ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

এয়ারওয়েজে চাকরির নামে অফিস খোলেন হোমিওপ্যাথি ওষুধ বিক্রেতা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২৩
এয়ারওয়েজে চাকরির নামে অফিস খোলেন হোমিওপ্যাথি ওষুধ বিক্রেতা গ্রেপ্তার প্রতারক চক্রের ৪ সদস্য

ঢাকা: বিদেশি বিমান সংস্থায় এয়ার হোস্টেজসহ বিভিন্ন পদে লোভনীয় বেতনে চাকরি দেওয়ার নামে কোটি টাকা আত্মসাতের ফাঁদ পাতে একটি চক্র।  

অল নিপ্পন এয়ারওয়েজ কোম্পানি লিমিটেড (এএনএ) নামে একটি বিদেশি বিমানসংস্থার নামে অফিস খুলে মাত্র এক মাসেই প্রায় অর্ধশত চাকরিপ্রত্যাশীর কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি।

তবে শেষ রক্ষা হয়নি; র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ল চক্রটির হোতাসহ কয়েকজন সদস্য। গ্রেপ্তার প্রতারক চক্রটির হোতা একজন গ্রাম্য হোমিওপ্যাথি ওষুধ বিক্রেতা।

পত্রিকায় এএনএ নামের বিমান সংস্থার এয়ার হোস্টেজসহ বিভিন্ন পদে লোভনীয় বেতনে স্টাফ নেওয়ার বিজ্ঞান দেন তিনি।  

আর বিজ্ঞাপন দেখে অন্তত ২০০ চাকরিপ্রার্থী আবেদন করেন সেখানে। এরমধ্যে বাছাই করে ১৭০ জনকে চাকরির ইন্টারভিউর জন্য ডাকা হয়। ইন্টারভিউতে বসার ক্ষেত্রে অগ্রিম দিতে হয় ১ থেকে ২ লাখ টাকা। এরপর স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামে আরও ৫ হাজার টাকা আদায় করা হয়।  

এরইমধ্যে প্রতারক চক্রের চারজনকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব।

গ্রেপ্তার প্রতারকরা হলেন- চক্রের হোতা হোমিওপ্যাথি ওষুধ বিক্রেতা এম. এ. হক আলম ফরহাদী (৬০),  মেহেরাব হোসেন (২১), মো. রাসেল হোসাইন (৩০) ও শাহাদাত হোসেন (৩৫)।

তাদের গ্রেপ্তারের সময় চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া নগদ ১ লাখ ৩৮ হাজার ৫০০ টাকা, প্রতারণায় ব্যবহৃত ল্যাপটপ, মনিটর, বিপুল পরিমাণ চাকরির আবেদনপত্রসহ প্রতারণায় ব্যবহৃত মালামাল উদ্ধার করা হয়।

শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন র‍্যাব-১০ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দীন।

তিনি বলেন, প্রতারক চক্রটি মাত্র এক মাসে চটকদার বিজ্ঞাপনে বিদেশি প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়ার নামে শুধুমাত্র ইন্টারভিউর নামে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। চক্রের টার্গেট ছিল আগামী ছয় মাস চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে ইন্টারভিউ ও প্রশিক্ষণের নামে অন্তত ৩০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া। পাশাপাশি ভাটারায় ড্রাগমা ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে স্বাস্থ্য পরীক্ষার কথা বলে টাকা আদায়ের চুক্তি করে। এর মাধ্যমেও বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়ে আসছিল।

র‍্যাব-১০ অধিনায়ক বলেন, প্রতারক চক্রের মূলহোতা আলম ফরহাদী সামান্য পড়াশোনা করে ফেনীতে নিজ এলাকায় হোমিওপ্যাথি ওষুধ বিক্রি করতো। পরে ঢাকায় এসে অল্প সময়ে বেশি টাকা আয় করতে বিভিন্ন প্রতারণার সঙ্গে জড়িয়ে যায়। এই প্রতারণা করতে গিয়ে নিজেকে বিসিএস শিক্ষা কর্মকর্তা, দুদক কর্মকর্তা পরিচয় ব্যবহার করতেন।

এমনকি ভুক্তভোগী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিভ্রান্ত করতে তার তিন সন্তান সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলে পরিচয় দিতেন। সম্প্রতি তিনি এএনএ নামের জাপানি এয়ারওয়েজ প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানতে পারে। পরে এই প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়ার নামে ফাঁত পাতেন। মাত্র একমাসে তার মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হয়েছেন শতাধিক চাকরি প্রার্থী। হাতিয়েছেন কোটি টাকা।

অতিরিক্ত ডিআইজি ফরিদ উদ্দীন আরও বলেন, গ্রেপ্তার আলম ফরহাদী র‍্যাবের কাছেও ১৮-১৯ বছর ধরে দুদকের কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছেন বলে পরিচয় দেন। যদিও যাচাই-বাছাই দেখা যায় তিনি সরকারি কোনো পদেই নেই। ফরহাদীর বিরুদ্ধে রাজধানীর গুলশান থানায় প্রতারণা ও মানি লন্ডারিংয়ের দুটি মামলা রয়েছে।

র‍্যাব-১০ এর অধিনায়ক জানান, গ্রেপ্তার মেহেরাব হোসেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।  চাকরির খোঁজ করতে ফরহাদীর সঙ্গে পরিচয় হয়। পরবর্তী মোটা অংকের টাকা বেতানের প্রলোভনে তিনি এই চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে যান। প্রতিষ্ঠানটির কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন তিনি।

গ্রেপ্তার শাহাদাত হোসেন পড়ালেখা শেষ করে বেকার ছিলেন। এর আগে তিনি কয়েক মাস একটি এয়ার টিকেটিং কোম্পানিতে চাকরি করেন। সহকর্মীর মাধ্যমে ফরহাদীর সঙ্গে পরিচয় হলে চক্রে যোগ দিয়ে রিজারভেশন অফিসার হিসেবে কাজ শুরু করেন।

গ্রেপ্তার রাসেল হোসাইন পড়াশোনা শেষ চাকরির খুঁজতে গিয়ে ফরহাদীর সঙ্গে পরিচয়। পরে ফরহাদীর নতুন অফিসের অফিস সহায়ক হিসেবে কাজ শুরু কার।  

গ্রেপ্তার প্রতারক চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও র‍্যাব-১০ এর অধিনায়ক ফরিদ উদ্দীন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২৩
এসজেএ/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।