সাভার (ঢাকা): আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা করার পর সমঝোতায় এসে সেই মামলা ‘তুলে নিতে’ চায় বাদী পক্ষের লোকজন। তবে এই মামলা তুলে নেওয়া বা আপস করার ক্ষেত্রে বাধ সেধেছেন সাভার মডেল থানার পুলিশের এক কর্মকর্তা।
মামলা তুলে নিতে সহায়তার জন্য দুই লাখ টাকা দিতে হবে সেই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে। এমনই অভিযোগ তুলেছেন মামলার বাদী ও বিবাদী পক্ষের লোকজন।
গত বুধবার (১৯ জুলাই) বিকেল ৪টায় সাভার আড়াপাড়া কামাল রোডে শাহজাহানের বাড়িতে ভুক্তভোগীর ভাড়া বাসায় গিয়ে টাকা চেয়ে হুমকি দেন সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শহিদুল ইসলাম ও তার সহযোগী পুলিশ সদস্যরা। পরে বৃহস্পতিবার বিকেলে ভুক্তভোগীরা এ তথ্য জানান।
এর আগে, গত ২০২২ সালের ৮ নভেম্বর সাভারের বিনোদবাইদ ভাড়া বাসায় নিজ কক্ষে আত্মহত্যা করেন সীমা বেগম। পরে ৯ নভেম্বর তার ভাই সুমন মিয়া সাভার মডেল থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার একটি মামলা দায়ের করেন।
সেই মামলায় প্রধান আসামি সৌদি প্রবাসী সীমার স্বামী রবিউল ইসলাম। এছাড়া বাকি আসামিরা হলেন রবিউলের দ্বিতীয় স্ত্রী রুবি, রবিউলের মা সজিনা বেগম, রবিউলের দুই বোন জুলেখা বেগম ও শিখা।
নিহত সীমার মেয়ে সাথী বাংলানিউজকে বলেন, পুলিশ আমাদের বাসায় সেই মামলার বিষয়ে পাঁচবার এসেছিল। বাসায় এসে শুধু টাকার কথা বলে। পুলিশ বলে মামলা তুলে নিতে হলে দুই লাখ টাকা লাগবে। বিষয়টি নিয়ে আমি আমার স্বামীকে বলেছি দেখে পুলিশ আমাকে অনেক ধমকিয়েছে। আর বলছে, এই দুই লাখ টাকার কথা যদি কেউ জানে বিপদ হয়ে যাবে, সমস্যা হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, টাকা না দিয়ে মামলা যদি না উঠানো হয়, তবে বড় কিছু হয়ে যাবে। ফাঁসি হয়ে যাবে। শহিদুল নামের পুলিশ এসব বলছেন। আজও তিনি বাসায় এসেছিলেন। এসে বলেন, যদি টাকা দাও মামলা উঠবে, আর যদি টাকা না দাও মামলা উঠবে না। আমার দাদি এখনও মামলায় হাজিরা দেন। তাকে গ্রেফতারও করা হয়েছিল, তিনি এখন জামিনে আছেন।
সীমা বেগমের ভাই ও মামলার বাদী মো. সুমন মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, গত বছর নভেম্বরের ৮ তারিখে আমার বোন আত্মহত্যা করেন। পরে আমি সেই সময় একটি হত্যা মামলা করেছিলাম। মাস দুই এক আগে পুলিশ খবর নিতে এসেছিল। তখনই আমার বোনের মেয়ে বলেছে মামলা উঠিয়ে ফেলব। তখন দারোগা বলেছিলেন যে, দুই লাখ টাকা দিলে মামলা এখনই উঠিয়ে দেব। আমরা মামলা তুলে ফেলতেই চাই। কিন্তু শহিদুল পুলিশ এখন টাকা চায়।
এ বিষয়ে মামলার তিন নম্বর আসামি সীমা বেগমের শাশুড়ি সজিনা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, আমি এ মামলার ঘটনায় জামিনে আছি। আমার নাতিনের বাসায় দুই দিন পরপরই আসে এসআই। কালকেও এসেছিলেন। এসআই বাসা থেকে রাগারাগি করে গেছেন। আবার আসবেন বলেছেন।
তিনি বলেন, এমনিতে আমার আমরা অভাবী মানুষ। আমার নাতিও ছোট মানুষ। এর মধ্যে পুলিশ এসে অত্যাচার করছে। ঘটনার সময় একটি মামলা করে ফেলেছে, এখন তারাই মীমাংসা করছে। এটা নিয়ে পুলিশ ঝামেলা করছে।
টাকা চাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে, এই মামলা তো অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে।
আপনি সীমা বেগমের মেয়ে সাথীদের বাসায় গিয়েছিলেন কেন? এমন প্রশ্নের তিনি উত্তর না দিয়ে তিনি ফোন কেটে দেন। এরপর কয়েকবার ফোন দেওয়া হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) তার সঙ্গে এক কথোপকথনে সাথীদের বাড়িতে যাওয়ার কথা স্বীকার করেন এসআই শহিদুল ইসলাম।
সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দীপক চন্দ্র বাংলানিউজকে বলেন, যদি আমার কাছে এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ দেন অবশ্যই কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আমরা ব্যবস্থা নেব।
এ বিষয়ে ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) আব্দুল্লাহ হেল কাফি বাংলানিউজকে বলেন, আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নই। আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। বিষয়টি সম্পর্কে জেনে পরে জানাতে পারব।
বিষয়টি নিয়ে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আসাদুজ্জামানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা যায়নি। পরে ক্ষুদে বার্তা দিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে তাকে অবগত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৭ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০২৩
এসএফ/এসআইএ