ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

স্বাবলম্বী হওয়ার আশা বগুড়ার ২০ নারীর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৪
স্বাবলম্বী হওয়ার আশা বগুড়ার ২০ নারীর

বগুড়া: প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছিলো তিনমাস আগে। সে সময় প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিলো প্রশিক্ষণ শেষে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে বিনা মূল্যে পাবেন সেলাই মেশিন।

নানা সময়ে নানাজনের অনেক প্রতিশ্রুতিই শুনেছেন এই নারীরা কিন্তু সেসব আর বাস্তবায়ন হতে দেখেননি। এ কারণে আদৌ সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করা হবে কি-না তা নিয়ে দোলাচলে ছিলেন বগুড়ার ২০ অসহায় নারী। দুই মাস পেরিয়ে তিনমাস শেষ না হতেই বসুন্ধরা শুভসংঘের দেওয়া সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হতে দেখে আপ্লুত হন তারা। নিজেদের স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্নপূরণে বসুন্ধরা গ্রুপ এভাবে এগিয়ে আসবে সেটি যেন কল্পনাও করতে পারেননি প্রান্তিক এই নারীরা।  

ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের পরিচালক ও কালের কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক বরেণ্য কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন যখন তাদের হাতে সেলাই মেশিন তুলে দিলেন তখন তারা যেমন আনন্দে আত্মহারা, কারো আবার চোখ ছলছল অবস্থা। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সকালে বগুড়া সদর উপজেলার এরুলিয়া ইউনিয়নের বড়কুমিড়া হাপুনিয়া পাড়ায় বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণ শেষে সেলাই মেশিন পান ২০ দরিদ্র অসচ্ছল নারী। সেলাই মেশিন হাতে পেয়ে উচ্ছাস যেন ধরে রাখতে পরলেন না বিউটি বেগম। দুই সন্তানের জননী বিউটি বেগম বলেন, ‘আপনিকরোক দোয়া করমো। আপনিরা যিংকা করে গরীব মানুষের পাশে অ্যাসে খাড়া হলেন, ইডে লিজের মানুষও করে না। হামার এক বাচ্চা এটি (বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুলে) অ্যাসে পড়োচে। আর হামি সিলেই শিখছি। তিনমাস পরে মেশিন হাতোত পায়া জানডা ভরে গেলো। অ্যাকন কিছু করে খাবার পারমো। ’ আরেক প্রশিক্ষণার্থী সাথী বেগম বলেন, ‘হামরা সগলি দোয়া করি তারা (বসুন্ধরা গ্রুপ) য্যেন আরো ভালো থাকে। তারা ইংকে করে দ্যাশের গরীব মানুষের য্যেন উপুকার করবের পারে। ’

প্রশিক্ষণ পাওয়া ২০ নারীর হাতে সেলাই মেশিন তুলে দিয়ে কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, হাপুনিয়া পাড়ায় আগে থেকেই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সন্তানদের জন্য বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুল চালু করা হয়েছে। গত বছরের শুরুতে স্কুলটি পরিদর্শনে এলে স্থানীয় নারীরা তাদের আর্থিক অসচ্ছলতার কথা বলেন। ওইসব নারীদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করতে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে বিনা মূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করা হয়। সেখানে যে ২০ নারী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন, তারা প্রত্যেকেই সংগ্রামী জীবন অতিবাহিত করছেন। কারো স্বামী নিরুদ্দেশ, কারো বাবা-মা কেউ নেই, কারো স্বামীর উপার্জনে সংসারের ব্যয় নির্বাহ করা দুষ্কর। এসব নারীদের বাছাই করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করতেই বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমদ আকবর সোবহানের নির্দেশনা অনুযায়ি প্রশিক্ষণ প্রদান শেষে বিনা মূল্যে সেলাই মেশিন প্রদান করা হলো। তারা এই মেশিনের মাধ্যমে কাপড় সেলাই করে যা উপার্জন করবেন সেটি কিছুটা হলেও সংসারের চাহিদা মেটাতে সহায়ক হবে। বসুন্ধরা শুভসংঘের উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন এলাকায় এমন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। সেসব কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে শত শত নারী বাড়তি আয়ের সুযোগ পেয়েছেন। শুধু যে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে তা নয়, প্রশিক্ষণ শেষে প্রত্যেকে সেলাই মেশিন পাচ্ছেন। এর ফলে কোনো বিনিয়োগ ছাড়াই তারা অর্থ উপার্জন করে পরিবারে চাহিদার একাংশ পূরণের সক্ষম হচ্ছেন।  

বগুড়ার বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুলকে ঘিরে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তিনি আরো বলেন, সেখানে বিদ্যালয়ের পাশাপাশি সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, পাঠাগার ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও থাকবে। বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে এর সবই করা হবে সমাজের পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠীকে সাবলম্বী করার জন্য।

সেলাই মেশিন বিতরণকালে উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, এরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান আতিক, জেলা শুভসংঘের উপদেষ্টা মোস্তফা মাহমুদ শাওন, সভাপতি ডা. সিরাজুল হক ফাইনসহ শুভসংঘ কেন্দ্রীয় কমিটি ও জেলা কমিটির সদস্যগণ। পরে বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুল নির্মাণের জন্য সম্ভাব্য জায়গাও পরিদর্শন করেন কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৪
নিউজ ডেস্ক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।