ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

‘বর্তমান বাজারে ২৫ হাজার টাকার কম মজুরিতে বাঁচা সম্ভব নয়’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৪ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০২৩
‘বর্তমান বাজারে ২৫ হাজার টাকার কম মজুরিতে বাঁচা সম্ভব নয়’

ঢাকা: বর্তমান বাজারে অন্তত ২৫ হাজার টাকার কম মজুরিতে বাঁচা সম্ভব নয় বলে উল্লেখ করেছেন ‘মজুরি বৃদ্ধিতে গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলন’-এর মতবিনিময় সভার বক্তারা।

মঙ্গলবার (১১ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের মুক্তিভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি শ্রমিকনেতা মন্টু ঘোষের সভাপতিত্বে ‘মজুরি প্রশ্ন ও গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলন’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, পোশাক শিল্পের মালিকরা অর্থনীতির চরম দুর্দিনে ডলারে তাদের মুনাফার অংক গুনছেন কিন্তু শ্রমিক মজুরি পাচ্ছে টাকায় এবং ৫ বছর আগে নির্ধারণ করা হিসাবে। ২০১৮ সালে সর্বশেষ ঘোষিত নিম্নতম মজুরি সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে শ্রমিকদের প্রয়োজন, বাজারদর এবং দাবির সাথে সামান্যও সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। গত কয়েক বছরে জিনিসপত্রের দাম, বাড়ি ভাড়া বহু গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। শ্রমিকদেরই শুধু নয় বর্তমান পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের অবস্থা চরম বেগতিক। এই অবস্থায় বিদ্যমান মজুরি দিয়ে দেশের ৭৮ ভাগ রপ্তানি আয় করা পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের পক্ষে কোনো রকম জীবন ধারণ করাও সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমান বাজারে অন্তত ২৫ হাজার টাকার কম মজুরিতে কারও পক্ষে বাঁচা সম্ভব নয়।

বক্তারা আরও বলেন, দেশের তৈরি পোশাক শিল্পে শ্রমিকের ভূমিকা এবং অবদানই প্রধান। মজুরি বোর্ডের কার্যক্রম দ্রুত সম্পাদন করে গার্মেন্ট শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি না করলে শ্রমিকদের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ চলমান নিয়মতান্ত্রিক বিক্ষোভে সীমাবদ্ধ থাকবে না। এক মুহূর্ত বিলম্ব না করে শ্রমিকের মজুরি পুনঃনির্ধারণ করা উচিত। শ্রমিকরা কোনো দয়া-দাক্ষিণ্য চাচ্ছে না। শ্রমিকরা অধিকারের জন্য লড়াই করছে।

মজুরি বৃদ্ধির সাথে সাথে শ্রমিকের জন্য রেশনিং, চিকিৎসা এবং বাসস্থানের অধিকার নিশ্চিত করার দাবি এবং দাবি আদায়ে সরকার ও মালিক পক্ষকে বাধ্য করতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান শ্রমিকনেতারা।

সভায় লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভা প্রধান শ্রমিকনেতা তাসলিমা আখতার। গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শ্রমিকনেতা শহিদুল ইসলাম সবুজের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাসদ (মার্কসবাদী)’র  সমন্বয়ক মাসুদ রানা, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবীর জাহিদ, গার্মেন্ট শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সমন্বয়ক নাইমুল হাসান জুয়েল, বাংলাদেশ শ্রমিক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি জহিরুল ইসলাম, বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মাহবুবুর রহমান ইসমাইল, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান শামীম, গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলনের সভাপতি শামীম ইমাম, গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মাসুদ রেজা, জাতীয় সোয়েটার গার্মেন্টস ফেডারেশনের সভাপতি এ এম ফয়েজ হোসেন প্রমুখ।

মতবিনিময় সভা থেকে ‘মজুরি বৃদ্ধিতে গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলন’ ৭ দফা দাবি জানায়। দাবিগুলো হলো-
১. দ্রব্যমূল্যর ঊর্ধ্বগতির বিপদকালে কালক্ষেপণ নয়, মজুরি বোর্ডের কার্যক্রম দ্রুত পরিচালনা ও মজুরি ২৫ হাজার টাকা করতে হবে।

২. বেসিক কমিয়ে নয়, ন্যূনতম ৬০% বেসিক ধরে মজুরি নির্ধারণ করতে হবে। নতুন মজুরি ঘোষণার আগ পর্যন্ত ৬০% মহার্ঘ্য ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা নিতে হবে।

৩. পোশাক শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণে ৭ গ্রেড কমিয়ে ৫ গ্রেড করতে হবে।

৪. সোয়েটার ও পিস রেটে কর্মরত শ্রমিকদরে কাজের আগে মজুরি নির্ধারণ ও ডাল সিজনে পূর্ণ বেসিক দিতে হবে। সোয়েটারে ৩ শিফট ও ওভারটাইম নিশ্চিত করতে হবে।

৫. বৈষম্য নয়, ইপিজেড এবং ইপিজেডের বাইরে সমান হারে মূল মজুরির ১০% ইনক্রিমেন্ট দিতে হবে। বাধ্যতামূলক অংশীদারীত্বমূলক প্রভিডেন্ট ফান্ড চালু করতে হবে। চাল, ডাল, তেল শিশুখাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য রেশন কার্ড মাধ্যমে বিতরণের লক্ষ্যে স্থায়ীভাবে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে। শ্রমিকদের জন্য জীবনবীমা, চিকিৎসা, শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিতে সরকার ও মালিককে উদ্যোগ নিতে হবে।

৬. অবিলম্বে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে দ্রব্যমূল্য কমাতে হবে। শ্রমিক ও শিল্প স্বার্থে গ্যাস ও বিদ্যুৎ এর দাম কমাতে হবে সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। এ বিষয়ে মালিকদেরও ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির এই দুঃসময়ে শ্রমিক ছাঁটাই, মিথ্যা মামলা-হামলা ও নির্যাতন বন্ধ করতে হবে।

৭. শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে মালিক-সরকার এবং বায়ার ৩ পক্ষের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০২৩
আরকেআর/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।