সিরাজগঞ্জ: অনেক টাকা-পয়সার মালিক হলেও ঘরবাড়ি ছিল না চিরকুমার আফাজউদ্দিন হুদার (৬৬)। স্কুলকক্ষে একাই থাকতেন তিনি।
আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ কথা স্বীকার করেন গ্রেপ্তার তিন আসামি।
বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এভাবেই আফাজউদ্দিন হুদা হত্যা রহস্যের বর্ণনা দেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আসামিরা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত আরও একজন পলাতক রয়েছে তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
নিহত আফাজউদ্দিন সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার প্রত্যন্ত মনছুর নগর ইউনিয়নের পূর্ব মাজনাবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা।
এ হত্যায় জড়িত গ্রেপ্তার তিনজন হলেন - পূর্ব মাজনাবাড়ী গ্রামের আয়নাল শেখের ছেলে মো. বিপুল মিয়া ওরফে বিপ্লব (২১), একই গ্রামের মো.আল মাহমুদের ছেলে মো. শাহিন মিয়া (১৯) ও জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলার মালিপাড়া গ্রামের লিটন মন্ডলের ছেলে মো. মোমিনুল ইসলাম মোমিন (২৩)।
ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে পিবিআই পুলিশ সুপার বলেন, ২০২৩ সালের ৭ এপ্রিল রমজান মাসে ইফতার শেষে পূর্ব মাজনাবাড়ি নতুন বাজারে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হন আফাজউদ্দিন। রাত গভীর হলেও তিনি ফিরে না আসায় ভাই, ভাতিজা ও স্বজনেরা তার খোঁজে নামেন। একপর্যায়ে দুদিন পর ৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় ভুট্টা ক্ষেতের মধ্যে আফাজের মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন তারা। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়।
এ ঘটনায় নিহতের ভাতিজা ওয়াজেদ আলী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কাজিপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ মামলাটি তদন্তকালে সন্দেহভাজন তিনজনকে আটক করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
এ অবস্থায় ১৭ জুলাই পিবিআই মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে।
পুলিশ সুপার বলেন, তদন্তকালে গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সাহায্যে গত রোববার (২২ অক্টোবর) বগুড়া জেলার শেরপুর থানা এলাকা থেকে সন্দেহভাজন বিপুল মিয়া ওরফে বিপ্লবকে গ্রেপ্তার করে। এর পরদিন সোমবার (২৩ অক্টোবর) নিজ নিজ বাড়ি থেকে শাহিন মিয়া ও মোমিনুল ইসলাম মোমিনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি বলেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, লেখাপড়া জানা আফাজ উদ্দিন হুদা অবিবাহিত ছিলেন। তার নির্দিষ্ট কোনো থাকার জায়গা ছিল না। অধিকাংশ সময় বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুলের একটি কক্ষে বসবাস করতেন এবং নিজেই রান্না করে খেতেন। সুদ ব্যবসা করতেন আফাজ। স্থানীয় নতুন বাজার নামক স্থানে বসে নিয়মিত সুদের টাকা আদায় করতেন। সুদের টাকার হিসেব রাখার জন্য সার্বক্ষণিক একটি ডায়েরি সংরক্ষণ করতেন আফাজ। তার কাছে সবসময় ২/৩ লাখ টাকা থাকতো বলে এলাকার লোকজন জানতেন। ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকায় আফাজ উদ্দিন মাঝেমধ্যে আসামি বিপুলদের বাড়িতে যাতায়াত করতেন ও তার কক্ষে বসে টাকার হিসেব করতেন।
এরই একপর্যায়ে বিপুল টাকার লোভে পড়ে যায় এবং অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে যোগসাজশে তাকে হত্যা করে টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা মোতাবেক ৭ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে আফাজ উদ্দিনের ফেরার রাস্তায় অপেক্ষা করতে থাকেন তারা। রাত সাড়ে ১১টার দিকে আফাজ উদ্দিন ওই রাস্তায় এলে আসামিরা তার পথরোধ করে এবং অতর্কিতভাবে বেয়ারিং সংযুক্ত কাঠের লাঠি দিয়ে
মাথায় একাধিকবার আঘাত করে।
এসপি মো. রেজাউল করিম জানান, আঘাতের ফলে তিনি নিস্তেজ হয়ে মাটিতে পড়লে শ্বাসরোধ করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। পরে মরদেহ গোপন করতে একটি ভুট্টা ক্ষেতের মধ্যে ফেলে রাখা হয়। আফাজ উদ্দিনের কাছে থাকা নগদ ৮৮ হাজার টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়ে পালিয়ে যায় আসামিরা।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে আসামিরা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত আরও একজন পলাতক রয়েছে তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০২৩
এসএএইচ