ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বাগেরহাটে মাটির পরিবর্তে বালু দেওয়া সেই বাঁধে ধস!

এস এস শোহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০২৩
বাগেরহাটে মাটির পরিবর্তে বালু দেওয়া সেই বাঁধে ধস! ধসে যাওয়া বাঁধ

বাগেরহাট: বাগেরহাট সদর উপজেলায় ভৈরব নদের তীরে মাটির পরিবর্তে বালু দিয়ে নির্মাণ করা বাঁধে ছয় মাসের মধ্যে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বালু দেওয়ার অভিযোগ করে এর স্থায়িত্ব নিয়ে আগেই প্রশ্ন তুলেছিলেন স্থানীয়রা।

 

মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) রাতে বাঁধের সদর উপজেলার মুনিগঞ্জ সেতুর নিচে একটি অংশ দেবে যায়। বাঁধের ওই অংশের ওপর দিয়ে স্থানীয়দের যাতায়াতের রাস্তা রয়েছে। ভাঙনে একটি অংশ দেবে যাওয়াতে গোটাপাড়া ইউনিয়নের গোপালকাঠী গ্রামের প্রায় সহস্রাধিক মানুষের যাতায়াতের একমাত্র পথ চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ে।

নাজিরপুর উপ-প্রকল্পের অধীনে ছয় মাস আগে সংস্কার করা বাঁধে ভাঙনের বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, বাঁধের নিচ দিয়ে অবৈধভাবে তৈরি কালভার্টের জন্যই ওই ভাঙন দেখা দিয়েছে।  
গত অর্থ বছরে নব্বই লাখ টাকা ব্যয়ে বাঁধটি সংস্কারের কাজ করে পাউবো। তবে তখন স্থানীয় একটি ইটভাটা অবৈধ কালভার্টটি অপসারণ করেনি। বর্ষা শুরুর পর এখান থেকে পানির চাপে বাঁধে ভাঙন দেখা দিলে প্রথমে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করে পাউবো। পাশাপাশি ভাটা মালিককে কালভার্ট অপসারণে চিঠি দেওয়া হয় বলে জানায় তারা।

বুধবার সকালে ভাঙন এলাকা পরিদর্শনে যান বাগেরহাট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার নাসির উদ্দিন। এ সময় বাঁধে ধসের জন্য স্থানীয়রা বাঁধ তৈরিতে বালু ব্যবহার, অবৈধ কালভার্ট নির্মাণ এবং বাঁধের গোড়া দিয়ে নদীর চরের মাটি কেটে ইটভাটায় নেওয়ার অভিযোগ করেন।

স্থানীয় গোপালকাঠি গ্রামের জিল্লাল শেখ বলেন, প্রায় দুই দশক আগে ওই বাঁধের পাশে এমবিএ নামে একটি ইটভাটা গড়ে ওঠে। ইটভাটা মালিক মিজানুর রহমান মনি নদীর তীর থেকে অবৈধভাবে মাটি তুলে নিয়ে ইটভাটায় ব্যবহার করেন। ক’দিন আগেও পাশ দিয়ে মাটি কেটে নেওয়ার বাঁধের আর একটি অংশও ধসে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

গোটাপাড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. শাহ আলম বিপ্লব বলেন, সরকারি বেড়িবাঁধ অবৈধভাবে কেটে ভাটা মালিক কালভার্টটি নির্মাণ করেছেন। এই কালভার্ট নির্মাণের কারণে এই বাঁধটি ভেঙে গেছে। তিনি অবৈধভাবে কেশবপুর নদের মাটি কেটে নিয়ে ইট তৈরি করেন। অবৈধভাবে সরকারি জায়গার মাটি কাটার অভিযোগে কিছুদিন আগে তাকে প্রশাসন এক লাখ জরিমানা করে। তারপরও তার মাটি কাটা থেমে নেই।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ইটভাটা মালিক মিজানুর রহমান মনি বলেন, এই কালভার্টটি ১৩ থেকে ১৪ বছর আগের নির্মাণ করা। সম্প্রতি এই বেড়িবাঁধের সংস্কার কাজ করা হয়। ওই সংস্কার কাজে বাঁধের পাশ দিয়ে মাটি কেটে দেওয়া হয়েছে। মাটি কাটার কারণে ধীরে ধীরে তা ভেঙে গেছে।

নদী থেকে মাটি কাটার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমি নদী থেকে মাটি কাটি না। আমি দূরের পতিত জমি দিয়ে মাটি কিনে এনে ইট তৈরি করি।

সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সরদার নাসির উদ্দিন বলেন, ওই কালভার্ট দিয়ে একটি মাছের ঘেরের পানি ওঠানামা করে। ওই পানির চাপে ধীরে ধীরে বাঁধটি দুর্বল হয়ে ভেঙে গেছে। সকালে এসে ওই পরিস্থিতি দেখে কালভার্টটি অপসারণ শুরু করা হয়েছে।

স্থানীয়দের চলাচলের সুবিধার্থে উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে সম্প্রতি এই বাঁধে ইটের সলিং দেওয়া হয়। ইটভাটা মালিকের অবৈধভাবে মাটি কাটার কারণে সেই রাস্তার বেশ কয়েকটি স্থান ভেঙে গেছে। তার ব্যক্তিগত ব্যবসার কারণে এই বড় একটি জনগোষ্ঠীর সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

জানতে চাইলে পাউবো বাগেরহাট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, এটি আসলে দীর্ঘদিনের একটি পুরানো বাঁধ। আমরা সম্প্রতি এটি সংস্কার করেছি। বাঁধ মাটি দিয়েই সংস্কার করা হয়েছে। কোথাও কোথাও মাটির তীব্র সংকট থাকায় সেখানে আমরা কিছুটা বালু ব্যবহার করেছি। বাঁধের গোপালকাঠী অংশে অবৈধভাবে একটি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়। এ বিষয়ে আমরা অবগত ছিলাম না। ওই কালভার্টের কারণে বাঁধে ভাঙন দেখা দেয়। নিজ উদ্যোগে কালভার্টটি অপসারণের জন্য আমরা তাকে চিঠিও দিয়েছি। অপসারণের পর দ্রুত আমরা বাঁধটি মেরামত করে দেব।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।