ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

পাউবো প্রকৌশলীকে তুলে নিয়ে মারধর

ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২৩
পাউবো প্রকৌশলীকে তুলে নিয়ে মারধর

বাগেরহাট: বাগেরহাটে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবু হানিফকে তার কার্যালয় থেকে তুলে নিয়ে মারধর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজ কার্যালয় থেকে ওই কর্মকর্তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় বাধা দিতে গিয়ে আহত হয়েছেন এক আনসার সদস্যসহ দুজন।

আহত আনসার সদস্যকে বাগেরহাট জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর নাক-মুখ ফেটে গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বুধবার (১৩ জুলাই) রাতে শহরের মদনের মাঠ সংলগ্ন অফিসে কাজ করছিলেন উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবু হানিফ। এ সময় ৪টি মোটরসাইকেলে করে ১০ জন লোক এসে বকেয়া বিল না দেওয়ার অভিযোগে তাকে হুমকি দেন ও গালাগালি করেন। ওই প্রকৌশলীকে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মনির হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সরদার নাহিয়ান আল সুলতান ওশান ডেকেছেন বলে তারা তাদের সঙ্গে যেতে বলেন। আবু হানিফ তাদের সঙ্গে যেতে রাজি না হলে তাকে জোর করে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন তারা।

এ সময় অফিসের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য নিত্যানন্দ ঠেকাতে গেলে তাকে মেরে নাক-মুখ ফাটিয়ে দেন অভিযুক্তরা। একই সাথে গেট অপারেটর নাইমকেও তারা মারধর করেন। পরে আবু হানিফকে উঠিয়ে নিয়ে শহর রক্ষা বাঁধ সংলগ্ন বটতলায় নিয়ে যান তারা। সেখানে ছাত্রলীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন বলে জানা যায়। পরে খবর পেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের জানান। ঘণ্টাখানেক পরে আবু হানিফকে ছেড়ে দেয় অভিযুক্তরা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, রাত ৯টার কিছু পরে পর্যায়ক্রমে ৪টি মোটরসাইকেলে করে দশজন লোক কার্যালয়ে আসেন। তারা ভেতরে প্রবেশ করে প্রকৌশলী আবু হানিফকে খুঁজতে থাকেন। খুঁজে না পেয়ে উপস্থিত অন্যদের গালাগালি ও হুমকি দিয়ে তারা স্থান ত্যাগ করেন। সিসি ফুটেজে চিহ্নিত ব্যক্তিদের বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগের কার্যক্রমে অংশ নিতে দেখা গেছে।

রাতেই উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবু হানিফ বাগেরহাট মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তবে অভিযোগে কারো নাম না দিয়ে অজ্ঞাতনামা উল্লেখ করা হয়। এর কারণ হিসেবে আবু হানিফ রাতের অন্ধকারে চিনতে না পারার কথা বললেও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র বলছে তিনি ভয়ে নাম উল্লেখ করেননি।

উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবু হানিফ বলেন, অফিসে বসে কাজ করছিলাম। এ সময় কয়েকজন ছেলে এসে আমাকে তাদের সঙ্গে যেতে বলে। রাজি না হলে মারধর করে জোর করে নিয়ে যায়। ঠেকাতে গেলে অফিসের আনসার নিত্যানন্দ ও গেট অপারেটর নাইমকেও মারধর করে। আমাকে নিয়ে শহর রক্ষা বাধের বটতলায় ঘণ্টাখানেক আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তারা আমাকে লাঞ্ছিত করেছে, মারধর করেছে। তাদের ঠিকাদারি কাজের বিল আটকে রেখেছি কেন তা জানতে চায়। কিন্তু কোন কাজ বা কীসের বিল এটা আমি সঠিক জানি না।

তবে অভিযুক্তরা কোন ঠিকাদারের লোক, এমন প্রশ্নের উত্তর দেননি এই প্রকৌশলী। তবে সূত্র বলছে তিনি সবাইকে চিনলেও অভিযুক্ত সবাই ক্ষমতাসীন দলের সদস্য হওয়ায় ভয়ে নাম বলছেন না।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুম বিল্লাহ বলেন, রাত ৯টার দিকে ছাত্রলীগ নামধারী ৮ থেকে ১০ জন মোটরসাইকেল নিয়ে ঢুকে আমার অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবু হানিফকে মারধর করেছে। তাকে জোর করে ধরে নিয়ে যায়। এক আনসার সদস্যকেও মারধর করে নাক ভেঙে দেয়। তিনি বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। গেট অপারেটরকেও মেরেছে তারা। পরে উপজেলা চেয়ারম্যান ও স্থানীয় প্রশাসনকে জানালে এক পর্যায়ে আবু হানিফকে ছেড়ে দিয়েছে। আমরা এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিয়েছি। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দোষীদের সহজেই চিহ্নিত করা যাবে।

নির্বাহী প্রকৌশলী আরও বলেন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মনির ও সাধারণ সম্পাদক ওশানের কথা বলে হামলাকারীরা প্রকৌশলীকে ধরে নিয়ে যায়। তাদের ঠিকাদারি কাজের বিল নাকি বাকি রয়েছে। কিন্তু উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবু হানিফ তো বিল দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন না। তারা আমার কাছে আসতে পারতো, অভিযোগ থাকলে বলতে পারতো। কিন্তু তা না করে সরাসরি অফিসে এসে এভাবে হামলা করবে, এটি মেনে নেওয়া যায় না। ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশনা ও আইন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে বাগেরহাট জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সরদার নাহিয়ান আল সুলতান ওশান বলেন, যে প্রকৌশলী অভিযোগ দিয়েছেন তার সাথে আমাদের কিছু লেনদেন ছিল। কয়েকদিন আগে তিনি আমাদের কাছে একটা বড় অংকের টাকা ঘুষ দাবি করেন। আমরা ঘুষ দিতে রাজি না হওয়ায় তিনি আমাদের বিলটি আটকে দিয়েছেন। যদি কোনো ঠিকাদার ঘুষ না দেয়, তাহলে তারা ঠিকাদারের বিল আটকে দেন। এর সঙ্গে নির্বাহী প্রকৌশলীও জড়িত। গতকাল আবু হানিফকে ডেকে শুধু কথা বলা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজনই তাকে নিয়ে গেছে। তাকে মারধর করা হয়নি। জোর করে আনা হয়নি, জোর করে আনলে তিনি তো ৯৯৯ নম্বরে কল করতেন বা পুলিশের সহযোগিতা নিতে পারতেন।

বাগেরহাট জেলা পুলিশের মিডিয়া সেলের সমন্বয়কারী পুলিশ পরিদর্শক বাবুল আক্তার বলেন, প্রকৌশলীকে মারধর করা হয়েছে, এমন একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫১ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২৩
এমজেএফ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।