ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ মে ২০২৪, ০৫ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

টাকা না পেয়ে আসামিকে মারধরের অভিযোগ, সাত পুলিশের নামে মামলা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০২৩
টাকা না পেয়ে আসামিকে মারধরের অভিযোগ, সাত পুলিশের নামে মামলা

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে আটকের পর আবদুর রহিম রনি নামে এক আসামিকে পুলিশ হেফাজতে মারধরের অভিযোগে আদালতে মামলা হয়েছে।  

বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি অঞ্চল রায়পুর আদালতে রনির স্ত্রী রিনা আক্তার ৫ কর্মকর্তাসহ সাত পুলিশের নামে মামলাটি করেন।

 

সন্ধ্যায় আদালতের পেশকার নুরুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, মামলা নথিভুক্ত হলেও কোনো আদেশ দেননি বিচারক।  

অভিযুক্তরা হলেন- রায়পুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আবু হানিফ, নুরুল ইসলাম, মো. আবু হানিফ, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সফিক মিয়া, সাখাওয়াত হোসেন, কনস্টেবল আতিক উল্যা ও ইউসুফ ঢালি।  

বাদীর আইনজীবী আবদুল আহাদ শাকিল পাটওয়ারী বলেন, গত ১৭ ডিসেম্বর দুপুরে আবদুর রহিমকে রায়পুর বর্ডার বাজার এলাকা থেকে আটক করা হয়। তখন তার কাছে কোনো ধরনের অস্ত্র ও মাদক পাওয়া যায়নি। পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে গেলেও থানা হাজতে রাখেনি। কোনো একটি গোপন কক্ষে রেখে তাকে মারধর করে। পরে একইদিন তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে চিকিৎসা দিয়েছে। পুলিশ হেফাজতে মারধরের মামলা ও হাসপাতালের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ জব্দ করতে আমরা আদালতে আবেদন করেছি।  

এজাহার সূত্র জানায়, ১৭ ডিসেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার চরপাতা ইউনিয়নের বর্ডার বাজার রায়পুর-চাঁদপুর সড়ক থেকে অভিযুক্তরা রনিকে আটক করে। তখন তার সঙ্গে গরু বিক্রির ৯০ হাজার টাকা ছিল। ওই টাকা অভিযুক্তরা নিয়ে গেছে। পরে তাকে নিয়ে এসে মারধর করে এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে চিকিৎসা (রেজিস্ট্রেশন নম্বর-১৮০৯/৩৮৭, তাং ১৭/১২/২০২৩) দিয়েছে। পরে সেখানে পানি খেতে চাইলে টিউবওয়েলের সঙ্গে তার মাথায় আঘাত করে।  

আটকের খবর পেয়ে রনির স্ত্রী রায়পুর থানায় বারবার গেলেও স্বামীর সন্ধান পাননি। পরে তিনি সদর থানা, গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয় ও জেলা কারাগারেও খোঁজ নিয়ে স্বামীর সন্ধান পাননি। ফের রায়পুর থানায় গেলে সেখানে রনির মোটরসাইকেল দেখতে পান তিনি। এতে স্বামীর সন্ধান চাইলে বিভিন্ন কথা শুনতে হয় তাকে। পরে তিনি এসআই হানিফকে কল দিয়ে স্বামীর সন্ধান চান। হানিফ তার স্বামীকে ছাড়তে ২ লাখ টাকা দাবি করেন। এতো টাকা নেই জানালে রনিকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে বলে জানায় পুলিশ কর্মকর্তা।  

থানা পুলিশ সূত্র জানায়, ১৮ ডিসেম্বর ডাকাতির প্রস্তুতিকালে রনিসহ দুইজনকে একনলা বন্দুক, ২ রাউন্ড কার্তুজ, দেশীয় অস্ত্র, ১৮০ পিস ইয়াবা ও ২০০ গ্রাম গাঁজাসহ আটক করা হয়। পরে পুলিশ বাদী হয়ে ডাকাতির প্রস্তুতি, অস্ত্র আইন ও মাদকদ্রব্য আইনে মামলা দায়ের করে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়।

বাদী রিনা আক্তার বলেন, আমার স্বামীর ব্যাপারে এসআই হানিফের সঙ্গে কথা বললে তিনি আমার কাছ থেকে ২ লাখ টাকা চেয়েছেন। তারা আমার স্বামীর কাছে থেকেও ৯০ হাজার টাকা নিয়ে গেছেন। তবুও আমি আরও ২০ হাজার টাকা দেব বলে জানিয়েছি। একদিন আগে আটক করে ৩টি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পরদিন রাতে আমার স্বামীকে কারাগারে পাঠিয়েছে।  

মামলায় প্রধান অভিযুক্ত রায়পুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু হানিফ বলেন, মামলার বিষয়টি আমি জানি না। ডাকাতির প্রস্তুতির সময়ে অভিযান চালিয়ে আমরা রনিকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করি। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। তারা মামলা করতেই পারেন। তবে অভিযোগ সত্য নয়। রনির নামে এর আগেও কয়েকটি মামলা রয়েছে।

রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াসিন ফারুক মজুমদার বলেন, অস্ত্র ও মাদকসহ আসামিকে গ্রেপ্তারের পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানি। এর বেশি কিছু জানা নেই। আসামির স্ত্রী মামলা করেছে কি না তাও জানা নেই। এসআই হানিফ আসামির স্ত্রীর কাছ থেকে টাকা চাওয়ার বিষয়ে কোনো কিছুই আমাকে জানাননি। তারা আমাদের কাছে কোনো অভিযোগও করেনি।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।