ঢাকা: মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান এলাকায় উত্ত্যক্ত করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গাজী দিল হোসেন নীরব (১৭) নামে এক কিশোরকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১০।
গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন- মো. শাহীন সিকদার (১৬), মো. রোমান মৃধা (১৭), মো. রায়হান (১৭), মো. জাহিদ (১৭) ও মো. আবির (১৭)।
হত্যা মামলা দায়েরের ৬ ঘণ্টার মধ্যে ঘটনায় সরাসরি জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তার করে র্যাব-১০।
শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাতে র্যাব-১০ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) সহকারী পুলিশ সুপার এম জে সোহেল বাংলানিউজকে বিষয়টি জানিয়েছেন।
তিনি জানান, শনিবার বিকেলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানাধীন বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আসামিরা এই হত্যাকাণ্ডে তাদের সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে বলেও জানান সহকারী পুলিশ সুপার এম জে সোহেল।
ঘটনার বিষয়ে তিনি জানান, মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর এলাকায় বসবাসকারী ভুক্তভোগী গাজী দিল হোসেন নীরব (১৭)। সে মৃত জব্বার আলী বেপারীর ছেলে। গত ০৮ ফেব্রুয়ারি মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর থানাধীন কামারগাঁও আলহাজ কাজী ফজলুল হক উচ্চবিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে যায় নীরব। ওই অনুষ্ঠানের একপর্যায় কয়েকজন বখাটে ছেলে স্কুলের এক ছাত্রীকে ধাক্কা দেয় এবং বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করে। বিষয়টি দেখে ভুক্তভোগী নীরব প্রতিবাদ করলে উক্ত্যক্তকারী বখাটে ছেলেরা নিরবের সঙ্গে বাগ-বিতণ্ডায় জড়ায় এবং বিভিন্ন প্রকার গালাগালি করতে থাকে। পরে অনুষ্ঠানে উপস্থিত গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ তাৎক্ষণিক বিষয়টি মীমাংসা করে দিলেও এই বিষয় নিয়ে বখাটে ছেলেরা নিরবের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে থাকে। পরে নিরবকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করে তারা। এরই ধারাবাহিকতায় গত ০৯ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ভুক্তভোগী নীরব প্রাইভেট পড়া শেষ করে শ্রীনগর থানাধীন কামারগাঁও চৌধুরী বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উত্তর পাশের স্কুল ভবনের সিঁড়িতে বসে তার বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করতে থাকে। এসময় বিকেল আনুমানিক সাড়ে ৪টার দিকে বখাটে শাহীন, রোমান, রায়হান, জাহিদ ও আবির আগের বিরোধের জেরে পূর্বপরিকল্পিতভাবে তাদের সঙ্গে থাকা আরও ২০-২১ জন সহযোগীদের নিয়ে দেশীয় অস্ত্র (দা, চাপাতি ও চাকু) দিয়ে ভুক্তভোগী নিরবের ওপর অতর্কিত হামলা করে। এ সময় তারা দা, চাপাতি ও চাকু দিয়ে নিরবের মাথা, বুক, পিঠ ও পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। প্রাণ বাঁচাতে নীরব দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে ওই স্কুলের রাস্তার পাশে একটি খালের মধ্যে পড়ে যায়। পরে আসামিরা নিরবের মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
পরে স্থানীয় লোকজন নিরবকে গুরুতর আহত ও অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক পরীক্ষা করে নিরবকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি জানান, ঘটনায় ভুক্তভোগী নিরবের মা মোসা. দিলারা ওরফে নিপা আক্তার (৪০) বাদী হয়ে মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় সরাসরি জড়িত শাহীন, রোমান, রায়হান, জাহিদ ও আবিরসহ ১৯ জন ও অজ্ঞাতনামা আরও ৬ছয়/সাতজনকে আসামি করা হয়।
সহকারী পুলিশ সুপার এম জে সোহেল জানান, ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে র্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। এর ধারাবাহিকতায় মামলা দায়েরের ৬ ঘণ্টার মধ্যে ঘটনায় সরাসরি জড়িত পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১০।
গ্রেপ্তার আসামিদের সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৪
এসজেএ/আরএ