ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

তাপপ্রবাহে হাঁসফাঁস করছে খেটে খাওয়া মানুষ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৯ ঘণ্টা, মে ১, ২০২৪
তাপপ্রবাহে হাঁসফাঁস করছে খেটে খাওয়া মানুষ

ঢাকা: বেশ কয়েকদিন ধরেই সারাদেশেই তাপপ্রবাহ চলছে। প্রতিদিনই গড়ে ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করছে।

তীব্র তাপপ্রবাহে রাজধানীসহ সারাদেশেই জনমানুষের জীবনযাপন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ।  

বিশেষ করে নগরীতে খেটে খাওয়া মানুষদের মধ্যে শ্রমিক ও দিনমজুর, পরিবহন শ্রমিকদের চরম অবস্থা। প্রচণ্ড গরমে তারা ঠিকমত কর্ম করতে পারছেন না। এমনকি তাপপ্রবাহে অনেকেই অস্বস্তি নিয়ে কাজ করছেন, আবার অনেকেই অসুস্থ হয়েছে পড়ছেন।

এদিকে বুধবার (১ মে) মে দিবসেও অনেক প্রতিষ্ঠানে তীব্র তাপপ্রবাহে কাজ করছেন অনেক শ্রমিকেরা। সড়কে প্রতিদিনের মতো কর্মে বের হয়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা। এদিকে সড়কে রিকশাচালকদেরও দেখা গেছে।  

তাপপ্রবাহ উপেক্ষা করেও তারা যাত্রী নিয়ে ছুটেছেন যে যার গন্তব্যে। এদিকে তাপপ্রবাহে তারা টিকতে না পেড়ে ছায়ায় (বড় ভবনের নিচে অথবা সড়কে ফ্লাইওভারের নিচে) গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।  

এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন শপিং মলেও, মার্কেটে কিংবা বাজারে ক্রেতাদের উপস্থিতিও অনেক কম।  

বুধবার দুপুরে রাজধানীর উত্তরা আজমপুরে দেখা যায়, প্রচণ্ড রোদের মধ্যে সড়কে কাজ করছেন নির্মাণ শ্রমিকরা। ঢাকা বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানির (বিআরটি) প্রজেক্টের চায়না গ্যাঝুবা গ্রুপ করপোরেশন (সিজিজিসি) এর অধীনে সড়ক নির্মাণের কাজ করছেন তারা।

কর্মরত শ্রমিকরা বাংলানিউজকে জানান, প্রচণ্ড রোদ, বাতাসও অনেক গরম। এ তাপের মধ্যে থেকে তাদের কাজ করতে হচ্ছে কোম্পানির নির্দেশে। আজ ১ মে বিশ্ব শ্রমিক দিবস। এদিনেও তাদের ছুটি দেওয়া হয়নি।  

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শ্রমিক বাংলানিউজকে বলেন, গত কয়েকদিন ধরেই প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ বইছে। এ সময়ে কোম্পানি থেকে পর্যাপ্ত খাবার পানিও আমাদের মধ্যে বিতরণ করা হয়নি। তিনদিন পর একটি করে খাবার স্যালাইন বরাদ্দ রয়েছে শ্রমিকদের জন্য।  তাপপ্রবাহে পিপাসা লাগলে নিকটবর্তী কোনো ভবনের পানির ট্যাব থেকে বোতল ভরে এনে অথবা নিজের পকেটের টাকা খরচ করে পানি কিনে পান করতে হচ্ছে। এ তাপপ্রবাহ আরও ক'দিন থাকবে কে জানে, বেশিক্ষণ রোদে কাজ করাও যায় না।  

সরেজমিনে দেখা যায়, শ্রমিকদের একদল কাজ করছে অন্য দল বসে বিশ্রাম নিচ্ছে। প্রচণ্ড রোদে কিছুক্ষণ কাজ করে আবার তারা ছায়ায় এসে বিশ্রাম নিচ্ছে অন্য দল কাজ শুরু করছে।  

এদিকে সড়কে রিকশাচালকরা রিকশা চালাচ্ছেন আর দরদর করে ঘামছেন। একটি ট্রিপ শেষ হলেই তারা আশপাশের চায়ের দোকানে গিয়ে পানি পান করছেন বা কোনো উঁচু ভবনের নিচে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন।

আজিজ মিয়া একজন রিকশাচালক। তিনি উত্তরা জসীমউদ্দীন সড়কের পাশে রিকশা দাঁড় করিয়ে রিকশার পাশের ছায়ায় বসে রয়েছেন। যাত্রী নিয়ে এসেছে, তাকে রেখে যাত্রী একটি ভবনের ভেতরে গিয়েছেন। সেই সুযোগে তিনি রোদ থেকে বাঁচার জন্য নিজ রিকশার ছায়ায় বসে ছিলেন। যাত্রী নেমে এলে তিনি আবারও রিকশা চালাতে শুরু করেন।  

রিকশা চালক আজিজ মিয়া বলেন, ‘সূর্যের তাপে গা পুইরা যায়। খালি পানি পিয়াস (পিপাসা) লাগে। সকাল থেকে মাত্র দুটা ক্ষেপ পাইছি। যদি রিকশা না চালাই তাইলে আজ গাড়ির জমা দিতে পারবো না। আর খাওন খাইতে পারবো না। গরমের কারণে যাত্রীও কম। ’

তিনি বলেন, ‘এ ক্ষেপ নিয়ে যাবে বিমানবন্দর রেলস্টেশনে। পরে বিশ্রাম করুম। রোদ কমলে গাড়ি চালামু। এ তাপে টিকন যায় না। ’

রাজধানীর সড়কে গণপরিবহনের চালক ও হেলপাররা জানান, বেশির ভাগ বাসেই যাত্রী সংখ্যা হাতে গোনা। সকালের দিকে কিছু যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে। দুপুরের পরও যাত্রী অনেক কম। এদিকে রোদের তাপ অন্যদিকে গাড়ির ইঞ্জিনের গরম। দুই মিলে চালকের সিটে বসা খুব কঠিন।

রাজধানীসহ সারাদেশেরই তীব্র গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। এর মধ্যেও কর্মজীবী ও সাধারণ মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৯ ঘণ্টা, মে ০১, ২০২৪
এসজেএ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।