ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বগুড়ায় বসুন্ধরা শুভসংঘের সেলাই মেশিন পেলেন ২০ নারী

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৪
বগুড়ায় বসুন্ধরা শুভসংঘের সেলাই মেশিন পেলেন ২০ নারী

বগুড়া: বগুড়ায় সেলাই প্রশিক্ষণ শেষে ২০ নারী পেলেন বসুন্ধরা গ্রুপের সেলাই মেশিন। এছাড়া বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুলশিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিয়েছে স্কুল ড্রেস, স্কুল ব্যাগ, বই-খাতাসহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ।

 

বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে বগুড়া সদর উপজেলার এরুলিয়া ইউনিয়নের বড়কুমিড়া হাপুনিয়া এলাকায় বসুন্ধরা শুভসংঘের উদ্যোগে ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের পরিচালক ও কালের কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক বরেণ্য কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন এসব সেলাই মেশিন ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করেন।

বগুড়া সদর উপজেলার গোলাগাড়ি গ্রামের সুবর্ণা রানী পড়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে। এখন তার বয়স ১২ বছর। শিশুটির জন্মের আগে থেকেই তার বাবা কারাবন্দি। এ কারণে সুবর্ণাকে রেখে মা বিয়ে করেছেন অন্য জায়গায়। বৃদ্ধ দাদা-দাদিই তার দেখভাল করেন। কিন্তু যেখানে বৃদ্ধ দাদার পক্ষে নিজের সংসার চালানোই কষ্টসাধ্য, সেখানে সুবর্ণার লেখাপড়ার খরচ জোগানো প্রায় অসম্ভব তার পক্ষে। সুবর্ণার মতোই করুণ অবস্থা বানদীঘি ইসপপুর পাড়ার জুঁই খাতুনের। বগুড়া সরকারি মজিবুর রহমান মহিলা কলেজে ইতিহাস বিভাগে সম্মান (অনার্স) শ্রেণির ছাত্রী জুঁইয়ের জন্মের আগে মারা গেছেন বাবা। তখন বাধ্য হয়ে মায়ের সঙ্গে নানার বাড়িতে আশ্রয় জোটে তার।  

এদিকে ছয় বছর বয়সে তার মাও মারা যান। এরপর এতিম জুঁই খাতুনের দায়িত্ব নেন বৃদ্ধ নানা-নানি। কিছুদিনের মাথায় নানিও মারা গেলে একমাত্র নানা ছাড়া আর কেউ নেই তার। বৃদ্ধ নানার পক্ষে সংসার চালানোই যেখানে কঠিন, সেখানে জুঁইয়ের লেখাপড়ার খরচ জোগানো অসম্ভব। এমনই অসহায় ও পিছিয়ে পড়া ২০ নারীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে সেলাই মেশিন।  

তাদের স্বাবলম্বী করতে গত ডিসেম্বর মাসে বসুন্ধরা শুভসংঘ সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করা হয়। সেখানেই দুই মাসের বেশি সেলাই শেখার পর তারা বিনামূল্যে পেলেন বসুন্ধরা গ্রুপের সেলাই মেশিন।

সেলাই মেশিন বিতরণকালে কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, হাপুনিয়া পাড়ায় আগে থেকেই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সন্তানদের জন্য শুভসংঘ স্কুল চালু করা হয়েছে। গত বছরের শুরুতে স্কুলটি পরিদর্শনে এলে স্থানীয় নারীরা তাদের আর্থিক অসচ্ছলতার কথা বলেন। তাদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করতে সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেখানে যে ২০ জন নারী প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, তারা প্রত্যেকেই সংগ্রামী জীবনযাপন করছেন। কারো স্বামী নিরুদ্দেশ, কারো বাবা-মা কেউ নেই, কারো স্বামীর উপার্জনে সংসারে চালানো কষ্টকর। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের নির্দেশনা অনুযায়ী এসব নারীকে বাছাই করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করতে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর বিনামূল্যে সেলাই মেশিন দেওয়া হলো। তারা এ মেশিনের মাধ্যমে কাপড় সেলাই করে যা উপার্জন করবেন, তা দিয়ে কিছুটা হলেও সংসারের চাহিদা মিটবে।

তিনি আরও বলেন, বসুন্ধরা শুভসংঘের উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন এলাকায় এমন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। সেসব কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নিয়ে হাজার হাজার নারী বাড়তি আয়ের সুযোগ পেয়েছেন। শুধু যে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে তা নয়, প্রশিক্ষণ শেষে প্রত্যেকে একটি করে সেলাই মেশিন পাচ্ছেন, ফলে কোনো বিনিয়োগ ছাড়াই তারা অর্থ উপার্জন করে পরিবারে চাহিদার একাংশ পূরণ করতে পারছেন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকায় বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুল চালু করার পর থেকে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার সমস্ত খরচ বহন করছে বসুন্ধরা গ্রুপ। তাদের শুধু শিক্ষা উপকরণই দেওয়া হচ্ছে না, পোশাক, স্কুল ব্যাগসহ আনন্দের সঙ্গে বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার সব সামগ্রীই দেওয়া হচ্ছে।  
বগুড়ার এ বিদ্যালয়কে ঘিরে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, সে প্রতিষ্ঠানে বিদ্যালয়ের পাশাপাশি সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, পাঠাগার ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও থাকবে। এসবই করা হবে সমাজের পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠীকে স্বাবলম্বী করার জন্য।

সেলাই মেশিন ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণকালে উপস্থিত ছিলেন এরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান আতিক, বগুড়া শুভসংঘের প্রধান উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট শিল্পপতি মোস্তফা মাহমুদ শাওন, সভাপতি ডা. সিরাজুল হক ফাইনসহ শুভসংঘ কেন্দ্রীয় কমিটি ও জেলা কমিটির সদস্যরা। পরে শুভসংঘ স্কুল নির্মাণের জন্য সম্ভাব্য জায়গাও পরিদর্শন করেন ইমদাদুল হক মিলন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৪
কেইউএ/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।