ঢাকা, রবিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পাবনায় প্রবাসীর স্ত্রী-সন্তানকে হত্যার রহস্য উদঘাটন, গ্রেপ্তার ৩

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৪
পাবনায় প্রবাসীর স্ত্রী-সন্তানকে হত্যার রহস্য উদঘাটন, গ্রেপ্তার ৩

পাবনা: হত্যাকারীদের উদ্দেশ্য ছিল চুরি। চুরি করার সময় দেখে ফেলায় হত্যা করা হয় প্রবাসীর স্ত্রী এবং তার ১০ বছরের শিশুকে।

পাবনার চাটমোহর উপজেলার চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে জেলা পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত ৩ জনকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডের ব্যবহৃত মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে পাবনা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পাবনা পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী।

গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন- চাটমোহর দিঘুলিয়া গ্রামের মোজাম আলী ওরফে মোজাম্মেলের দুই ছেলে মো. সাদ্দাম হোসেন (২৬) ও  মো. হোসেন আলী (৩৭) এবং রাজবাড়ী জেলার সদর থানার খানখানাপুর দত্তপাড়া মো. মোস্তাফা মিজীর ছেলে মো. হুমায়ুন মিজী ওরফে হৃদয় (২৮)।  

নিহত লাবনী খাতুন (৩৫) ও রিয়াদ হোসেন (৮) চাটমোহরের দিঘুলিয়া গ্রামের আব্দুর রশিদের স্ত্রী-সন্তান। আসামিদের মধ্যে মো. সাদ্দাম হোসেন ২০২২ সালের অক্টোবরে চাটমোহরের ফৈলজানা এলাকায় একজন সিএনজি চালকসহ একাধিক হত্যা মামলার আসামি।

পুলিশ সুপার জানান, আব্দুর রশিদ গত ৭ বছর ধরে মালয়েশিয়া থাকেন। প্রবাসীর রশিদের স্ত্রী লাবনী খাতুন তার বাড়ি নির্মাণের জন্য গত কয়েক দিন আগে প্রায় ২৫ হাজার ইট কেনেন এবং ব্যাংক থেকে নগদ অর্থ উত্তোলন করে বাড়িতে রাখে। লাবনী খাতুনসহ তার ১০ বছরের ছেলে রিয়াদ ২৫ জানুয়ারি দিবাগত রাতে খাওয়া শেষে নিজ  ঘরে ঘুমিয়ে ছিল। পরের দিন সকালে ঘরের দরজা খোলা এবং আসবাবপত্র এলোমেলো দেখে সবাই খোঁজাখুঁজি শুরু করে। এক পর্যায়ে গৃহবধূ  লাবনীর মরদেহ পাশের ছাগল রাখার ঘরে এবং ১০ বছরের ছেলে রিয়াদের মরদেহ বাড়ির পাশে পুকুর পাড়ে গাছের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। এ ঘটনায় পুলিশ হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটন এবং চুরি হওয়া মালামাল উদ্ধারের জন্য কাজ শুরু করে।

তিনি জানান, নিহত লাবনী খাতুনের বিপুল টাকায় ইট কেনা এবং ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের খবরে আসামিদের ধারণা হয় তাদের কাছে অনেক টাকা-পয়সা ও স্বর্ণালংকার আছে।  

এ ধারণা নিয়ে আসামি মো. হোসেন আলী ভুক্তভোগীদের বাড়িতে চুরির পরিকল্পনা করে। পরবর্তীতে তার আপন ছোট ভাই সাদ্দাম তাদের পূর্বপরিচিত ফরিদপুর জেলার আরেক দুর্ধর্ষ চোর হুমায়ুন কবির হৃদয়কে সঙ্গে নিয়ে ২৫ জানুয়ারি দিবাগত রাতে ওই বাড়িতে চুরি করতে যায়।  

এক পর্যায়ে লাবনী খাতুন ও তার সন্তান রিয়াদ টের পেয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তাদের গলায় থাকা মাফলার ও ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করে এবং ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য রিয়াদের মরদেহ বাড়ির পাশের গাছে ঝুলিয়ে রাখে এবং লাবনীর মরদেহ গোয়াল ঘরে ফেলে রাখে।  

পরবর্তীরাতে তারা স্বর্ণের রিং, চেইন, হাতের বালা, কানের দুল, দুইজোড়া রুপার নুপুর, রুপার পায়েলসহ মালামাল নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনার তদন্তের এক পর্যায়ে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন এবং তথ্য প্রযুক্তি ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়।

অপরাধীদের স্বীকারোক্তি ও তথ্য অনুসারে এ মালামাল উদ্ধার করা হয়। এ অপরাধীদের কঠিন শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার জন্য সব ধরনের আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

প্রেস ব্রিফিং এ সময় উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) মো. মাসুদ আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আবু বক্কর সিদ্দিক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) হাসিবুল বেনজির, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি ইমরান মাহমুদ তুহিন, সদর থানার ওসি রওশন আলীসহ নিহত পরিবারে সদস্যরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৪
জেএইচ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।