ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নির্ধারিত মূল্যে মাংস বিক্রি করায় খুন হন মামুন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৪
নির্ধারিত মূল্যে মাংস বিক্রি করায় খুন হন মামুন হত্যার শিকার মামুন ও গ্রেপ্তার খোকন

ঢাকা: রাজশাহীর বাঘা থানার আড়ানি বাজারে একত্রে গরুর মাংস বিক্রির ব্যবসা করতেন মো. মিজানুর রহমান ওরফে খোকন ও মামুন হোসেন। সাম্প্রতিক সময়ে ভোক্তা অধিদপ্তর, মাংস ব্যবসায়ী সমিতি ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন সম্মিলিত বৈঠক করে ৬৫০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়।

মামুনও সেই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে মাংস বিক্রি শুরু করেন। একে ক্ষোভ হয় খোকনের। তিনি খুন করেন মামুনকে।

বাঘা থানার বাসিন্দা ছিলেন মামুন। ছিলেন খোকনের নিকটাত্মীয়। রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে মাদারীপুরের শিবচর এলাকায় অভিযান চালিয়ে খোকনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের আভিযানিক দুটি দল।

সোমবার (৫ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে নিজেদের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাহিনীর লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি জানান, ২০২৩ সালের শেষের দিকে মামুন ভোক্তা অধিদপ্তর কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যে মাংস বিক্রির করতে আলাদাভাবে ব্যবসা শুরু করেন। এতে তার দোকানের কাস্টমার বেড়ে যায়। গত ২০ জানুয়ারি আলাদা ব্যবসা ও নির্ধারিত মূল্যে মাংস বিক্রি সংক্রান্ত বিষয়ে খোকনের সঙ্গে তার উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। একপর্যায়ে খোকন উত্তেজিত হয়ে মাংস কাটার ছুরি দিয়ে মামুনের পেটে ও বুকের ডান পাশে উপর্যুপরি আঘাত করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা মামুনকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় গত ২০ জানুয়ারি ভুক্তভোগীর ছোট ভাই বাদী হয়ে রাজশাহীর বাঘা থানায় একটি হত্যা মামলা (নং-১৪/১৪) দায়ের করেন। খোকন গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে যান। হত্যাকাণ্ডের এ ঘটনা নিয়ে থানা পুলিশের পাশাপাশি তদন্ত শুরু করে র‌্যাব। খোকন মাদারীপুরের শিবচর এলাকায় আছেন বলে জানতে পারেন র‌্যাব সদস্যরা। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রোববার রাতে খোকনের অবস্থান শনাক্ত করে অভিযান চালায় র‌্যাব-৫ ও র‌্যাব-৮ আভিযানিক দল। সেখান থেকে মাংস ব্যবসায়ী মামুন হত্যার প্রধান আসামি মো. মিজানুর রহমান ওরফে খোকনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে খোকন হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তিনি আরও জানান, মামুনকে আঘাত করার পর গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি প্রথমে তাহিরপুরে এক আত্মীয় বাড়িতে অবস্থান করেন। পরবর্তীতে মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় স্থায়ীভাবে আত্মগোপনের জন্য পূর্ব পরিচিত এক বন্ধুর মাধ্যমে সেখানে ড্রেজার শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, নিহত মামুন ও খোকন নিকট আত্মীয়। তারা রাজশাহীর বাঘা থানার আড়ানি বাজারে একত্রে গরুর মাংস বিক্রির ব্যবসা করতেন। সাম্প্রতিক সময়ে ভোক্তা অধিদপ্তর, মাংস ব্যবসায়ী সমিতি ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন সম্মিলিত বৈঠক করে ৬৫০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। মামুন সে সিদ্ধান্ত মেনে নেন। এ নিয়ে খোকনের সঙ্গে তার বিভেদ বাড়ে। পরে মামুন আলাদাভাবে মাংসের দোকান দেন। কম দামে মাংস বিক্রি করায় তার ক্রেতা বাড়ে, পক্ষান্তরে খোকনের কাস্টমার কমে যায়। এ নিয়েই মূলত দুজনের মধ্যে গত ২০ জানুয়ারি সকাল ১০টায় ঝগড়া ও পরে খুনের ঘটনা ঘটে।

গ্রেপ্তার খোকন মাংস ব্যবসার পাশাপাশি মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরণের অপকর্মের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। তার বিরুদ্ধে রাজশাহীর বাঘা থানায় মাদক মামলাসহ বিভিন্ন অপরাধে চারটি মামলা রয়েছে। তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগও করেছিলেন। হত্যার ঘটনায় খোকনের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া চলমান বলেও জানান মঈন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৪
এসজেএ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।