সিরাজগঞ্জ: মেয়েকে বিয়ে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শ্বশুরবাড়িতে পাঠানোর দেড় বছর পর জামাতার নামে ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেছেন শাশুড়ি।
অভিযুক্তের নাম মামুন নবী।
মামলার বাদী তথা মামুনের শাশুড়ির নাম আশা খাতুন। তার বাড়ি কান্দাপাড়া গ্রামে। গত ২৭ জুলাই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল-১ আদালতে মামুনকে আসামি করে মামলা করেন তিনি।
মামলাটি নিয়ে গত দীর্ঘ সময় ধরে এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
জামাতাকে ফাঁসাতে এমন মামলা দায়ের হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ও তার স্বজনেরা।
বুধবার (১২ অক্টোবর) সরেজমিনে ভুক্তভোগী ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়,
২০২০ সালের ৩ জুলাই স্বজনদের নিয়ে কান্দাপাড়া গ্রামে গিয়ে ছেলের জন্য আল-আমিন মণ্ডলের মেয়েকে পছন্দ করেন আবু মুছা। উভয়পক্ষের পছন্দ হওয়ায় ওইদিনই কালেমা পড়ানো হয় এবং বছর
খানেক পর আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ২০২২ সালের ১৪ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে কনেকে ঘরে তুলতে গিয়ে দেখেন কনে নাবালিকা। এ অবস্থায় কাজী সাহেব বিয়ে পড়াতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
যেহেতু দেড় বছর আগে কলেমা পড়ানো হয়েছে, সেহেতু নাবালিকা হলেও সাত লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করে কনেকে ঘরে তুলে নেন মামুন। বেশ কিছুদিন সংসার করার পর ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি কনেকে নিজ বাড়িতে নিয়ে যান বাবা আল-আমিন মন্ডল। এরপর আর মামুনের সংসারে ফেরেনি ওই কিশোরীবধূ। অনেক চেষ্টা করেও গৃহবধূকে বাড়িতে আনতে না পেরে মামুন গত ৬ জুন ডিভোর্স লেটার পাঠায়। ডিভোর্স লেটার পাওয়ার কয়েকদিন পর কনের মা আশা খাতুন মামুন নবীকে আসামি করে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন।
এদিকে মামুনের বাবা আবু মুছা খানের অভিযোগ, তার ছেলের বউ অন্য একজনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টার ঘরের দরজা বন্ধ করে সেই ছেলের সঙ্গে কথা বলে। ওই প্রেমের বিষয়টি গোপন করতে নাবালিকা হওয়া সত্ত্বেও মামুনের সঙ্গে বিয়ে দেন তারা। এসব বিষয়ে কয়েকবার সালিশ বসানো হলেও মেয়েপক্ষ তা মেনে নেয়নি।
মামুন নবী বলেন, মেয়ের বয়স লুকিয়ে আমার সঙ্গে প্রথমে কলমা পড়ানো হয়। এরপর যখন তুলে আনতে যাই তখন বিষয়টি জানতে পারি। তার বয়স ১৮ না হওয়ায় কাবিননামাও হয়নি।
কনের বাবা আল-আমিন বলেন, আমার মেয়েকে প্রাইভেট পড়ানোর এক পর্যায়ে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে মামুন।
মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার বড় ভাই সালাম মেম্বার বলবে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম মণ্ডল উত্তেজিত হয়ে বলেন, ঘরের খবর নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন কেন? কোনো বিয়ে-টিয়ে হয়নি। আদালতে মামলা চলছে মামলায় যেটা হয় হবে।
কাজী ইয়ামিন বলেন, মামুনের সঙ্গে ওই মেয়ের বিয়ে পড়ানোর জন্য আমাকে ডাকা হয়েছিল। মেয়ের বয়স কম হওয়ায় কাবিন হয়নি। পরে শুনেছি ওরা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে সংসার করেছে।
কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সাইফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি মীমাংসার জন্য প্রায় এক মাস আগে আমরা মুরব্বিদের নিয়ে বসেছিলাম। বিয়ের সময় মেয়ের পরিবার ছেলেকে তিন লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়েছিল। বিয়ের দেনমোহর ছিল ৭ লাখ টাকা। এজন্য আমরা ছেলেপক্ষকে ৭ লাখ টাকা দিতে বলেছিলাম। কিন্তু মেয়েপক্ষ সেটা মানেনি। লোকমুখে শুনেছি তারা নাকি ওই ছেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করেছে।
স্থানীয় মসজিদের ইমাম হাসান আলী বলেন, উভয় পরিবারের সম্মতিতেই বিয়ে ঠিক হয়। সেই বিয়ের কালেমা আমি পড়িয়েছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০২৩
পিএম/এসএএইচ