খুলনা: দেশের সামুদ্রিক শুঁটকি উৎপাদনের অন্যতম স্থান হচ্ছে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোল রেঞ্জের দুবলার চর। এ চরে পাঁচ মাসের শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণ মৌসুম শুরু হয়েছে।
দুবলায় পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে জেলেদের এক গ্রুপ চরে ঘর বাঁধতে শুরু করেছেন। আর অপর গ্রুপ সাগরে মাছ ধরতে নেমে পড়েছেন। জেলেদের ফেলা জালের প্রথম খেপের মাছও চলে এসেছে চরে। সেগুলো বেছে চরে শুকাতেও দিয়েছেন জেলেরা। দুবলার চরে লইট্টা, ছুরি, চিংড়ি, লাক্ষা, জাবা, পোয়া মাছ থেকে তৈরি করা হয় শুঁটকি।
এর আগে উপকূলের জেলেরা শুঁটকি মৌসুমকে ঘিরে নিজ নিজ এলাকায় তাদের জাল, নৌকা মেরামত ও সব সরঞ্জামাদি প্রস্তুত করেন। এরপর বিভিন্ন এলাকার জেলেরা দুবলার উদ্দেশে জড়ো হন মোংলায়।
সুন্দরবনের পূর্ব বনবিভাগ জানায়, এবারের শুঁটকি মৌসুমকে ঘিরে উপকূলের বিভিন্ন এলাকার প্রায় ১০ হাজার জেলে সমবেত হবেন দুবলার চরে। দুবলার চরের ওইসব জেলেরা প্রায় দেড় হাজার ট্রলার নিয়ে মাছ ধরবেন গভীর সাগরে। সাগর থেকে আহরিত বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বাছাই করে শুঁটকি করবেন তারা। এরপর সেই শুঁটকি বিভিন্ন মোকামে চালান করবেন তারা। এ বছর চরে জেলেদের থাকা ও শুঁটকি সংরক্ষণের জন্য এক হাজার ১০৮টি জেলে ঘর ও ৭৮টি ডিপো স্থাপনের অনুমতি দিয়েছেন বনবিভাগ। গত শুঁটকির মৌসুমে দুবলার চর থেকে বনবিভাগের রাজস্ব আদায় হয়েছিল ছয় কোটি টাকা। এবার তার টার্গেট ধরা হয়েছে সাত কোটি টাকা।
সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (সদর) রানা দেব জানান, দুবলার চরে ৩ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া শুঁটকি মৌসুম চলবে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত। টানা পাঁচ মাস ধরে সেখানকার চরে থাকতে হবে হাজার হাজার জেলেদের।
তিনি জানান, সুন্দরবনের আলোরকোল, মাঝেরকেল্লা, নারিকেলবাড়িয়া, শেলারচরে চারটি কেন্দ্র, ১৬ জন বহদ্দার, ডিপো ঘর ৬৪টি, জেলে ঘর এক হাজার ৩৫টি, দোকানঘর ৯৬টি, চারটি ভাসমান দোকানঘরের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
আলোরকোল অস্থায়ী ক্যাম্প ও দুবলা জেলেপল্লি টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দীলিপ মজুমদার জানান, আসা জেলেরা চরে ঘর বাঁধতে শুরু করেছেন। জেলেদের এ থাকার ঘর বাঁধতে সময় লাগবে দুই থেকে তিনদিন। এদিকে চরে এসেই ঘর, মাচা ও চাতাল তৈরিসহ অন্যান্য জিনিসপত্র নামিয়ে রেখে জাল ও নৌকা নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে নেমেছেন জেলেরা। জালের প্রথম খেপের মাছও চলে এসেছে চরে। চরে সেই মাছ বাছাই করে শুকাতেও দিয়েছেন জেলেরা।
উল্লেখ্য, দুবলার চরে মাছ ধরার সঙ্গে চলে শুঁটকি শুকানোর কাজ। দুবলার চরে গেলে দেখতে পাবেন শুঁটকিপল্লি ও কীভাবে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করা হয়। এখানে গেলে দেখা যাবে হরেক রকমের শুঁটকির পসরা সাজিয়ে বসে আছে দোকানদাররা। দুবলার চরের শুঁটকি দামেও তুলনামূলক সস্তা আবার সেরাও বটে। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা মাথা নিয়েই পরিবার-পরিজন রেখে পাঁচ মাস ধরে দুবলার চরে শুঁটকি তৈরিতে ব্যস্ত থাকবেন হাজার হাজার জেলে। আর মৌসুম শেষেই লাভ-লোকসানের হিসাব কশেই ফের বাড়িতে ফিরবেন এসব জেলে-মহাজনরা।
এ চরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের রাসমেলা ও পূণ্যস্নানের জন্যও দ্বীপটি বিখ্যাত। প্রতিবছর কার্তিক মাসে সেখানে রাসমেলা অনুষ্ঠিত হয়। ২০০ বছর ধরে এ রাসমেলা চলছে। প্রতিবছর অসংখ্য পুণ্যার্থী রাসপূর্ণিমা উপলক্ষে ভিড়েন এ দ্বীপে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০২৩
এমআরএম/আরবি