ঢাকা, মঙ্গলবার, ২ পৌষ ১৪৩১, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

রমজান মাস ঘিরে বগুড়ায় লোভনীয় ইফতার সামগ্রী

কাওছার উল্লাহ আরিফ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২৪
রমজান মাস ঘিরে বগুড়ায় লোভনীয় ইফতার সামগ্রী

বগুড়া: রমজানের প্রথম দিন বগুড়ায় সুস্বাদু লোভনীয় ইফতার সামগ্রীর দোকানগুলোতে ভিড় ছিল চোখ পড়ার মতো। সব শ্রেণি পেশার মানুষ দিনটিতে পরিবারের সঙ্গে সেহরি করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

আর ইফতারে দেশের প্রতিটা জেলা এবং অঞ্চলেরই আছে কিছু নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী নানা রকমের পছন্দের খাবার।

এ কারণে শহরের বিভিন্ন ইফতার সামগ্রীর দোকান-রেস্টুরেন্টগুলোতে ক্রেতা সাধারণের সরগম যেমন চোখে পড়ার মতো ছিল, ঠিক তেমনি ইফতারি বিক্রেতার সংখ্যাও ছিল অনেক। দুপুর থেকেই অধিকাংশ ইফতার দোকান হয়ে ওঠে জাঁকজমকপূর্ণ।

বগুড়ায় ইফতার আইটেমে থাকে মোরগ পোলাও, বর বাপের পোলাও, মুরগি, খাসির রোস্ট, কিমা, খাসির রান, কোয়েল, কবুতর ভুনা, বেগুনি, শাহী জিলাপি, শরবত, সুতি কাবাব, টিকা কাবাব, জালি কাবাব, খাসি ও গরুর মাংসের চাপ, চিকেন ফ্রাই, চিকেন ফ্রাই ভিজা ছমুচা, খাসির লেগ কাবাব, আলুর চপ, শাকপুলি, মাঠা, স্পেশাল ফালুদা, লাভাং।

মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বিকেলের দিকে বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথা, ইয়াকুবিয়ার মোড়, জলেশ্বরীতলা, কাঁঠালতলা, গোহাইল রোড, কলনিসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা মেলে এবারের রমজানে তৈরি ইফতার সামগ্রীর।

সুস্বাদু লোভনীয় এসব স্বাদের খাবার কিন্তু আবার সব সময় মেলে না। ইচ্ছে থাকলেও একসঙ্গে এতসব আইটেম মেলানো সম্ভব হয় না। কিন্তু রমজান মাস এলেই চিত্রটা পাল্টো যায়। সাধারণত প্রত্যেক বছর রমজান মাস ঘিরে ইফতার আইটেম হিসেবে এসব খাবার তৈরি করা হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় রমজানের প্রথমদিনেই লোভনীয় স্বাদের এসব ইফতার সামগ্রী তৈরি করেছেন বগুড়ার ব্যবসায়ীরা।

এরমধ্যে বেশ কয়েক আইটেমের খাবার পেতে হলে আগে থেকেই অর্ডার দিয়ে কিছু সময় অপেক্ষা করতে হয় ক্রেতাদের। নির্ধারিত সময়েই খাবার টেবিলে বা ক্রেতাদের হাতে পৌঁছে যায় তাদের পছন্দের খাবার। আর এসব খাবার তৈরিতে শহরের আকবরিয়া গ্র্যান্ড, শ্যামলী, কোয়ালিটি, সেলিম, ময়নাসহ আরও কিছু হোটেল-রেস্তোরাঁ অন্যতম।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বগুড়াকে নানা কারণে ঐতিহ্যের শহর বলা হয়। এই শহরের তৈরি দইয়ের খ্যাতি শুধু দেশেই নয়, দেশের বাইরেও রয়েছে। এছাড়া নানা ইতিহাস-ঐতিহ্যের কারণেও মানুষ বগুড়াকে চেনে। এসব বিবেচনায় রেখে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বাহারি আইটেমের ইফতার সামগ্রী তৈরি করেন। ব্যবসায়ীরা এক্ষেত্রে নানা শ্রেণি-পেশার ক্রেতা সাধারণের রুচি ও ক্রয় ক্ষমতার বিষয়টিও মাথায় রাখেন।

প্রথম রমজানকে ঘিরে এ পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা ইফতার সামগ্রী তৈরি ও বিক্রি করতে সকাল থেকেই প্রস্তুতি নেন। কেননা নামিদামি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি ছোট-বড় হোটেল, ভ্রাম্যমাণ ও মৌসুমি দোকানিরা ইফতার সামগ্রী বানান। এজন্য ভ্রাম্যমাণ ও মৌসুমি দোকানিদের জায়গা ঠিক করা ও দোকানপাট গুছিয়ে নেওয়ার কাজটা আগেই সারতে হয়।

রশিদ আলী, ময়না নামে একাধিক দোকানি বাংলানিউজকে জানান, কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের মান ধরে রাখতে ক্রেতার চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে ইফতার সামগ্রী বানায়। আর প্রতিষ্ঠানের দিকে দৃষ্টি বাড়াতে পুরো রমজানজুড়েই ভিন্ন ডেকোরেশনের ব্যবস্থা করা হয়। ভ্রাম্যমাণ ও মৌসুমি দোকানিরা তাদের সাধ্যমতো ইফতার সামগ্রী বানানো ও দোকান সাজানোর কাজ সারেন।

তারা বলেন, ঐতিহ্যের ধারায় চালিত প্রতিষ্ঠানগুলোয় ইফতার করতে চাইলে রোজাদার ব্যক্তিদের কমপক্ষে আধাঘণ্টা আগে আসতে হবে। কারণ এসব প্রতিষ্ঠানগুলোয় নির্ধারিত আসন থাকে। সেই হিসেবে প্লেটে রকমারি আইটেমের ইফতার সাজিয়ে টেবিলের আসন অনুযায়ী রাখা হয়। আর আসন ভরে গেলে তখন কোনোকিছু করার থাকে না। অনেক দূরদূরান্ত থেকে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ নামিদামি ব্যানারের এসব প্রতিষ্ঠানে ইফতার করতে আসেন বলেও মন্তব্য করেন তারা।

রশিদ হোটেলের কারিগর ইয়াসিন জানান, মানসম্মত ইফতারি তৈরি করার কারণে এখানে প্রতিদিনই ইফতারি নিয়ে কাড়াকাড়ি লাগে। তাদের হোটেলে জিলাপি, ছোলা, বুনদিয়া, হালিম বিক্রি করা হতো। এছাড়া রোল ইত্যাদির ব্যাপক চাহিদা ছিল তাদের হোটেলে।

অন্যদিকে ছোট-বড় হোটেল, ভ্রাম্যমাণ ও মৌসুমি দোকানিরা দুপুর থেকেই তাদের দোকান ইফতার সামগ্রী দিয়ে সাজিয়ে তোলেন। ইফতারের সময় গড়িয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এসব দোকানে বেচাবিক্রির চাপ বেড়ে যায় কয়েকগুণ। দোকানিদের যেন দম ফেলার ফুরসত থাকে না তখন।

হামিদ শেখ, শাজাহান আলী বাবু, হাবিবুর রহমানসহ একাধিক ক্রেতা জানান, রমজানে ইফতার সামগ্রীর দাম প্রত্যেক বছর বেড়েই চলেছে। পেঁয়াজু, ছোলা, খেজুর, বাদাম, জিলাপি, রস বুনদিয়া, বেগুনি, চানাচুর, ঝুরি চানাচুরসহ নানা আইটেমের ইফতার সামগ্রীর দাম গতবারের চেয়ে এবারও বাড়ানো হয়েছে।

জাহিদুল চৌধুরী নামে এক ক্রেতা বাংলানিউজকে জানান, রমজানে প্রতিদিন তিনি শহরের কোনো না কোনো হোটেল বা রেস্টুরেন্ট থেকে ইফতার কেনেন। শহরের দোকানগুলোতে প্রতিদিন পাওয়া যায় বাহারি ইফতারি। খেজুর, ফ্রুট স্কিউয়ার, চিকপি সালাদ, ফুলকপি ভাজা, মরিচ ভাজা, বাটন মাশরুম, ভেজিটেবল পাকোড়া, ফিশ চিকেন স্কিউয়ার ইত্যাদি।

এদিকে ব্যবসায়ী বা দোকানিরা ক্রেতাদের দাম বাড়ানোর অভিযোগ মানতে নারাজ। তাদের ভাষ্য, ইফতার সামগ্রী তৈরি করার জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে তাদেরও দাম বাড়াতে হয়। এতে বেশি পুঁজি খাটাতে হলেও লাভ বেশি হয় না।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২৪
কেইউএ/এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।