ঢাকা: গাজীপুরে শ্রমিকনেতা শহিদুল ইসলাম হত্যার সঠিক তদন্তের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশন।
মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আয়োজিত শোক ও স্মরণ সভায় এই দাবি জানানো হয়।
বিদেশি দাতা সংস্থা ও শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিসহ দেশের প্রায় ৫০টি শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা এতে উপস্থিত ছিলেন। সভা পরিচালনা করেন রাজু আহমেদ।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি কল্পনা আক্তার বলেন, শহিদুল হত্যার মামলা তদন্ত অবস্থায় আছে। যখন দেখব মামলা সঠিকভাবে এগোচ্ছে না, তখনই মাঠে নামব। সরকার হোক, মালিক হোক বা শ্রমিক সংগঠন হোক- সবাইকে বলছি আমরা শ্রমিকদের সঙ্গে মাঠে আন্দোলন করা মানুষ। এখন পর্যন্ত আমরা সেমিনারে কথা বলছি, মেইল করছি- এর মানে এই না যে আমরা মাঠে নামবো না।
তিনি বলেন, সরকারের গোয়েন্দা বিভাগের যারা আছেন আপনারা মেসেজ নিয়ে যান। যদি সঠিক তদন্ত না হয়, শহীদুল হত্যাকাণ্ডের বিচার না হয়, আন্দোলনের মাধ্যমে যেভাবে তদন্ত সঠিক পথে নিতে হয়, আমরা সেভাবে নেব।
শ্রমিকনেতা আবুল হোসাইন বলেন, শ্রমিক আন্দোলনের নামে আশুলিয়া ও গাজীপুরে আগাছা জন্মেছে। এগুলো নির্মূল করতে হবে। এগুলো নির্মূল না করলে শ্রমিক আন্দোলনের ক্ষতি হবে। তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের জন্য মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপ থেকে ভিন্ন দাবি দেওয়া হয়েছে, এতে মালিকরা লাভবান হবেন। আসুন একটি ঐক্যবদ্ধ দাবি তুলি।
তিনি বলেন, শহিদুল হত্যা মামলার সঠিক তদন্ত করে অপরাধীকে খুঁজে বের করতে হবে। বিচার করতে হবে। যাতে আবারও কোনো শ্রমিকনেতা হত্যার মতো ঘটনা না ঘটে।
অ্যাডভোকেট নাসিম বলেন, শহিদুল ইসলামসহ সবাই একসঙ্গে কাজ করেছি। তিনি শ্রম আইনের ধারা নিয়ে কথা বলতেন, কাজ করতেন। এই গুণটা তাকে একজন ভালো সংগঠকে পরিণত করেছিল। এই হত্যা একটি মেসেজ দিয়ে গেল, শ্রমিক আন্দোলনে নিয়মতান্ত্রিকভাবে কাজ করা সম্ভব না। গত ৪০ বছরে এ শিল্প শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ সৃষ্টির জন্য যোগ্য হয়ে ওঠেনি। শহিদুলের জীবন দান যেন বৃথা না যায়। শ্রমিক আন্দোলন যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে তার জীবন দেওয়া সার্থক হবে না।
সালাহ উদ্দিন স্বপন বলেন, শহিদুল একজন বিনয়ী মানুষ ছিলেন। একজন দক্ষ সংগঠক ছিলেন। রানা প্লাজা ধসে শ্রমিক হত্যার সঙ্গে এই হত্যার মিল আছে। যদি ট্রেড ইউনিয়ন থাকত, তাহলে সেদিন এত শ্রমিক মারা যেতেন না, জোর করে তারা কারখানায় কাজ করাতে পারত না, শ্রমিকরা হত্যার শিকার হতেন না।
তিনি বলেন, শহিদুল হত্যার সঙ্গে তৈরি পোশাক কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন না থাকার সম্পর্ক আছে। টঙ্গীতে যে কারখানায় শ্রমিকরা শহিদুলকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন, ওই কারখানায় যদি ট্রেড ইউনিয়ন থাকত, তাহলে শ্রমিকরাই নিজেদের সমস্যার সমাধান করতে পারতেন। শহিদুলকে ডাকতেন না, আর শহিদুল হত্যার শিকার হতে হতেন না।
কামরুল আনাম বলেন, সেদিন যদি শহিদুল কারখানায় না যেতেন, তাহলে তাকে জীবন দিতে হতো না। এ হত্যাকাণ্ডে মালিকের দায় আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে। শহিদুলের পরিবারের সহায়তার জন্য সংশ্লিষ্ট জায়গায়গুলোতে আবেদন করতে হবে। আবেদন না করলে সহায়তা পাওয়া যাবে না। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরেও আবেদন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর কাছেও চিঠি দিতে হবে।
সভায় বলা হয়, এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৪৮ জন শ্রমিককে জীবন দিতে হয়েছে। লাশের ওপর দিয়ে অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করা হচ্ছে। কিন্তু শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২৩
জেডএ/আরএইচ