বরিশাল: বিভাগের প্রায় সবগুলো হাসপাতালেই প্রতিদিন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছে। বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালেও এ রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে।
জানা গেছে, বিভাগের দুটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা সদর ও উপজেলা সদরের হাসপাতালসহ স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সগুলোয় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে। বেশিরভাগ চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রগুলোতেই আলাদা কক্ষ বা ওয়ার্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসক, সেবিকা, ওষুধ ও মশারির ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
কিন্তু কোনো হাসপাতালে প্লাটিলেট সেল সেপারেটর যন্ত্র না থাকায় চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে দুশ্চিন্তা আঁকড়ে ধরেছে। দ্রুত প্লাটিলেট কমতে থাকা রোগীরা নির্ধারিত সেবা পাচ্ছেন না। ফলে বাধ্য হয়ে তাদের ঢাকা যেতে হচ্ছে। এতে করে ডেঙ্গু ঝুঁকি বাড়ছে দক্ষিণাঞ্চল তথা বরিশালে।
সম্প্রতি ঢাকার একটি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নেন নগরের আলেকান্দা এলাকার বাসিন্দা শাওন। বাংলানিউজকে তিনি জানান, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে তিনি শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। তখন মেডিসিন ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা তার চিকিৎসা দেওয়া শুরু করলেও দ্রুত অবনতি হয়ে প্লাটিলেট কমে যেতে থাকে। হাসপাতালে প্লাটিলেট সেল সেপারেটর যন্ত্র নেই বিদায় তাকে ঢাকায় রেফার করা হয়। ঢাকায় কয়েক ব্যাগ রক্ত থেকে প্লাটিলেট নেন তিনি। একই সঙ্গে চলে ওষুধ।
শাওন বলেন, আমরা পরিবার মনে করেছিল আমি আর বাঁচব না। ঢাকা না গেলে হয়ত রক্ষাও হতো না। ঢাকায় যেতে যেতে নাকি আমার শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গিয়েছিল। বরিশালে প্লাটিলেট সেপারেটর মেশিন থাকলে হয়তো এখানেই চিকিৎসাটা করাতে পারতাম।
শেবাচিম সূত্রে জানা গেছে, কর্তৃপক্ষ প্লাটিলেট সেল সেপারেটর যন্ত্র চেয়ে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে। তবে যন্ত্রটি পেলেই যে চিন্তা কমছে এমনটা নয়, এটি পরিচালনার জন্য দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবলেরও প্রয়োজন রয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, যন্ত্রটি পরিচালনা করতে দক্ষ জনবল থাকলেও তাদের প্রশিক্ষণ নেই।
শেবাচিমের সহকারী পরিচালক ডা. মনিরুজ্জামান জানিয়েছেন, এ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু আক্রান্ত বেশিরভাগ রোগীই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। কোনো রোগীর রক্তের প্লাটিলেট ২০ হাজারের নিচে নেমে গেলে তিনি ঝুঁকিতে পড়বেন। তখন তাকে দ্রুত ঢাকায় পাঠানো ছাড়া বিকল্প কোনো পথ থাকবে না। বরিশালে ডেঙ্গু রোগীর সঠিক ও উন্নত চিকিৎসার জন্য প্লাটিলেট সেল সেপারেট যন্ত্র স্থাপন এ হাসপাতালে প্রয়োজন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি আরও বলেন, বরিশালে যেসব রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত তাদের মধ্যে অধিকাংশই মানুষই ঢাকা ফেরত। ঈদের আগে এবং পরে ঢাকায় জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গ্রামের বাড়িতে এসেছেন। পরবর্তীতে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা গেছে তারা ডেঙ্গু আক্রান্ত। পরে তারা বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হন।
শেবাচিম হাসপাতালটির পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, গত বছর আমরা প্লাটিলেট সেল সেপারেটর মেশিন চেয়ে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলাম। তখনই মেশিনটি দ্রুত সময়ের মধ্যে সরবরাহের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা না পাওয়ায় চলতি বছরে আবারো আমরা মেশিনটির জন্য আবেদন করেছি। আশা রাখি যন্ত্রটি দ্রুত সময়ের মধ্যে পেয়ে যাবো।
তিনি বলেন, আমাদের হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য নতুন ভবনের নিচতলায় পৃথক ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। প্লাটিলেট সেল সেপারেট যন্ত্র ছাড়া ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার সব ধরনের সার্পোটও রয়েছে।
গুরুতর ডেঙ্গু রোগীদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে দ্রুত বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য উপ-পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল। কারণ, হিসেবে বলা হচ্ছে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের অনেক হাসপাতালে অভিজ্ঞ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই, যেটা শেবাচিম হাসপাতালে রয়েছে।
এদিকে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের সোমবারের (১০ জুলাই) সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে বরিশালে বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ৯৯৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছেন। যার মধ্যে ৭৬৭জন সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নিয়েছেন। ডেঙ্গুতে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালে রয়েছেন ২২৮ জন। যারমধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৮ জন নতুন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৬ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০২৩
এমএস/এমজে