ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

স্বাদে অতুলনীয় ফুলতলার কুমড়ার বড়ি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২৪
স্বাদে অতুলনীয় ফুলতলার কুমড়ার বড়ি

খুলনা: শীতের শুরুতেই কুমড়ার বড়ি তৈরি শুরু করেন খুলনার ফুলতলা উপজেলার কুন্ডুপাড়া গ্রামের নারীরা। বাণিজ্যিকভাবে বড়ি বিক্রি করে অনেকেই সংসারে আনছেন সচ্ছলতা।

এ গ্রামের প্রায় সবার কয়েক পুরুষের পেশা কুমড়ার বড়ি বানানো। এক সময় পরিবারের প্রয়োজনে এগুলো বানানো হতো।

কারিগরদের তথ্যমতে, এ গ্রামে প্রতি মাসে কয়েক লাখ টাকার কুমড়ার বড়ি বিক্রি হয়। চিলান দাসের বয়স এখন চলছে ৫৭। প্রতিবছর শীত এলেই তৈরি করেন কুমড়ার । এর আগে তৈরি করেছেন তার বাবা-দাদা। এই বড়ি কারিগর বলেন, শত বছরের ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমরা কুমড়ার বড়ি তৈরি করি। এটা আমাদের বাপ-দাদার পেশা। কুমড়ার বড়ি প্রায় সব মানুষের জনপ্রিয় খাবার। মাসকলাই ও চাল কুমড়া দিয়ে তৈরি হয় কুমড়ার বড়ি।

গ্রামের কালবতি চন্দ্র বলেন, এ গ্রামে প্রায় ৬৫ ঘর কুমড়ার বড়ি তৈরির সঙ্গে জড়িত। প্রত্যেক বাড়ি প্রতি মাসে গড়ে তিনশ কেজি বড়ি তৈরি করে। আমরা সাংসারিক কাজের পাশাপাশি এই বড়ি তৈরি ও বিক্রি করে থাকি।

খুলনা শহর থেকে উত্তরে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে ভৈরব নদের তীরে অবস্থিত কুন্ডুপাড়া গ্রাম। গ্রামের অধিকাংশ নারী-পুরুষ সনাতন ধর্মের। শীতকালের সময়টায় গ্রামের প্রবেশমুখ থেকেই চোখে পড়ে চাঁটাইয়ের ওপর সারি করে বিছানো সাদা মাসকলাইয়ের তৈরি কুমড়ার বড়ি। গ্রামের ভেতরে গৃহিণীরা বাড়ির ছাদে একত্রে দলবেঁধে বা কেউ কেউ মাটিতে মাদুর পেতে বড়ি তৈরির কাজ করছেন। এ কাজে নারীদের হাতের ছোঁয়াই বেশি। তবে বাড়ির পুরুষদের ভূমিকা কম নয়। তারা যাতায় কালাই পেষেন। বড়িও বানান। তাদের সাথে হাত মিলিয়ে ছোটরাও শিখে নেয় বড়ি তৈরি। অনেকের বাড়িতে মেশিনের মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে কুমড়ার বড়ি।

বড়ি তৈরির প্রক্রিয়া জানান, সাবলা গ্রামের গৃহবধূ অর্মিলা অন্তরা। শীতের এই মৌসুমে প্রতিদিন রাত ২টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত তারা বড়ি বানানোর কাজ করেন।

অর্মিলা অন্তরা জানান, প্রথমে মাসকলাই রৌদ্রে শুকিয়ে যাতায় ভেঙে খোসা ছাড়িয়ে নিতে হয়। পরে প্রায় ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা মাসকলাই পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়। ঢেঁকি বা শিল-পাটায় কুমড়া বেটে নিয়ে মিশ্রণ তৈরি করা হয়। এরপর কলাই ও চাল কুমড়া দুইটির মিশ্রণে বানানো হয় বড়ির উপকরণ। এরপর বড়িগুলো পাতলা কাপড়ে সারি করে বাঁশের মাচাঙে রেখে রোদে শুকানো হয়। এতে সময় লাগে অন্তত তিন দিন।

ফুলতলা বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী কামরুল মিয়া বলেন, সাত বছর ধরে কুমড়ার বড়ি ব্যবসা করছি। প্রতি সপ্তাহে ওই গ্রাম থেকে ১ থেকে দেড় মণ বড়ি কিনি। এখানকার বড়ির মান ভালো। প্রতিবছর আমার দোকানে বিপুল পরিমাণে কুমড়ার বড়ি বিক্রি হয়। এছাড়া ঢাকাসহ সারা দেশে পাইকাররাও আসেন এই কুমড়ার বড়ি কেনার জন্য।

বাংলাদেশ সময়: ০৭২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২৪
এমআরএম/এএটি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।