ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘আমার মনা কত ভালো ছিল, তারে সুপারি চোর বানায়ে মারলো ওরা’

হারুন-অর-রশীদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১, ২০২৩
‘আমার মনা কত ভালো ছিল, তারে সুপারি চোর বানায়ে মারলো ওরা’ ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা পরিবার। ইনসেটে রাজন বেপারী

ফরিদপুর: জেলায় গাছ থেকে সুপারি চুরির অপবাদ দিয়ে রাজন বেপারী (১৮) নামের এক যুবককে পেটান স্থানীয় বাসিন্দা সরোয়ার মিয়া। অপবাদ সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন ওই যুবক।

 

শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় নিজ ঘর আড়ার সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন রাজন। রাতে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

রাজন গত বছর আলহাজ্ব আব্দুল খালেক ডিগ্রি কলেজ থেকে এসএসসি পাশ করেছিলেন। পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে মৌসুমি ব্যবসা করতেন তিনি।

স্থানীয়রা জানায়, গত ২৭ সেপ্টেম্বর  দুপুরে বাখুন্ডা গ্রামের দিদার মিয়ার সুপারি গাছ থেকে এক থোকা সুপারি পাড়েন রাজন। ওই সময় সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন ওই এলাকার সরোয়ার মিয়া। সরোয়ার মিয়া সুপারি চুরির অপবাদ দিয়ে রাজনকে মারধর করেন।

ঘটনার পর থেকে কথা বলা কমিয়ে দেন রাজন। ঘর থেকেও বের হননি কয়েকদিন। এরপর শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকালে মায়ের সঙ্গে ভাত খায় রাজন। এদিন সন্ধ্যার দিকে আত্মহত্যা করেন তিনি।  

এদিকে একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা সুফিয়া ও বাবা মান্নান মিয়া। তাদের আহাজারিতে আশপাশের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন সুফিয়া বেগম।  

জ্ঞান ফিরলে তিনি শুধু বলছেন, আমি কি নিয়ে বাঁচব। আমার একমাত্র ছেলেকে ছাড়া আমি বাঁচতে চাই না। ও কেমনে এমন করল? আমার মনা আমারে বলল, মা আমাকে খেতে দাও। খাওয়ার সময় বলল আরও ভাত দেও। খাওয়ার পর আর মনার সঙ্গে আমার কথা হয় নাই। আমার মনারে আনে দেও। আমার মনা কত ভালো ছিল, তারে সুপারি চোর বানায়ে মারলো ওরা, এটা সহ্য করতে পারেনি আমার মনা, তাই চলে গেল।

রাজনের বাবা ভ্যানচালক মান্নান বেপারী বলেন, আমার পোলাডারে মিথ্যা চুরির অপবাদ দিয়ে মারপিট করেছে সরোয়ার। আমার মনা এই অপবাদ সহ্য করতে না পেরে অনেক দূরে চলে গেল। অনেক মারছে আমার মনারে। ভয়ে আমাদের কারো কাছেই একথা বলে নাই। নিজে নিজেই বুকের মধ্যে কষ্ট চেপে রেখে চলে গেল। আমরা কাকে নিয়ে বাঁচব?

রাজনের চাচি সাবিনা বেগম বলেন, আমার মনারে যখন সরোয়ার মারতেছে, এমন খবর পেয়ে আমি দ্রুত ওইখানে যাই। কিন্তু ওইখানে গিয়ে মনারে আর পাই নাই। পরে বাড়ি চলে আসি। রাতে ওর কাছে শুনি কি হইছে, কিছু বলে না। পরদিন সকালে আমারে বলে, চাচি আমারে খুব মারছে সরোয়ার ভাই। আমার কানে মারছে আমি কানে কিছু শুনতে পারতাছি না। শরীরেও অনেক ব্যথা। আমার মনা এই চুরির অপবাদ দিয়ে মারপিট সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে। সরোয়ারের জন্য আমার মনি আত্মহত্যা করেছে। সরোয়ারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।

ফরিদপুর কোতয়ালী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল খায়ের শেখ জানান, রাজনের মৃত্যুর বিষয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে ফরিদপুর সদর উপজেলার বাখুন্ডা গ্রামের বাসিন্দা সরোয়ার মিয়াকে এলাকায় গিয়ে পাওয়া যায়নি। এবিষয়ে তার বক্তব্য জানতে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১, ২০২৩
এসএএইচ/এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।