয়া যায় না। এত বড় হাসপাতালে তারা কোথায় যাবেন, কোনো দিকনির্দেশনা নেই। চিকিৎসকরা নানা পরীক্ষার নির্দেশনা দেন। এসব নিয়ে তারা কোথায় কার কাছে যাবেন, তাও বুঝে উঠতে পারেন না। দেশের প্রখ্যাত এই হাসপাতালে দালালের আধিপত্য বেশি। এসব রোগীদের মধ্যে কয়েকজন শয্যা পেয়েছেন। কিন্তু কীভাবে পেয়েছেন তা বলতে চান না।

ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আশরাফুল আলমের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল শনিবার থেকে ২৪ ঘণ্টায় ৩৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২২১ জন। তিনি বলেন, ডেঙ্গু মোকাবিলার সক্ষমতা আমাদের আছে। তবে চিকিৎসার চেয়েও প্রতিরোধ ব্যবস্থার উপর আরও বেশি জোর দেওয়া প্রয়োজন। ডেঙ্গু নিয়ে ভয় নয় বরং এই ব্যাপারে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

ডেঙ্গু রোগীদের অভিযোগ ও হাসপাতালের সেবা নিয়ে কথা হলে ঢামেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, প্রতিদিনই অনেক ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। আমাদের চিকিৎসকরা তাদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। হাসপাতাল থেকে ওষুধপত্র দেওয়া হচ্ছে। এ বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যু সংখ্যাটা আপাতত আমার মনে নেই। তবে আনুমানিক এই পর্যন্ত কয়েকজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে।

টাকার বিনিময়ে বিছানা পাওয়া নিয়ে অভিযোগ আমাদের কাছে কেউ করেনি। এছাড়া হাসপাতালে বিভিন্ন দেয়ালে দালাল থেকে সতর্ক থাকতে নির্দেশনা দেওয়া আছে। কেউ হাসপাতালে বিছানার বিনিময়ে অথবা কোনো কারণে কেউ টাকা দাবি করলে সরাসরি আমার কাছে এসে অভিযোগ করার জন্য অনুরোধ করছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০২৩
এজেডএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।