গাইবান্ধা: গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে দুই লাখ টাকার বিনিময়ে একদিনের ছেলেকে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে হেরেন চন্দ্র নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত হেরেন পলাশবাড়ী উপজেলার বরিশাল ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের মৃত নয়ন চন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে।
বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নিজের পঞ্চম সন্তানকে অন্য কারও কাছে দিয়ে দেন হেরেন।
তবে হেরেনের দাবি, বিক্রি নয়, সন্তানকে দত্তক দিয়েছেন তিনি। উল্টোদিকে হেরেনের স্ত্রীর দাবি, তার কোল থেকে ছিনিয়ে নিয়ে সন্তানকে বেচে দিয়েছেন স্বামী।
এ ঘটনায় জড়িত সঙ্গে জড়িত আরও দুজনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার প্রান্ত নামের এক ব্যক্তি ও একই উপজেলার পান্থপাড়া এলাকার গোবিন্দের স্ত্রী মানা ভক্তিরানী।
স্থানীয়দের অভিযোগ, হেরেন দীর্ঘদিন ধরে জুয়া খেলায় আসক্ত। ফলে সংসারের সবকিছু বিক্রি করে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। একদিকে জুয়া খেলার নেশা অপর দিকে সংসারের অভাবে সদ্য ভূমিষ্ঠ একদিনের ছেলে সন্তানকে বিক্রি করেছেন হেরেন।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় দুই যুগ আগে বিয়ে হয় হেরেন-ঝুম্পা দম্পতির। বিয়ের পর একে একে রনি, নিরঞ্জন, রবীন্দ্র ও জয়দেব নামের চারটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন ঝুম্পা। মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে আরও এক ছেলের (পঞ্চম) সন্তানের জন্ম দেন তিনি। ওই সন্তানকে দুই লাখ টাকায় বিক্রি করে দেন হেরেন।
অভিযুক্ত বাবা হেরেন চন্দ্র বলেন, আমি সন্তান বিক্রি করিনি, দত্তক দিয়েছি। গোবিন্দগঞ্জের প্রান্ত আর ভক্তি রানীর সাহায্যে কয়েকজন এসে সন্তানকে নিয়ে গেছে। ভক্তির সঙ্গে তিনজন নারী ও একজন পুরুষ লোক মাইক্রোবাসে এসে সন্তান নিয়ে গেছে। যাদের সন্তান দিয়েছি, তাদের আমি চিনি না। কোনোদিন দেখিওনি। ওরা (ভক্তি ও প্রান্ত) জানে। শুনেছি তাদের বাড়ি রাজশাহীতে।
হেরেনের স্ত্রী ও নবজাতকের মা ঝুম্পা রানী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার স্বামী জুয়া খেলে সংসার উজার করেছে। এবার আমার কোলের সন্তানকে বিক্রি করে দিয়েছে। সন্তানকে নিয়ে যাওয়ার সময় তারা আমাদের কাছ থেকে সাদা কাগজে সই নিয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে গোবিন্দগঞ্জের প্রান্তের সঙ্গে ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ওই দম্পতি নিজের ইচ্ছায় দিয়েছেন, আমাদের কাছে পেপারস আছে।
কার কাছে শিশুটিকে দেওয়া হয়েছে আর শিশুটি এখন কোথায়- এমন প্রশ্নের উত্তরে তাদের নাম-পরিচয় দিতে রাজি হননি প্রান্ত।
এদিকে মানা ভক্তি রানী বলেন, যাদের কাছে শিশুটিকে দেওয়া হয়েছে তাদের সঙ্গে এক বিয়ের অনুষ্ঠানে পরিচয় হয় আমাদের। সেখানেই আমি জেনেছি তারা নিঃসন্তান। পরে ফোনে যোগাযোগের একপর্যায়ে তাদের শিশুটিকে দত্তক দেওয়া হয়েছে।
তাদের বাড়ি কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলতে অস্বীকৃতি জানান।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, সন্তান বিক্রি কিংবা দত্তক রাখার বিষয়টি আমি অবগত নই। তথ্য পেলে জানাব।
এ বিষয়ে পলাশবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরজু মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, সন্তান বিক্রি করার কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। যদি কেউ সন্তান বিক্রি করে থাকে তাহলে সেটি অপরাধ। ঘটনার সত্যতা পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৪
এসএএইচ