ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
বিভাগ অফিসে পরামর্শের জন্য গেলে অধ্যাপক নুরুল ইসলাম ওই শিক্ষার্থীকে নিজ কক্ষে ডেকে নেন।
মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগপত্রে এসব কথা উল্লেখ করেছেন তিনি।
অধ্যাপক নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে নারী শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ নতুন নয়। তার বিরুদ্ধে ক্লাসে নারী শিক্ষার্থীদের দৈহিক সৌন্দর্য, দৈহিক গঠন, ছাত্রীদের দেহের বিভিন্ন অঙ্গের বিষয়ে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি ও মন্তব্য করার অভিযোগ রয়েছে। কোনো শিক্ষার্থী এর প্রতিবাদ করলে তার সমর্থক শিক্ষকসহ নম্বর কমিয়ে দেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে।
এছাড়াও আপত্তিকর প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ইনস্টিটিউটের নারী শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, 'গত ১১ নভেম্বর হলের বিষয়ে পরামর্শ নিতে আমি এক শিক্ষকের কাছে যাই। ওনাকে না পেয়ে আমি হল অফিসের সামনে অপেক্ষা করছিলাম। এ সময় অধ্যাপক নুরুল ইসলাম স্যার নিজ থেকে আমাকে তার কক্ষে ডেকে নেন। আমি নবাগত শিক্ষার্থী বলে ওনার ব্যপারে তেমন কিছুই জানতাম না। প্রয়োজনীয় দুই-একটি কথা বলার পর উনি অপ্রাসঙ্গিক কথা বলতে শুরু করেন। আমার বাবা মৃত জানার পর উনি আমাকে নানারকম সাহায্যের প্রলোভন দেখান এবং বলেন, আমি যেন তার সাথে দেখা করি, বই নেই এবং তার সাহায্যের বিষয়ে কাউকে না বলি। তিনি আমার ফোন নম্বর নেন এবং একপ্রকার জোর করেই আমার মেসেঞ্জারে যুক্ত হন। ’
‘তার কথার ধরন ও অঙ্গভঙ্গি আপত্তিকর মনে হলে আমি তৎক্ষণাৎ উঠে দাঁড়াই। তখন তিনিও চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে আমাকে যৌন নিপীড়ন করেন। তিনি বারবার বলতে থাকেন—তোমাকে আমার ভালো লেগেছে। তিনি আমার আপত্তিকর স্থানে স্পর্শ করেন। ’
ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, 'আকস্মিকতায় কিছু বুঝে উঠতে না পেরে আমি ভয়ে তার রুম থেকে দৌড়ে পালিয়ে যাই। আমি বের হওয়ার সময় ১৫ এবং ১২ ব্যাচের কয়েকজন শিক্ষার্থীও বিষয়টি দেখেছেন। আমি এতটাই ভয় পাই যে, মেসে ফিরে যাওয়ার শক্তি পাচ্ছিলাম না। তাই দুপুরে কিছু সময় ক্যান্টিনে অবস্থান করি। ’
অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘কিছু সময় পর তিনি আমাকে পুনরায় কল করে তার সঙ্গে দুপুরের খাবার অথবা হালকা চা-নাস্তা করতে বলেন। ঘটে যাওয়া বিষয়টি যাতে কাউকে না বলি সে বিষয়ে ফোনে বারবার নিষেধ করেন। আমি মানসিক আঘাত থেকে বের হতে না পেরে দেশের বাড়ি চলে আসি এবং এখনও পাঠগ্রহণ থেকে বিরত রয়েছি। ইনস্টিটিউটের শিক্ষকের দ্বারা যৌন নিপীড়িত হয়ে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। ’
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি নতুন বলে বুঝিনি। কিন্তু তার বিরুদ্ধে অনেক শিক্ষার্থীই এখন মুখ খুলছেন। তিনি শিক্ষার্থীদের মেসেঞ্জারে নক দেন। এখনো তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমার একাডেমিক বিষয়সহ সব দিক মিলিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। ’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত অধ্যাপক নুরুল ইসলামকে কল করা হলে তার নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. গোলাম আজমকেও কল করে পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ সময়: ০০৫৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০২৩
এমজেএফ