ঢাকা, বুধবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

পাবনায় অস্ত্রের মুখে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৬০ ঘর ভেঙে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০২৫
পাবনায় অস্ত্রের মুখে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৬০ ঘর ভেঙে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা ভেঙে দেওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর।

পাবনা: পাবনা জেলা সদরের ভাড়ারা ইউনিয়নের গৃহহীনদের জন্য দেওয়া মুজিব বর্ষের প্রথম ধাপের ৬০টি ঘর অস্ত্রের মুখে জায়গা দখল নেওয়ার জন্য জোরপূর্বক ভেঙে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গত বছরের ৫ আগস্টের ছাত্র জনতার আন্দোলনে পরেই ৮ আগস্ট থেকে শুরু হয় এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ভাঙচুরের কাজ।

 

গৃহহীনদের জন্য সরকারের দেওয়া মুজিববর্ষের সেই ঘর ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ঘর হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করেছে গৃহহীন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। গৃহ হারিয়ে অনেকেই অন্যত্র চলে গেছে আবার অনেকেই এখনো আশায় বুক বেঁধে আছেন ঘর ফিরে পাওয়ার আশায়।  

এ ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের দাবি ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের। তবে প্রশাসনকে জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ ভুক্তভোগীদের।

এই সেদিনের কথা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পালিয়ে যাওয়া বিদায়ী সরকারে সময়ে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে সারাদেশব্যাপী ভূমিহীনদের জমিসহ ঘর দেওয়ার উদ্যোগ নেয় পতিত আওয়ামী লীগ সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় পাবনা সদরের ভাঁড়ারা ইউনিয়নের পশ্চিম জামুয়া এলাকায় ঘর পায় ভূমিহীন ৬০টি পরিবার। পরবর্তীতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী সরকারের পতনের পর সেই জায়গার ওপর নজর পড়ে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্রের। সরকারের বরাদ্দকৃত সেই জায়গাটি নিজেদের বলে দাবি করেছেন চক্রটি। গত বছরের ৮ই আগস্ট রাতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের অস্ত্রের মুখে ঘর ছাড়তে বাধ্য করেন অস্ত্রধারী স্থানীয় সন্ত্রাসীরা। গুড়িয়ে দেওয়া হয় আশ্রয়ণ প্রকল্পের সবগুলো ঘর। আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা অন্যত্র আশ্রয় নিলে জায়গা নিয়ে সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা চলমান আছে দাবি করে একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয় আকরাম প্রামাণিক, উম্মত প্রামাণিক, আক্কাস প্রামাণিক, ইসমাইল প্রামাণিক গং চক্রটি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উচ্ছেদ হওয়া একাধিক গৃহহীন পরিবারের সদস্যরা কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, সরকার আমাদের জন্য ঘর ও একটু জায়গা দিয়েছিল। বেশ ভালোভাবেই আমরা সবাই সেখানে বসবাস করছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে সরকার পরিবর্তন হওয়ার পরেই আমাদের ওপরে নেমে আসলো দখলদার সন্ত্রাসীদের নির্যাতন। আমরা অসহায় দরিদ্র মানুষ তাদের সামনে প্রতিবাদ করার ক্ষমতা আমাদের নেই। সবাই জানে কিন্তু কোনো কিছুই হচ্ছে না। শেষ জীবনে পথে পথে থাকতে হবে হয়ত। তবে যারা আমাদের ওপরে এই জুলুম নির্যাতন করেছে তাদের বিচার হবেই একদিন।

বর্তমানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। এ ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। তবে প্রশাসনকে জানানো হলেও এখনো কোনো কার্যত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ ভুক্তভোগীদের।

ঘটনার বিষয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ খান বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকেই তাদের ওপরে এই অমানুষিক নির্যাতন চলছে। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েছি আমি। প্রশাসন এ ঘটনার বিষয়ে অবগত রয়েছে। তারা বলেছেন বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। তবে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়েছে। গৃহহারা মানুষগুলো অনেক কষ্টে আছেন। তাদের দেখার দায়িত্ব সরকারের। আমরাতো অনেক কিছুই করতে পারি না। তবে সরকারের জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন একটু নজর দিলেই এ ধরনের ঘটনা যেমন বন্ধ হবে অন্যদিকে গৃহহারা হবে না কোনো পরিবার।

এ ঘটনার বিষয়ে পাবনা জেলা প্রশাসক মফিজুল বলেন, ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য যা যা করণীয় সব কিছুই করা হবে। কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তার হিসাব করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে। নির্দেশনা পেলেই সব সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।  

সরকারে রদবদল হয়ে যারাই আসুক এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকৃত গৃহহীন পরিবারের সদস্যদের পুনর্বাসনসহ দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। একই সাথে গৃহহীন পরিবোরর সদস্যদের জানমালের নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন প্রশাসন এমনটাই প্রত্যাশা ভুক্তভোগীদের।  

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।