ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মধ্যপ্রাচ্য থেকে নিঃস্ব হয়ে ফিরছেন নারীরা 

বদরুল আলম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২৪
মধ্যপ্রাচ্য থেকে নিঃস্ব হয়ে ফিরছেন নারীরা  বাঁ থেকে- মায়ের অপেক্ষায় ছোট্ট রোজিনা, জর্ডান ফেরত রাফিয়া আক্তার, প্রবাসী মায়ের দুই সন্তান

হবিগঞ্জ: ছয় বছরের রোজিনার বিশ্বাস তার মা চকলেট আর পোশাক নিয়ে শিগগিরই বাড়ি ফিরবেন। শিশুটি মায়ের জন্য অপেক্ষা করে প্রতিদিন।


 
কিন্তু নানা বিপত্তির কারণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ জর্ডান থেকে ফিরতে পারছেন না তার মা শাহনাজ বেগম (৩০), সেখানে জীবনের নিরাপত্তা নিয়েও তিনি শঙ্কায় আছেন।
 
সোমবার (১১ মার্চ) হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায় গাজীপুর ইউনিয়নের দুধপাতিল গ্রামে শাহনাজ বেগমের পরিবারের সদস্যরা এসব তথ্য জানান।
 
তারা বলেন, শাহনাজ সংসারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে চার বছর আগে আদম বেপারির মাধ্যমে জর্ডানে যান। কিন্তু পাসপোর্টে লিপিবদ্ধ নামের সঙ্গে তার জাতীয় পরিচয়পত্রের নামে অমিল থাকায় ফিরতে পারছেন না। এ জটিলতা নিয়ে ফিরলেও দ্বিতীয়বার বিদেশ যাওয়া কঠিন হবে।
 
শাহনাজের স্বামী ফারুক মিয়া বলেন, আমি ও আমার মেয়ে তাকে দেশে ফেরত চাই। কিন্তু এ অবস্থায় ফিরলে দ্বিতীয়বার যেতে পারবে না। জর্ডানে কয়েক মাসের পারিশ্রমিক জামানত রেখে তাকে ফিরতে হবে। তাই ফিরতে পারছে না।
 
একই জটিলতার কারণে ছুটিতে এসে আর যেতে পারেননি দুধপাতিল গ্রামের রাজনা আক্তার ও জোসনা আক্তার।
 
স্থানীয় আদম বেপারি (মানব পাচারকারী) ভুয়া জন্ম নিবন্ধনের মাধ্যমে জোসনার পাসপোর্টে তার নাম লিখিয়েছিলেন পলি আক্তার। অন্যান্য তথ্যও জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে মিলছে না। ফলে তিনি এক বছর সৌদি আরবে থাকার পর দেশে এসে দ্বিতীয়বার ফিরতে পারেননি।
 
জোসনা বাংলানিউজকে বলেন, পাসপোর্ট তৈরিসহ সৌদি আরব যওয়া পর্যন্ত আদম বেপারি আমার কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন দেড় লাখ। এক বছর গৃহকর্মীর কাজ করে ৯০ হাজার টাকা জমাতে পেরেছি। বাকি টাকা লোকসান হয় দ্বিতীয়বার সৌদি আরব যেতে না পারায়।
 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাজীপুর ইউনিয়নের উসমানপুর, মানিকভান্ডার, দুধপাতিল, বাল্লা ও টেকেরঘাট গ্রামের প্রায় ৬০০ জন নারী মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেন। তাদের বেশিরভাগই সৌদি আরব, দুবাই, ওমান, কাতার ও জর্ডানে থাকেন।
 
দুধপাতিল গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রুহুল আমিন বাংলানিউজকে বলেন, বিদেশগামী নারীদের বেশিরভাগ ২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী। আমার জানা মতে অন্তত ৩০ জন নারী আদম বেপারিদের মাধ্যমে লাখ টাকা খরচ করে বিদেশ গিয়ে খালি হাতে ফিরেছেন। কেউ কেউ বিদেশে নির্যাতনেরও শিকার হয়েছেন।
 
পাঁচ বছর জর্ডানে গৃহকর্মীর কাজ করে আসা রহম আলীর স্ত্রী রাফিয়া আক্তার এখন বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন। তিনি জানান, বাংলাদেশের টাকায় ২৫ হাজার টাকা বেতনে একটি বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করতেন তিনি। তাকে দিয়ে ঘরের সব কাজ ও বাগান পরিচর্যা করানো হতো। দুপুর ২টার আগে খাবার দেওয়া হতো না। কাজে কোনো ত্রুটি হলে অপমান করা হতো চরমভাবে।
 
কেউ কেউ সেখানে ভালো মানুষের বাসায় চাকরি পেলেও রাফিয়া আক্তারের কর্মস্থল ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। তিন/চার মাসের বেতন আটকে রাখা হতো নানা অজুহাত দেখিয়ে।
 
এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেননি কেন প্রশ্নের জবাবে রাফিয়া বলেন, ভাষা জানা থাকলে আইনজীবী নিয়োগ করে বিচার চাওয়া যেত। ছয় মাসের পারিশ্রমিক জামানত হিসেবে রেখে আরেকবার ফিরে যাওয়ার কথা বলে কোনো রকম দেশে ফিরেছি। আমি আর সেখানে যাব না।
 
সচেতনতার অভাব, দালালের মিথ্যা প্রলোভন ও দক্ষতার অভাবে নারীরা বিদেশে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন জানিয়ে গাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর খান বলেন, এখানকার নারীরা দেশের অর্থনীতির শক্তি। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে গুরুত্বারোপ জরুরি।
 
চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মাহবুবুল আলম বলেন, কাগজপত্রের জটিলতার ব্যাপারে প্রবাসী নারীরা উপজেলা প্রশাসনে এলে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। তাদের দক্ষতা বাড়ানোর ব্যাপারেও আলোচনা চলছে। তবে আদম বেপারিদের প্রতারণার ব্যাপারে নিজেদের সতর্ক থাকা জরুরি।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২৪
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।