যশোর: যথাযথ প্রবাহমান ও পানি দূষণ ও নদ ভরাট বন্ধে ভৈরব নদে কোনো ধরনের বর্জ্য না ফেলার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের আবারও নির্দেশনা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান।
নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেন তিনি।
একইসঙ্গে পাউবো কর্তৃপক্ষকে নদের মধ্যে জন্মানো কচুরিপানা অপসারণেরও নির্দেশনা দেন জেলা প্রশাসক।
রোববার (১৬ জুলাই) অনুষ্ঠিত যশোর জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ নির্দেশনা দেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে ম্যাপ অনুযায়ী ভৈরব নদের প্রস্থ শহরে ১৫০ মিটার এবং শহরের বাইরে ৩শ মিটার। কিন্তু ব্রিজ-কালভার্ট করা হয়েছে ১২ থেকে ৭০ মিটার পর্যন্ত। এতে নদীর গতিপথ যেমন পাল্টেছে, তেমনি দখল ও দূষণ হয়েছে সমানতালে। ভৈরব নদ ঘেঁষে গড়ে ওঠা অধিকাংশ বেসরকারি ক্লিনিক-হাসপাতাল, বসতবাড়িগুলো নদকে সরাসরি সেপটিক ট্যাংক হিসেবে ব্যবহার করছে।
এছাড়া নদের সঙ্গে পৌরসভার ড্রেন যুক্ত রয়েছে। ফলে খনন কাজ প্রায় শেষ হলেও ভৈরব নদ দূষণ আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। গতবছর (২০২২) জুলাই মাসে মাসিক উন্নয়ন সভা সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১০৬টি দূষণকারী চিহ্নিত করা হয়। যাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যায় জেলা প্রশাসন। নদ দূষণকারীদের সতর্ক ও সুয়ারেজ লাইন অপসারণ পৌরসভার ড্রেনের মুখ বন্ধ করতে পরিপত্র জারি করে পরিবেশ অধিদপ্তর যশোর জেলা কার্যালয়। তারপরও নদ দূষণ বন্ধ হয়নি।
এ সভা সঞ্চালনা করেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় যশোরের উপপরিচালক রফিকুল হাসান।
সভায় সার বিপণন, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, শিশুদের করোনার টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নসহ জেলার সরকারি ৬১টি সেবা প্রতিষ্ঠানের সার্বিক উন্নয়ন ও কার্যক্রম তুলে ধরা হয়।
সভায় জানানো হয়, টিসিবির কার্ডের নিয়মিত পণ্যগুলোর পাশাপাশি এবার যোগ হচ্ছে চাল। যশোরে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৩৯ কার্ডধারী উপকারভোগী টিসিবির পণ্যের সঙ্গে পাঁচ কেজি করে চাল নিতে পারবেন। ৩০ টাকা কেজিতে পাওয়া যাবে এই চাল। মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) থেকে বাঘারপাড়া ও চৌগাছা উপজেলা থেকে এ কার্যক্রম শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে সব উপজেলায় চলবে ২৬ জুলাই পর্যন্ত।
এছাড়া নির্বিঘ্নে রোগী পরিবহনের জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল ও আশপাশের ক্লিনিকের সামনে যানজটমুক্ত করতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করবে জেলা প্রশাসন। বিভিন্ন বাড়ি ও প্রতিষ্ঠানের পয়ঃনিষ্কাশনের লাইন সরাসরি ভৈরব নদে ফেলার কারণে মাত্রাতিরিক্ত দূষণ হচ্ছে। দূষণ প্রতিরোধে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাবে পরিবেশ অধিদপ্তর।
সভায় যশোর বড় বাজারে মাছ ও মাংসের দোকানের পাশের ড্রেনের পানি অপসারণ, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে যশোরের ছয়টি মহাসড়কের স্পিড ব্রেকার সংস্কার করা, স্পিড ব্রেকারগুলো চিহ্নিতকরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জেলা সমন্বয় কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে সিভিল সার্জন বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস বলেন, ডেঙ্গুতে যশোরের অবস্থা খারাপ হওয়ার শঙ্কা থাকলেও এখনো ভয়াবহ আকার ধারণ করেনি।
এ বিষয়ে যশোর পৌরসভার মেয়র হায়দার গণি খান পলাশ বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশক নিধন, পরিচ্ছন্ন অভিযান ও সচেতনতা কার্যক্রম চলছে এবং জনস্বার্থে তা অব্যহত থাকবে।
সভায় আরও বক্তৃতা করেন জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আছাদুজ্জামান, স্থানীয় সরকার বিভাগ যশোরের উপপরিচালক রফিকুল হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফিরোজ কবির, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মাসুদ উল আলম, মণিরামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানম, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনুপ দাশ, যশোর পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কেএম আবু নওশাদ, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মঞ্জুরুল হক, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ, বিআরটিএর সহকারী পরিচালক এসএম মাহফুজুর রহমান, জেলা মৎস্য অফিসার ফিরোজ আহাম্মেদ, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিত্যানন্দ কুণ্ডু, পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুর আলম, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক আনিছুর রহমান, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক বিল্লাল বিন কাশেম, সাংবাদিক ফারাজি আহমেদ সাঈদ বুলবুল প্রমুখ।
সভায় সমাপনী বক্তব্যে জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, তিন বছরের অধিক সময় তিনি যশোরে দায়িত্ব পালন করেছেন। সবার সহযোগিতায় জেলার উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়েছে। বদলিজনিত কারণে তাকে যশোর থেকে চলে যেতে হবে। কর্মজীবনে যশোরকে তিনি বিশেষভাবে মনে রাখবেন। জেলা প্রশাসক হিসেবে এ সভা ছিল মো. তমিজুল ইসলাম খানের শেষ সমন্বয় সভা। এ কারণে সভার শেষের দিকে আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০২৩
ইউজি/এএটি